Advertisement
০২ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

আনন্দধারা

দেবীপক্ষের সূচনা হওয়ার আগেই ধর্মমতে পুজোর উদ্বোধন করা চলে কি না, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে উত্তেজিত তর্কও হবে। তর্কটি যদিও অবান্তর।

An image of Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে যার উদ্বোধন করলেন, তা আসলে উৎসব। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:০১
Share: Save:

দেবীপক্ষের সূচনা হওয়ার আগেই দুর্গাপুজোর উদ্বোধন? গত বছর অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিলেন। এ বছর নিশ্চয়ই সয়ে গিয়েছে। ধর্মের ধ্বজাধারীরা বিরক্ত হতেই পারেন। ইদানীং দুর্গাপুজো নিয়ে তাঁদের আপত্তি এমনিতেই অনেক— বাঙালি পুজোর সময় নিরামিষ খায় না, যথেষ্ট পরিমাণে ব্রাহ্মণ্যবাদী আচার পালন করে না— তার সঙ্গে হয়তো আরও একটি অভিযোগ জুড়বে। দেবীপক্ষের সূচনা হওয়ার আগেই ধর্মমতে পুজোর উদ্বোধন করা চলে কি না, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে উত্তেজিত তর্কও হবে। তর্কটি যদিও অবান্তর। ষষ্ঠীর দিন বোধনের মাধ্যমে দেবীমূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়, অন্য কোনও আচারে পুজোর সূচনা হয় না। মুখ্যমন্ত্রী ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে যার উদ্বোধন করলেন, তা আসলে উৎসব। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বৃহত্তম গণ-উৎসব। সেই উৎসবে ধর্ম আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু প্রকৃত বাঙালিমাত্রেই সাক্ষী দেবেন যে, তার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সারা বছর ধরে আনন্দের অপেক্ষার অবসান। বহু মানুষ সকাল থেকে উপোস করে মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেন, কিন্তু সেই আচারেরও সিংহভাগ জুড়ে কি নেই এক দিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত অভ্যাস আর অন্য দিকে অনভ্যস্ত শাড়ি বা ধুতি-পাঞ্জাবি পরার আনন্দ? বাঙালির দুর্গাপুজো এই রকমই— তাতে নিষ্ঠা আছে, প্রথা আছে, কিন্তু তার বাড়াবাড়ি নেই। অতএব, সেই উৎসবের উদ্বোধন ঠিক কোন তিথিতে হল, তা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। কেউ আগেভাগে ঠাকুর দেখবেন বলে অর্ধপ্রস্তুত মণ্ডপে পৌঁছে হতাশ হবেন, কেউ বিরক্ত হবেন পুজোর এত আগে থাকতেই রাস্তায় ‘আগত দর্শনার্থী’র ভিড়ে। কিন্তু এ সবই— যাকে বলে খেলার অঙ্গমাত্র।

প্রশ্ন অন্যত্র। বাঙালি এমনিতেই ছুটিপ্রবণ, গত এক দশকে সেই প্রবণতা আরও মাথাচাড়়া দিয়েছে। লক্ষ্মীপুজো শেষ হয়ে যায়, বাঙালির পুজোর ছুটি ফুরোতেই চায় না। এত দিন জানা ছিল, খাতায়কলমে যা-ই লেখা থাক, তৃতীয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো অবধি পুজোর ছুটি চলবেই। মুখ্যমন্ত্রী তাতে কার্যত আরও দিনপাঁচেক যোগ করে দিলেন। পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেছে, ‘ভাল্লাগে না পুজোর সময় পাঠশালার এই পাঠ’ বলে যদি স্কুল-কলেজ অফিস ঝাঁপ বন্ধ করে দেয়, বা ঝাঁপটুকু খোলা রেখে সকলে মন ভাসিয়ে দেন শরতের রোদে? অনুমান: এই সম্ভাবনার কথা মুখ্যমন্ত্রীও বিলক্ষণ জানেন। এবং, তাতে তাঁর বিশেষ আপত্তিও নেই।

যে কোনও অর্থশাস্ত্রী জানেন যে, শেষ অবধি যে কোনও কাজের বিচার হবে ‘ইউটিলিটি’ দিয়ে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে, উপভোগ। কাজটি শেষ অবধি কতখানি ইউটিলিটি দিল, তা-ই বিবেচ্য— এবং, সর্বোচ্চ ইউটিলিটির সাধনাই মানবধর্ম। মহালয়ার দু’দিন আগে থাকতেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেলে তার যে উপভোগের মাত্রা, অন্য কাজ থেকে ততখানি ইউটিলিটি অর্জন করা দুষ্কর— পুজোপন্থী অর্থশাস্ত্রী যদি এই কূটযুক্তি পেশ করেন? বলা বাহুল্য যে, এর যথেষ্ট মজবুত পাল্টা যুক্তি আছে। কিন্তু, যে রাজ্য সর্বদাই সমস্যায় জর্জরিত, যেখানে পুজোর বাজার আছে, চাকরির বাজার নেই, সিন্ডিকেট আছে, শিল্প নেই, দিদিকে বলো আছে, ব্যবসা নেই— সেখানে যদি নির্দিষ্ট সময়ের দিনকয়েক আগেই পুজোর আনন্দধারা বইতে আরম্ভ করে, তখন কে-ই বা সেই পাল্টা যুক্তিতে কান দেবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE