Advertisement
০৮ মে ২০২৪
COVID Vaccine

সমষ্টির স্বার্থ

নাগরিক অধিকারের রক্ষণ ও লালন যে কোনও অবস্থায় প্রশ্নাতীত। তবু, কোভিডের ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে ‘জনস্বার্থ’-এ টিকা নেওয়ার কথা বলেছে, তার কথাও।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ০৫:২৮
Share: Save:

কাউকেই কোভিড টিকা নিতে জোর করা যাবে না, সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিকের নিজের শরীরের উপর অধিকার সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২১-এ স্বীকৃত, এবং কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারেরই টিকাকরণ নীতি সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না— অস্যার্থ এই। এমন নয় যে কেন্দ্র কোভিড টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে, আদালতে হলফনামায় কেন্দ্র তা স্পষ্টও করে দিয়েছে: প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে কোভিডের মতো সার্বিক স্বাস্থ্য-দুর্যোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে জনস্বার্থে টিকা নেওয়ার কথা এবং সরকার যে টিকার ব্যবস্থা করেছে, শুধু সে কথাই। শীর্ষ আদালতেরও মত, সরকারের টিকাকরণ নীতি অযৌক্তিক নয়। তবে টিকা না নিলে নাগরিককে নানা বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হচ্ছে— মহারাষ্ট্রে লোকাল ট্রেনে ভ্রমণে টিকার শংসাপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা বা কেরলে টিকা না নিলে নাগরিকের চিকিৎসার খরচ বহনে সরকারি আপত্তি— তা অনভিপ্রেত। অর্থাৎ টিকা না নেওয়াও নাগরিকের অধিকারভুক্ত।

নাগরিক অধিকারের রক্ষণ ও লালন যে কোনও অবস্থায় প্রশ্নাতীত। তবু বলতে হয়, কোভিডের ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে ‘জনস্বার্থ’-এ টিকা নেওয়ার কথা বলেছে, তার কথাও। মনে রাখা দরকার, কোভিড-অতিমারি এক অ-ভূতপূর্ব ঘটনা, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন স্বাস্থ্য-সঙ্কট গত একশো বছরে আসেনি, কোভিডে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে পণ্ডিতরা তুলনা টেনেছেন বিশ্বযুদ্ধে প্রাণহানির। এ-হেন অভাবনীয় স্বাস্থ্য-সঙ্কটের মোকাবিলায় বিজ্ঞান রেকর্ড সময়ে টিকা তৈরি করেছে, সরকার সেই টিকা নাগরিককে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, এই অবস্থায় নাগরিকের টিকা না নেওয়ার অধিকার ও সামূহিক স্বাস্থ্য-পরিস্থিতির মধ্যে তুল্যমূল্য বিচারে ‘জন’ তথা সমষ্টির স্বার্থকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় কি? কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের আবহে ‘হার্ড ইমিউনিটি’-তে পৌঁছনোর লক্ষ্যে ভারত দ্রুত ও বেশি মাত্রায় টিকাকরণের পথ বেছে নিয়েছিল, তখন টিকার জন্য উৎসাহ ও হাহাকার, যুগপৎ দুই-ই দেখা গিয়েছিল। অনেক পথ ও ক্ষয়ক্ষতি পেরিয়ে আজ যখন কোভিড স্তিমিত, জীবন অনেক স্বাভাবিক, টিকা পাওয়ার সার্বিক ব্যবস্থাটিও অনেক হোঁচটের পরে সুস্থিতি পেয়েছে, তখন ‘বুস্টার ডোজ়’ নিতে নাগরিকের অনাগ্রহের ছবিই বলে দিচ্ছে, নাগরিকেরা হয়তো সমষ্টির রোগমুক্তির কথা ভাবছেন না, কোভিড অতীত সুতরাং টিকা নিয়ে কী হবে, তাঁরা এই ব্যক্তিগত মতে বিশ্বাসী।

এক জন নাগরিক টিকা না নিলে সার্বিক ফলাফলে তা কতটা ছাপ ফেলে, আদৌ ফেলে কি না, এ নিয়ে বিস্তর তর্ক রয়েছে। তবু সব কিছুর পরেও নাগরিকের একটি নৈতিক দায় থেকে যায়। সাম্প্রতিক কালে পোপ ফ্রান্সিসও নাগরিকের সেই নৈতিক দায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন: নাগরিকের উচিত নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, এবং কোভিডের মতো অসুখের উপশমে টিকা ‘ম্যাজিক’-এর মতো কাজ না করলেও, অতিমারি প্রতিরোধে তা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ‘যৌক্তিক’ সমাধান। নাগরিকের মনে রাখা প্রয়োজন, টিকা নেওয়ার তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে অতিমারি প্রতিরোধ, তবে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্যটি হল দায়বদ্ধতা। দায়বদ্ধতা বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতার প্রতি, দায়বদ্ধতা সমষ্টিমানুষের সুস্থতার স্বার্থে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে নিজ কর্তব্য পালনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID Vaccine Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE