Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Supreme Court

নব বিধান

বারো বছর আগে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অবৈধ বিয়ের ক্ষেত্রে সন্তানেরা শুধু বাবা-মায়ের নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তিতে অধিকার দাবি করতে পারেন।

Supreme Court.

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১৮
Share: Save:

হিন্দু বিবাহ আইনের চোখে যাঁরা অবৈধ বা অস্বীকৃত বিবাহের সন্তান, তাঁরাও বাবা-মায়ের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যৌথ সম্পত্তির অংশ পাবেন— সম্প্রতি জানাল দেশের শীর্ষ আদালত। বারো বছর আগে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অবৈধ বিয়ের ক্ষেত্রে সন্তানেরা শুধু বাবা-মায়ের নিজস্ব অর্জিত সম্পত্তিতে অধিকার দাবি করতে পারেন। সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন মামলাকারী। এ সব ক্ষেত্রে সন্তানেরা কেবল বাবা-মায়ের অর্জিত সম্পত্তির অধিকার পাবেন, না কি বংশানুক্রমিক সম্পত্তিরও অধিকারী হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তারই উত্তর পাওয়া গেল এ বার। তবে শুধু হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের অধীনে, যৌথ বা ‘কোপার্সেনারি’ সম্পত্তির ক্ষেত্রেই সন্তানদের এই অধিকার দাবি প্রযোজ্য, তা-ও স্পষ্ট করেছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

উত্তরাধিকার, বিশেষত সম্পত্তি সংক্রান্ত অধিকারের ক্ষেত্রে আইনের নানা জটিলতা, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে মিতাক্ষর ও দায়ভাগ দুই গোষ্ঠীর পার্থক্য ইত্যাদি পেরিয়েও যে কথাটি বিশেষ ভাবে বলার তা হল, শীর্ষ আদালতের এই রায়ে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে এই সময়ে অন্য রকম, গভীরতর এক দর্শনও ফুটে ওঠে। সেই দর্শন বিবাহের বৈধতা-অবৈধতা, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির নিগড় অতিক্রম করার ধারণাটি তুলে ধরে। যুগ যুগ ধরে লালিত জনবিশ্বাস ও ধর্মবিশ্বাস কালক্রমে আইন হয়ে উঠে এই বিবাহকে বৈধ, ওই বিবাহকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে এসেছে, তারই ফল হিসাবে সন্তানকেও দাগিয়েছে দুই শ্রেণিবিভাগে, অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে নৈতিক-সামাজিক অস্বীকৃতির সঙ্গে যোগ করেছে আর্থিক বঞ্চনাও। সমাজ তথা সমষ্টিই ছড়ি ঘুরিয়েছে, সেই সমষ্টিবোধই প্রতিফলিত হয়েছে আইনেও। শীর্ষ আদালতের রায়ে এই কথাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— পরিবর্তনশীল সমাজে আইন কোনও ভাবে স্থাণু থাকতে পারে না, অতীতে যা অবৈধ ছিল, আজ তা বৈধ হতে পারে; বৈধতার ধারণা জন্মায় সামাজিক ঐকমত্য থেকে। অর্থাৎ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে, বিবাহ-সন্তান-উত্তরাধিকার সম্পর্কে যুগলালিত ধারণাগুলিও যে সময়ের নিরিখে আইনের চোখে পাল্টাবে, পাল্টানো দরকার, এবং বদলে যাওয়া সময়েও নাগরিকেরা পুরনো ধারণা আঁকড়ে থাকলে বিচারব্যবস্থাই হাত ধরে নতুন পথ দেখানোর কাজটি করবে— সেই সময়োচিত শিক্ষাটি পাওয়া গেল।

এর আগেও নানা সময়ে ভারতের আদালত এ ভাবে পথ দেখিয়েছে। যেমন মাদ্রাজ হাই কোর্ট জানিয়েছিল, লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্তানরা বাবা-মায়ের অর্জিত ও বংশানুক্রমিক দুই সম্পত্তিরই অধিকার পাবে। প্রকৃত অর্থে এই সবই মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন, সংবিধানে নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির যে অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে সেই প্রশ্ন। যে প্রসঙ্গ বলে, বাবা-মায়ের সম্পর্ক আইন-অনুমোদিত না-ও হতে পারে, কিন্তু এই সম্পর্কের মধ্যে জন্মানো সন্তানকে দেখতে হবে স্বাধীন ভাবে, মা-বাবার সম্পর্কের স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির বাইরে বা ঊর্ধ্বে। শিশুর জন্মে তার নিজের ভূমিকা নেই, এবং সম্পত্তি-সহ জীবনধারণের সমস্ত ন্যায্য দাবিতে তার অধিকার রয়েছে। প্রতিষ্ঠান-ধারণার সঙ্কীর্ণ গণ্ডি-ছাড়ানো এই সহজ ও অমোঘ সত্যটি শীর্ষ আদালতের রায়ে আরও এক বার প্রতিভাত হল নিজস্ব গৌরবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Marriage hindu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE