Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Climate Change

শেষের শুরু?

উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিশ্বের তাবড় দেশগুলির অঙ্গীকার ছিল প্রাক্-শিল্পবিপ্লব যুগের তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকিয়ে রাখা। সেই পথ ধরেই ২০১৫ সালে এসেছিল প্যারিস চুক্তি।

An image of fall

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৭
Share: Save:

জলবায়ুর এই চরম পরিবর্তনের একমাত্র কারণ মানুষ ও তাদের দ্বারা প্রকৃতির ধ্বংসলীলা— সম্প্রতি এমন কথাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানা কোণে সেই পরিবর্তনের আঁচ পড়ছে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিপর্যয়ের পিছনে মানুষের বিবেচনাহীন কাজকর্মের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। তা হলে এই সাম্প্রতিক সতর্কবার্তায় নতুন কী আছে? বায়োসায়েন্স নামের বিজ্ঞান পত্রিকাটিতে সাত দেশের বারো জন বিজ্ঞানী যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, তা নিছক সতর্কবার্তা নয়। বরং, বাস্তব পরিস্থিতির এক রূঢ় পরিসংখ্যান। যে পরিসংখ্যান বিচারে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য বিজ্ঞানী উইলিয়াম রিপল জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে মানবজাতি।

উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিশ্বের তাবড় দেশগুলির অঙ্গীকার ছিল প্রাক্-শিল্পবিপ্লব যুগের তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকিয়ে রাখা। সেই পথ ধরেই ২০১৫ সালে এসেছিল প্যারিস চুক্তি। অতঃপর আট বছর অতিক্রান্ত। চলতি ২০২৩ সালটি বিশ্বের উষ্ণতম বছরের শিরোপা পাওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে ইউরোপের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস। সাম্প্রতিক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, এই বছরে মোট ৩৮ দিন পৃথিবীর গড় উষ্ণতা শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। অর্থাৎ, লক্ষ্মণরেখা অতিক্রমের প্রবণতা শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা বছর জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন কোণে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ, মহাসাগরে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টিতে বন্যা, ধস, যা এই বছরেই ভারতের বিভিন্ন পার্বত্য রাজ্যেও প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে, তার প্রত্যেকটি জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাবের ইঙ্গিতবাহী। খরা, বন্যার প্রকোপ বাড়লে বা ঋতু পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনায় ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হলে টান পড়বে খাবারে। অত্যধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে হিমবাহ গলতে থাকলে বরফগলা জলে পুষ্ট নদীগুলি শুকিয়ে আসবে। বিপন্ন হয়ে পড়বে নদীনির্ভর জনবসতিগুলি। সেই ‘শেষ’-এর দিকেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে মানবসভ্যতা।

সেই গতিতে লাগাম পরানোর প্রচেষ্টাটিও পর্বতপ্রমাণ সমস্যার তুলনায় যৎকিঞ্চিৎ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো। একই সুর শোনা গিয়েছিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ বৈঠকে উপস্থিত রাষ্ট্রনেতাদের কণ্ঠেও। তাঁরা সমগ্র বিশ্বে ২০৩০-এর মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনকে তিন গুণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদক্ষেপ আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সন্দেহ সেখানেই। এর জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের কাজে উন্নত দেশগুলি শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসবে কি? গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, গত দু’বছরের তুলনায় এ বছরে বায়ু এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের তুলনায় সেই বৃদ্ধি লক্ষণীয় কম। অর্থাৎ, বাঁচার উপায়টি জানা থাকলেও পুরোদমে সেই পথে হাঁটতে এখনও ঢের দেরি। সেই দেরির মাসুল চোকাতে হচ্ছে বিশ্বকে, প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE