Advertisement
E-Paper

অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমাদের গণতন্ত্র

একাধিপত্যবাদীদের সাম্প্রতিক নিশানা অমোল পালেকর। মুম্বইয়ে ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট’-এ ভাষণ দিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলেন অভিনেতা অমোল। এক প্রয়াত শিল্পীর ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধনে আমন্ত্রিত ছিলেন অমোল পালেকর।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৯
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রবণতায় ইতি নেই। বিতর্ক ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা দেশে, কিন্তু সরকারের কোনও খেদ নেই। অপছন্দের যাবতীয় কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়া অভ্যেসে পরিণত হচ্ছে ভারতে।

একাধিপত্যবাদীদের সাম্প্রতিক নিশানা অমোল পালেকর। মুম্বইয়ে ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট’-এ ভাষণ দিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলেন অভিনেতা অমোল। এক প্রয়াত শিল্পীর ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধনে আমন্ত্রিত ছিলেন অমোল পালেকর। সেই অনুষ্ঠানেই ভাষণ দিতে গিয়ে ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট’-এর সাম্প্রতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু কথা বলেন তিনি। ওই গ্যালারির মুম্বই ও বেঙ্গালুরু কেন্দ্রে কোন কোন প্রদর্শনী হবে, আগে তা নির্ধারিত হত স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে। এখন ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সরাসরি বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে বলে পালেকর সখেদ মন্তব্য করেন। কিন্তু অভিনেতার এই খেদ প্রকাশই গ্যালারির নিয়ন্ত্রকদের খেদের কারণ হয়। যে শিল্পীর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে তিনি এসেছেন, শুধুমাত্র সেই শিল্পীর কাজের বিষয়েই ভাষণ সীমাবদ্ধ রাখা হোক, অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই— সরাসরি এমন বার্তা দিয়ে দেওয়া হয় অমোল পালেকরকে।

যে মঞ্চে অমোল পালেকর ভাষণ দিচ্ছিলেন, তা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ ছিল না। কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতির প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন না। শিল্পীদের অনুষ্ঠান, শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধাদের জমায়েত, সেখানে ভাষণ দিচ্ছেন এক শিল্পী। পরিবেশ এবং পরিস্থিতি কতটা উদার হওয়া উচিত, সহজেই অনুমেয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ ছবি দেখা গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা শোনা যেতেই গ্যালারির কর্মকর্তারা থামানোর চেষ্টা করলেন অমোল পালেকরকে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সেই জার্মান কবিতার কথা আবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। শাসকের প্রতিনিধিরা কখনও কমিউনিস্টদের শেষ করতে আসবে, কখনও ইহুদিদের শেষ করতে আসবে, কখনও শেষ করা হবে অন্য কোনও জনগোষ্ঠীকে। নিজের গায়ে আঁচ লাগছে না বলে যাঁরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলেন, এর পরে যে তাঁদের পালা, তাঁরা বুঝতে পারছিলে না। যখন বুঝলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অমোল পালেকরের সঙ্গে মুম্বইতে যা ঘটল, তা আজ মুখ বুঁজে মেনে নিলে ওই জার্মান কবিতার অন্তিম পরিণতি আমাদের অনেকের অপেক্ষাতেই হয়তো থাকবে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্র বিরোধী বক্তব্য, বক্তৃতার মাঝ পথেই থামিয়ে দেওয়া হল অমল পালেকরকে

সরকারের সমালোচনা করা যাবে না— দেশ জুড়ে এখন এই রকম একটা বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চলছে। কেন্দ্র হোক বা বিভিন্ন রাজ্য— সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই দেশদ্রোহী তকমা পেতে হচ্ছে। অথবা প্রশাসনের রোষানলে পড়তে হচ্ছে, অথবা অমোল পালেকরদের মতো বাধা পেতে হচ্ছে, অপমানিত হতে হচ্ছে। কখনও শিল্পীর গান থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাঝপথে, কখনও বাদ্যযন্ত্রীর অনুষ্ঠান আটকে যাচ্ছে, কখনও নাটকে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে, কখনও প্রখ্যাত শিল্পীকে সাদরে ডেকে এনেও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে যে, তাঁর ভাষণের রূপরেখা কী হবে। পরমত অসহিষ্ণুতা এ ভাবেই এক দুর্ভাগ্যজনক চেহারা নিচ্ছে ভারতে। যে ছবিটা তৈরি হচ্ছে, তা অগণতন্ত্রের ছবি। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে পথ চলছে ভারতীয় গণতন্ত্র। দিন যত গিয়েছে, ততই পরিণত হয়েছে এই গণতন্ত্র। কিন্তু আচমকা অসুস্থতার নানা উপসর্গ মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে দেশটার নানা প্রান্তে, নানা অংশে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক কাঠামোটা যেন আর সুস্থ থাকতে পারছে না। এই অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দিলে কিন্তু খুব বড় ভুল হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক উদারতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রয়েছে যাঁদের, অবিলম্বে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে সক্রিয় হতে হবে। এই অসুস্থতার নিরাময় না ঘটালে অদূর ভবিষ্যতে পচন ধরতে পারে ভারতীয় গণতন্ত্রের শরীরে।

আরও পড়ুন: পালেকর নিয়ে সরকারকে তির বিরোধীদের

Newsletter Amol Palekar National Gallery of Modern Arts NGMA Narendra Modi Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy