E-Paper

পুকুর চুরি

কলকাতা বাঁচাতে জলাশয়ের গুরুত্ব বিপুল। শহরের মাটির নীচে কাদার স্তর রয়েছে। সেই স্তর ভেদ করে জল ঢোকে না মাটিতে। ফলে কলকাতাকে বাঁচাতে হলে পুকুর সংরক্ষণ আবশ্যক।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৪
picture of filling pond.

কলকাতাকে বাঁচাতে হলে পুকুর সংরক্ষণ আবশ্যক। ফাইল চিত্র।

শাস্তির ভয় দেখালেও যখন কোনও সমস্যার সমাধান হয় না, তখন তা ভাবনার বিষয় বইকি। কলকাতায়, এমনকি জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট করে নির্মাণকার্য চালানোর অভিযোগ বহু পুরনো। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল এ-হেন অবৈধ কাজে প্রকাশ্যে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। কিন্তু সেই প্রবণতায় পরিবর্তন আসেনি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে মেটিয়াবুরুজের নাদিয়াল থানার ওসি-র বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে সেখানে পাম্পের সাহায্যে পুকুরটির জল বার করে, ভরাট করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পুলিশ এবং পুরসভার কাছে জানিয়েও কোনও প্রতিকার মেলেনি।

শুধুমাত্র ওসি-র বিরুদ্ধে এফআইআর করে কি বহু পুরনো এই রোগ সারবে? যেখানে জলাশয় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার বলা হচ্ছে, পুকুর বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইনও আছে, সেখানে এমন অপরাধ ঘটলে ভারপ্রাপ্ত সমস্ত সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন। পুকুর বোজানোর কাজ সবার অলক্ষ্যে করা সম্ভব নয়। সুতরাং, দুর্নীতি দেখেও দায়িত্বশীলরা যদি নীরব থেকে সেই দুর্নীতিতে প্রশ্রয় জোগান, তবে তা ক্ষমাহীন অপরাধ। জলাভূমি, বিশেষত কলকাতায় জলাভূমির ক্রমহ্রাসমাণ সংখ্যা ভয় ধরায়। সাধারণত দীর্ঘ দিন সংস্কার না-হওয়া পুকুরে স্থানীয়রা আবর্জনা ফেলতে থাকায় তা বুজে আসে। পরবর্তী কালে তা ভরাট করে চড়া দামে বিক্রি করে প্রোমোটার চক্র। হারিয়ে যায় জলাশয়, পরিবর্তিত হয় সংলগ্ন অঞ্চলের চরিত্র। এ এক ধারাবাহিক দুর্নীতি। বাম আমল থেকেই ক্রমান্বয়ে পুকুর বোজানোর কাজ চলছে। শাসক পরিবর্তন হলেও সেই চিত্র পাল্টায়নি। কলকাতা পুরসভা এলাকায় পুকুর ভরাট রুখতে নানাবিধ পদক্ষেপের কথা শোনা গিয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুকুরের পৃথক ঠিকানা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল পুকুরগুলির মূল্যায়ন করার কথাও, যাতে পুরসভার কাছে সমস্ত ধরনের পুকুরের তথ্য থাকতে পারে এবং পুকুর বোজানো হলে তার তথ্য অবিলম্বে পাওয়া যায়। তবুও সেই প্রবণতায় পুরোপুরি লাগাম পরানো যায়নি। বরং, পুকুর ভরাট রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন সরকারি আধিকারিকরাও।

কলকাতা বাঁচাতে জলাশয়ের গুরুত্ব বিপুল। শহরের মাটির নীচে কাদার স্তর রয়েছে। সেই স্তর ভেদ করে জল ঢোকে না মাটিতে। ফলে কলকাতাকে বাঁচাতে হলে পুকুর সংরক্ষণ আবশ্যক। অন্যথায়, ভারসাম্য নষ্ট হবে পরিবেশের, প্রভাব পড়বে নিকাশি ব্যবস্থাতেও। ইতিমধ্যেই পূর্ব কলকাতার জলাভূমি অঞ্চলে বেআইনি নির্মাণের ফল ভুগছে কলকাতা, প্রতি বর্ষাকালে। কৃত্রিম ভাবে তরল বর্জ্য পরিশোধনের কাজটিও ক্রমশ হয়ে উঠছে ব্যয়বহুল। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি, পুরসভার কিছু অসাধু ইঞ্জিনিয়ার-অফিসার এবং প্রোমোটারদের চক্র ভাঙা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ‘আর একটিও পুকুর বোজাতে দেব না’-গোছের জনমোহিনী ঘোষণায় কাজ হবে না। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে অসাধু চক্রের গোড়াটি খুঁজে বার করতে হবে। প্রশ্ন হল, ঘণ্টা বাঁধার সেই ‘কঠিন’ কাজটি কবে সম্পন্ন হবে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pond Filling construction Illegal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy