Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Unemployment

শতাংশের আড়ালে

শুধুমাত্র পরিসংখ্যান চালাচালির গতানুগতিকতায় বন্দি থাকলে কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের গভীরতর সত্যের তল পাওয়া যাবে না।

unemployment

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share: Save:

দারিদ্রের মতোই, বেকার তথা বেকারত্বের ধারণাটি দেশের আর্থিক অবস্থার সূচক হিসাবে বহু-আলোচিত। আবার সেই কারণেই, সরকারের আর্থিক নীতির সাফল্য বা ব্যর্থতা মাপতে বেকার সমস্যার মোকাবিলায় সেই নীতি ও তার প্রয়োগের কার্যকারিতা নিয়ে সওয়াল-জবাব চলতেই থাকে। যেমন সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের একটি সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশের পরে আরও এক প্রস্ত আলোচনা শুরু হয়েছে। এই সমীক্ষা থেকে উঠে আসা একটি তথ্য বিশেষ ভাবে আলোচক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তথ্যটি এই যে, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত সময়পর্বে দেশে স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৩.৪ শতাংশ। তার আগের বছরের ১৪.৯ শতাংশ থেকে কম হলেও এই হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা স্বভাবতই জোর গলায় সেই উদ্বেগ জানিয়েছেন এবং শিক্ষিত বেকারদের সমস্যার সুরাহা করতে না পারার দায়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন।

সম্প্রতি সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব ব্যাঘাত সৃষ্টির পিছনে বেকারত্ব-জনিত ক্ষোভের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধী রাজনীতিকদের অভিযোগ শোনা গিয়েছিল, সরকারি সমীক্ষার নতুন পরিসংখ্যান নিশ্চয় সেই অভিযোগে ইন্ধন দেবে। বেকারত্বের ক্ষোভ কখনওই সংসদে হানাদারির মতো গর্হিত অপরাধের ‘যুক্তি’ হতে পারে না এ-কথা অবশ্যই সত্য। কিন্তু ক্ষোভ যে অত্যন্ত সঙ্গত এবং তার কারণটি যে যথেষ্ট গুরুতর, সে-কথাও কোনও অংশে কম সত্য নয়। কেন্দ্রীয় সরকার যথারীতি সমস্যাটিকে অগ্রাহ্য করতে ব্যস্ত। শাসকরা এক দিকে বিরোধীদের বক্তব্যকে সংসদে হামলার সমর্থন বলে প্রতিপন্ন করতে ব্যগ্র, অন্য দিকে ‘বেকারত্বের হার এখন ছ’বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম’ গোছের সংখ্যা-তত্ত্বের আড়ালে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে ব্যস্ত। মোদীর নির্বাচনী প্রচারে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির কী হল, সেই প্রশ্ন বিস্মৃতিগ্রস্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জুমলা-সূত্র ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত।

শুধুমাত্র পরিসংখ্যান চালাচালির গতানুগতিকতায় বন্দি থাকলে কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের গভীরতর সত্যের তল পাওয়া যাবে না। দেশের নাগরিকরা আপন সামর্থ্য অনুসারে যথাযথ কাজের সুযোগ পাচ্ছেন কি না, সেই কাজের বিনিময়ে সম্মানজনক জীবন যাপনের উপযোগী প্রাপ্য তাঁদের মিলছে কি না, তাঁদের কাজের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আছে কি না, প্রকৃত উন্নয়নের অভিধানে এই প্রশ্নগুলি অপরিহার্য। অথচ এ দেশের বেকারত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় ও তর্কে তারা কার্যত সম্পূর্ণ অনুচ্চারিত থেকে যায়। সেই নীরবতা কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্ত বিতর্ককে গভীরে যেতে দেয় না। উপরোক্ত সমীক্ষার সূত্র ধরেই একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। ১০ শতাংশের বেশি স্নাতক বেকার থাকলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক— এই বহুলপ্রচলিত ধারণার সুবাদেই এ দেশের ১৩.৪ শতাংশ স্নাতক বেকার থাকার সংবাদটি গুরুতর বলে বিবেচিত হয়েছে। সংবাদটি অবশ্যই গুরুতর, কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়। যে স্নাতকরা হিসাবের খাতায় বেকার নন, তাঁরা কী কাজ করছেন, তার সংবাদও কি মূল্যবান নয়? ভারতে অগণন স্নাতক (এবং অ-স্নাতকও) যথাযথ কাজ না পেয়ে যা পেয়েছেন সেটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা ১৩.৪ শতাংশের মধ্যে নেই বলেই আর কোনও ভাবনা নেই? কর্মসংস্থান নিয়ে যদি সত্যই ভাবতে হয়, তা হলে প্রকৃত সর্বজনীন উন্নয়নের সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতেই তা ভাবতে হবে। কর্মপ্রার্থী নাগরিকদের সংখ্যা বা অনুপাত হিসাবে না দেখে তাঁদের দেখা দরকার উন্নয়নের যথার্থ অংশীদার হিসাবে, তাঁদের কাজ সেই অংশীদারির প্রকরণ। কিন্তু সেই বৃহত্তর ভাবনা দিয়ে তো ক্ষুদ্র রাজনীতির বাজার মাত করা যায় না। অতএব কর্মসংস্থান কত কোটি আর বেকারত্ব কত শতাংশ, সেই পাটিগণিতেই সব আলোচনার শুরু ও শেষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unemployment India Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE