Advertisement
E-Paper

জেঠামহাশয়

উদ্দেশ্য সত্‌ হইলেই সিদ্ধান্ত বিধেয় হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ফিরিয়াই নীতীশ কুমার বিহারে আগামী এপ্রিল হইতে মদের বিক্রয় নিষিদ্ধ করিবার যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন, তাহার উদ্দেশ্য অসত্‌ বলা চলিবে না। মদ, বিশেষত দেশি মদ এ দেশের বহু পরিবারকে বিপন্ন বা বিপর্যস্ত করিয়াছে, করিয়া চলিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৮

উদ্দেশ্য সত্‌ হইলেই সিদ্ধান্ত বিধেয় হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ফিরিয়াই নীতীশ কুমার বিহারে আগামী এপ্রিল হইতে মদের বিক্রয় নিষিদ্ধ করিবার যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন, তাহার উদ্দেশ্য অসত্‌ বলা চলিবে না। মদ, বিশেষত দেশি মদ এ দেশের বহু পরিবারকে বিপন্ন বা বিপর্যস্ত করিয়াছে, করিয়া চলিয়াছে। বিভিন্ন রাজ্যে বহু দিন ধরিয়াই মদের নেশা প্রতিরোধের জন্য আন্দোলন হইয়াছে। দরিদ্র মেয়েরা সেই সব আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা লইয়াছেন, কারণ পুরুষের নেশার পরিণাম মেয়েদেরই ভোগ করিতে হয় সর্বাধিক। অন্ধ্রপ্রদেশে মদবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস সুবিদিত। সুতরাং মদ সম্পর্কে ভাবিবার কারণ আছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়া এই বিপদের মোকাবিলা সম্ভব নহে, বিচক্ষণতার পরিচায়কও নহে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অভিজ্ঞতা জানাইয়া দেয়, মদ বিক্রয় বা পানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিলে তাহা বন্ধ হয় না, কেবল প্রকাশ্য না থাকিয়া গোপন হইয়া পড়ে। অন্য রাজ্য হইতে মদের চোরাচালান বাড়ে, লুকাইয়া মদ তৈয়ারি করিবার প্রবণতাও বাড়ে। তাহার একাধিক কুফল দেখা দেয়। এক দিকে গোপনে মদ তৈয়ারির ফলে তাহার গুণমানের উপর কোনও নজরদারি থাকে না, ভেজালের কারবার উত্‌সাহিত হয়, সেই ভেজাল মাঝে মধ্যেই ভয়াবহ ও মারাত্মক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অন্য দিকে, মদ উত্‌পাদন ও বিক্রয় আইনসম্মত থাকিলে তাহা হইতে শুল্ক বাবদ সরকারের যে আয় হইত, তাহা সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া যায়। বিহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হইলে বছরে অন্তত চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সরকারকে হারাইতে হইবে। বস্তুত, সম্ভাব্য ক্ষতি ইহার অনেক বেশি, কারণ ব্যবসার অঙ্ক কালক্রমে বাড়িবে। বিহার দেশের দরিদ্রতম রাজ্যগুলির একটি। তাহার উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ ও ব্যয় বাড়ানোর যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। সেই প্রয়োজন মিটাইবার জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি আবশ্যক। তাহার পরিবর্তে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ছাড়িয়া দিয়া নীতীশ কুমার কাহার উপকার করিতেছেন? কীসের মন্ত্রণায় অর্থনীতির সহজ যুক্তিকে বিসর্জন দেওয়ার এই অবিবেচনা?

মন্ত্রণা রাজনীতির। জনমনোরঞ্জনের সস্তা রাজনীতির। কিন্তু তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে একটি ভ্রান্ত এবং বহুলপ্রচলিত মানসিকতা। সমাজের উপর রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার ছড়ি ঘুরাইবার মানসিকতা। সমাজের পক্ষে কী ভাল, কী খারাপ, সেই বিষয়ে রাষ্ট্রের চালকদের নিজস্ব ধারণা থাকিতেই পারে। রাষ্ট্রের নীতিতে সেই ধারণার প্রতিফলন ঘটিবে, তাহাও অস্বাভাবিক বা অযৌক্তিক বলা চলে না। কিন্তু সরকার নিজে সমাজের উপর, ব্যক্তির উপর নৈতিকতা চাপাইয়া দিবে, ইহা কখনওই একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গ্রহণীয় নীতি হইতে পারে না। মদ খাওয়া বিষয়ে ভারতে নৈতিকতার অনুশাসন অতি প্রাচীন। বিশেষত, গাঁধীবাদী নৈতিকতার কাঠামোয় এই বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। বিভিন্ন রাজ্যে মদ বিক্রয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার পিছনে এই নীতিবাগীশ মানসিকতার একটি বড় ভূমিকা আছে, তাহা অনস্বীকার্য। তাহা লইয়া ঘোর আপত্তির কারণ আছে। নৈতিকতার বিচার সমাজের, মদ্যপান ভাল কি খারাপ, তাহার বিচারে রাষ্ট্রের কোনও নৈতিক ভূমিকা থাকিতে পারে না। নীতীশ কুমার (বা নরেন্দ্র মোদী) যদি নূতন ভারত গড়িবার পথে অগ্রসর হইতে চাহেন, তবে জেঠামশাইয়ের ভূমিকা ছাড়িতে আজ্ঞা হউক। অবিলম্বে।

nitish kumar liqour ban bihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy