E-Paper

টিকা নাটিকা

কোভ্যাক্সিন ভারতে সর্বাধিক ব্যবহৃত করোনা টিকাগুলির অন্যতম। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা মানবদেহে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে তখনও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ০৭:৩১

—প্রতীকী চিত্র।

অভিযোগ উঠেছিল ‘দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’র। অভিযোগ, হায়দরাবাদ-ভিত্তিক টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা-টিকা কোভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির দুই অধ্যাপক তাঁদের গবেষণায় জানিয়েছিলেন, ভারতে নির্মিত এই টিকা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের ৯২৬ জনের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যেই গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেই সমস্ত অভিযোগকে খারিজ করে আইসিএমআর দাবি করেছে, উক্ত গবেষণাটিতে যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজ চালানো হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। এই গবেষণা সম্পর্কে আইসিএমআর-কে ঠিক ভাবে জানানো হয়নি। আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর রাজীব বহেল গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীদের এবং যে জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে, তার সম্পাদককে চিঠি লিখে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, কোভ্যাক্সিন ভারতে সর্বাধিক ব্যবহৃত করোনা টিকাগুলির অন্যতম। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা মানবদেহে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে তখনও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। অভিযোগ উঠেছিল— কোনও বৈজ্ঞানিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের আন্তর্জাতিক মাপকাঠি না মেনেই এই দেশজ টিকার প্রয়োগে সায় দেওয়া হয়েছিল। এমনও শোনা গিয়েছিল, মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সব ক’টি ধাপ অতিক্রম করার আগেই এই টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তখনও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরবে অভিযোগগুলির বিরোধিতা করেছিলেন। বর্তমানে এই টিকা বিষয়েই জানুয়ারি, ২০২২ থেকে অগস্ট, ২০২৩ পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে করা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নমুনা পরীক্ষার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষই শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের অভিযোগ করেছেন, ৩০ শতাংশের অধিক মানুষ চর্মরোগ থেকে স্নায়ু সমস্যা, হাড়, পেশির নানা অসুবিধার উল্লেখ করেছেন। গবেষণার ফলাফল অভ্রান্ত, এমন দাবির কোনও কারণ নেই। অন্য গবেষণার মতোই এ ক্ষেত্রেও ফলাফল সঠিক, ভ্রান্ত— উভয়ই হতে পারে, পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, তার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদের ক্ষমা চাইতে বলা যায় কি? প্রয়োজন যথাযথ যুক্তি সহকারে টিকার কার্যকারিতা বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা। এবং একই সঙ্গে সত্যই ত্রুটি থাকলে তাকে শোধরানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু সমালোচনা হলেই উগ্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন সংশয়কেই ঘনীভূত করে মাত্র।

সংশয় রাজনৈতিক অভিসন্ধি বিষয়ে। করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেই ওঠেনি। অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কোভিড প্রতিষেধকের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা স্বীকার করেছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি। কিন্তু তাতে এমন কড়া প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কোভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে সরকারের গাঁটছড়ার বিষয়টি স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় শাসক দল ঘরে-বাইরে এর কার্যকারিতা সাড়ম্বরে জাহির করেছেন, টিকা-কূটনীতির হাতিয়ারও হয়েছে কোভ্যাক্সিন। এমন আলোড়ন কি তবে ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিতে দাগ পড়ার আশঙ্কায়? টিকার ব্যবহার কিন্তু জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনার্থে, রাজনৈতিক ময়দানের জন্য নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Covaxin Vaccine Corona virus Covid

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy