Advertisement
০৮ মে ২০২৪
India Bangladeh Border

সেতুবন্ধন

দেশভাগ-পূর্ববর্তী ভারতে দুই বাংলা মিলিয়ে এক মসৃণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল ব্রিটিশ শাসক।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২২ ০৮:৫৪
Share: Save:

অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষে ফের চালু হল ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ। ২০২০-র ২৮ মার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেন দু’টি— কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস ও কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেস। এ বার সেগুলির সঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত মিতালী এক্সপ্রেস নামে আরও একটি ট্রেন যাত্রা শুরু করল। নতুন ট্রেনটির গুরুত্ব কিছু বেশি— কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে যাওয়ার বিভিন্ন সুব্যবস্থা আছে, রেলপথ ছাড়াও আছে বাস ও উড়ান। কিন্তু নানা ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ততখানি ভাল নয়, চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করা অসম্ভব না হলেও পরিবহণ ব্যবস্থা অপ্রতুল। অতএব, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে এত দিন দক্ষিণবঙ্গের ঘুরপথই ছিল মুখ্য ভরসা। সেই দূরত্ব ঘোচাল মিতালী এক্সপ্রেস, এযাবৎ কাল অবহেলিত অঞ্চলটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজধানীর সময়-দূরত্ব দাঁড়াল মাত্র ন’ঘণ্টা। দুই দেশেই তার লাভ প্রভূত— জনতার পক্ষেও, সরকারের পক্ষেও।

দেশভাগ-পূর্ববর্তী ভারতে দুই বাংলা মিলিয়ে এক মসৃণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল ব্রিটিশ শাসক। স্বাধীনতার পর স্বভাবতই তা আর তত মসৃণ থাকেনি, এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তাকে সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করে দেয়। পরবর্তী কালে যদিও এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্ভাবনাটির গুরুত্ব বুঝতে ভুল করেননি আধুনিক ভারত ও বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকেরা। এ বারও তাঁরা যথার্থ ভাবেই বুঝেছেন যে, অতিমারির দু’বছরের ছেদের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে দ্রুত পুরনো ছন্দে ফেরাতে হলে এই রেলপথগুলি বড় ভরসা হতে পারে। তাই একে একে চালু হয়েছে ১৯৬৫-তে বন্ধ হয়ে যাওয়া দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা-খুলনা লাইন, অথবা উত্তরবঙ্গের হলদিবাড়ি-চিলাহাটি লাইন, যা স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী কালে কলকাতা-শিলিগুড়ি ব্রড গেজ লাইনের অংশ ছিল। যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি মালগাড়ির জন্যেও চালু হয়েছে পাঁচটি সীমান্তবিন্দু— তিনটি উত্তরবঙ্গে, দু’টি দক্ষিণবঙ্গে। আশা করা যায়, অতিমারির কারণে পর্যটনে যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা হতে পারে এই যোগাযোগ। হাসপাতাল, হোটেল, শপিং মল ইত্যাদি যে সব সংলগ্ন ক্ষেত্র এর সঙ্গে জড়িত, সেখানেও সমৃদ্ধির পুরনো ছবি দেখা যাবে।

এমনিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে বিদেশনীতিতে ভারতের পক্ষে সদর্থক কথা বিশেষ বলা যায় না। চিন যত আগ্রাসী হয়েছে, তত দক্ষিণ এশিয়ায় নয়াদিল্লির চিরন্তন প্রভাববৃত্তে ক্ষয় ধরেছে। এমনকি, উপমহাদেশের প্রতিবেশীরাও অনেকে নয়াদিল্লিকে অগ্রাহ্য করে বেজিংয়ের সঙ্গে মিত্রতা পাতিয়েছে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। এক দিকে ঢাকা-বেজিং সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ, অন্য দিকে গত বছর মোদীর বাংলাদেশ সফরে নয়া নাগরিকত্ব আইন ঘিরে সে দেশে প্রতিবাদের ঝড় এখনও স্মৃতিতে টাটকা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ক্রমশ এই স্খলন ভারতের পক্ষে সুসংবাদ হতে পারে না। এমতাবস্থায় ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক মেরামতিতে রেলপথগুলির ভূমিকা যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা প্রশংসার্হ। সরকার যথাযথ পরিকল্পনা সাজাতে পারলে এগুলিই ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সেতুবন্ধনের পাথেয় হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Bangladeh Border North Bengal Mitali Express
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE