মাধ্যমিক পরীক্ষা চলিতেছে, কিন্তু পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে পৌঁছাইতে পারিতেছেন না: বহু স্থান হইতে এমন অভিযোগ আসিয়াছে। রাস্তায় নামিলে বাসের দেখা মিলিতেছে না, কিংবা কম মিলিতেছে। একে তো করোনাকালীন বিধিনিষেধ পার হইয়া যানবাহনের স্বাভাবিকতায় ফিরিবার পথ এখনও মসৃণ হয় নাই। তাহাতে করোনাকালের আগে হইতেই বাসভাড়া বৃদ্ধি লইয়া বেসরকারি বাস ও মিনিবাস সংগঠনগুলির সহিত রাজ্য সরকারের মন কষাকষি চলিতেছে, এত দিনেও যাহার সুনির্দিষ্ট সমাধানসূত্র মিলে নাই। ফল হইল বিষম। গত বৎসর মাধ্যমিক পরীক্ষাই হয় নাই, আর এই বার অতিমারিজনিত দুর্ভাবনা, পাঠের দীর্ঘ অনভ্যাস ও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ক্ষয়ক্ষতি সরাইয়া রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থীর জীবনের প্রথম অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বসিবার প্রাক্কালে যুক্ত হইল তাৎক্ষণিক দুঃস্বপ্ন: পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাইবার বাস অমিল। ইহাই কি তাহাদের প্রাপ্য ছিল?
বিষয়টি সম্পূর্ণত প্রশাসনিক। দীর্ঘ সময় পাইয়াও কোনও সমাধানে না আসা, এখন মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় তাহার পরিণাম সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত ভাবে পরীক্ষার্থীদের উপর গিয়া পড়া— ইহা কি প্রশাসনেরই চূড়ান্ত ব্যর্থতা নহে? অতিমারি-পূর্ব বৎসরগুলিতে পরীক্ষার অনেক আগেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে রাজ্য পরিবহণ নিগমের নিকট বাস পরিষেবা বৃদ্ধির অনুরোধ আসিত, এই বৎসর পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পর্যন্তও তাহা আসে নাই বলিয়া খবর। না আসিলেও কি সংশ্লিষ্ট দফতর তথা রাজ্য সরকার পরীক্ষার্থীদের কথা ভাবিয়া বাস চলাচল সহজ ও সুলভ করিবে না? রাজ্যে সম্প্রতি যানবাহনে নূতন ও কঠোর জরিমানা-বিধি চালু হইয়াছে। অন্য দিকে জানা যাইতেছে, বিভিন্ন বাস-রুটে অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ বাসের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র তথা ‘সার্টিফিকেট অব ফিটনেস’-এর মেয়াদ ফুরাইয়াছে, সরকার জরিমানা মকুব না করিলে তাহারা পথে নামিতে অপারগ। জরিমানাও মকুব হয় নাই, অন্য ব্যবস্থাও নাই— সুতরাং মাধ্যমিক শুরু হইবার পরেও দেখা যাইতেছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তার কোনও অন্ত নাই।
মনে পড়িতে পারে, এই বঙ্গদেশেই মাধ্যমিকের দিনগুলিতে দেখা যাইত নানা সুখচ্ছবি: বাস ও অটোচালকরা পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতেন, ভাড়া লইতেন না, ব্যস্ত সকালে যানজট না হয় সেই জন্য পরিবহণ ক্ষেত্রের স্বেচ্ছাসেবকেরা তৎপর থাকিতেন। সর্বোপরি, রাস্তায় বাস-অটো ইত্যাদি যেন বহুল পরিমাণে থাকে, তাহা নিশ্চিত হইত। এই বৎসরের জন্য এই ধরনের বন্দোবস্ত বিশেষ জরুরি ছিল। তেমন বন্দোবস্ত যে নাই, তাহার পশ্চাতে রহিয়াছে সরকারের প্রস্তুতিহীনতার প্রলম্বিত ছায়া। সরকার তথা প্রশাসন চালাইবার প্রধান গুণ শুধু তাৎক্ষণিক তৎপরতা নহে, দূরদর্শিতা— পূর্ব হইতে পরিস্থিতি আঁচ করিয়া সেইমতো প্রস্তুত হওয়া। বাসভাড়া বৃদ্ধি, জরিমানা, বাসের স্বাস্থ্য-শংসাপত্র লইয়া সমস্যা হইবে, বিশেষত মাধ্যমিক-আবহে মাত্রা ছাড়াইবে, রাজ্য সরকারের বোঝা উচিত ছিল। পরীক্ষার্থীরা অনেকেই অসুবিধা সহিয়াও পরীক্ষায় বসিয়াছে। তাহারা ফল যেমনই করুক, জীবনপরীক্ষায় সসম্মানে পাশ করিয়াছে। রাজ্য প্রশাসন কিন্তু পাশ করিল না। এই ব্যর্থতা অমার্জনীয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy