—প্রতীকী ছবি।
ভারতে বিচারপ্রক্রিয়ায় জামিন নিয়ে আদালতের নানা গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, নির্দেশ ও রায়ের উদাহরণ আছে। অপরাধের অভিযোগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যে জামিন, বিশেষত আগাম জামিন এক অতি জরুরি ব্যবস্থা, অভিযুক্তেরও ন্যায্য বিচারের অধিকার ও মানবাধিকারকে তা নিশ্চিত করে। শীর্ষ আদালতের উচ্চারিত কথাটি স্মরণীয়: কারাবাস নিয়ম নয়, হওয়া দরকার ব্যতিক্রম; বরং জামিন ও তার অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। সেই অধিকারের সীমাই সম্প্রতি প্রশস্ত হল সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের রায়ে— অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন শোনা বা বিবেচনার কাজে হাই কোর্ট ও নিম্ন আদালতগুলির জন্য ‘আঞ্চলিক এক্তিয়ার’ কোনও বাধা হবে না। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতাবাসী কারও বিরুদ্ধে যদি রাজস্থানে অপরাধ করার অভিযোগ দায়ের হয়ে থাকে, অভিযুক্ত কলকাতা হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারবেন; কলকাতা হাই কোর্টও তা শুনবে, প্রয়োজনে ‘ট্রানজ়িট’ আগাম জামিন দেবে।
ক্রিমিনাল প্রোসিডিয়র কোড (সিআরপিসি)-র ৪৩৮ ধারা অনুযায়ী পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতারি এড়াতে অভিযুক্তের আগাম জামিন পাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকেই আছে। কিন্তু এত দিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও একটি জায়গায় এফআইআর দায়ের হলে তাকে আগাম জামিনের আবেদন করতে হত সেই হাই কোর্ট বা নিম্ন আদালতে, এফআইআর-এর জায়গাটি যার এক্তিয়ারভুক্ত। আঞ্চলিক এক্তিয়ারের এই সীমাবদ্ধতা অভিযুক্তের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়— ভৌগোলিক দূরত্ব, যাতায়াত সময় অর্থ ইত্যাদির প্রশ্ন তো আছেই, আরও বড় বেঁচে থাকার প্রশ্ন: অভিযুক্তের উপর হামলা, শারীরিক নিগ্রহ এমনকি জীবনাশঙ্কাও অনেক সময় অমূলক নয়। এই কারণেই শীর্ষ আদালত আগাম জামিনের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে হাই কোর্ট ও নিম্ন আদালতগুলিকে আঞ্চলিক এক্তিয়ারের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করেছে।
এত দিন ভারতের নানা হাই কোর্টের মধ্যেও আগাম জামিন প্রসঙ্গে আঞ্চলিক এক্তিয়ার নিয়ে মতদ্বৈধ ছিল, শীর্ষ আদালতের রায়ে তার নিরসন হল। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে তা হল, অপরাধ দায়ের হওয়া জায়গার আদালতে গিয়ে অভিযুক্তকে জামিনের আবেদন করতে বাধ্য করা আসলে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের পরিপন্থী, ভারতের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জন্য যে অধিকারগুলি নিশ্চিত করেছে। ভারতে সাম্প্রতিক কালে এই অধিকার বারংবার ভূলুণ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বহু সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী, সরকারের সমালোচক সাধারণ নাগরিকও পুলিশের হাতে হেনস্থার শিকার ও কারাবন্দি হয়েছেন। বন্দিদশা মিটলেও মুক্তি নেই, বাড়ি থেকে বহু দূরে থানায় বা আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য অর্থ সময় শ্রম সব কিছুরই হানি। সমগ্র প্রক্রিয়াটির মধ্যে মিশে আছে ক্ষমতাধরের হাতে অভিযুক্ত বা বিচারাধীনের প্রতি পদে হেনস্থা ও নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা, এই সময়ের ভারতে যা দুঃসহ বাস্তব। শীর্ষ আদালতের রায়ে সেই ‘অবিচার’ বন্ধ হওয়ার পথটি প্রশস্ততর হল বলা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy