Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Ukraine

সমান্তরাল

‘কনটেন্ট’ যেন কোনও ভাবেই যাচাই বা বাছাই না হয়, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের মূল সংস্থা মেটা-কে চাপ দিতেছে রাশিয়া।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

একবিংশ শতকের যুদ্ধ স্থল জল অন্তরিক্ষের সমান্তরালে আন্তর্জালও অধিকার করিয়াছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রমাণ করিয়া দিল। সারা পৃথিবী এখন গুগল ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম টুইটারে; খারকিভে এই মুহূর্তে ক্ষেপণাস্ত্রে কোন বাড়িটি ধূলিশয্যা লইল, রুশ বাহিনী কিভে কয় পা আগাইল, নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় প্রবীণা রুশ সেনাকে কোন কথায় বিদ্ধ করিলেন, প্রতিটি মুহূর্ত আন্তর্জালে ছড়াইয়া পড়িতেছে। সমাজমাধ্যমের মঞ্চগুলিতে বৈশ্বিক জনমত প্রতিফলিত হয়, তাহাতে যুধ্যমান দুইটি দেশের লাভ-লোকসানের জটিল কিন্তু জরুরি অঙ্ক নিহিত। সেই কারণেই ইউক্রেন কখনও অ্যাপল সংস্থাকে রাশিয়ার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিতে বলিতেছে, আবার তাহাদের সরকারি প্রচারমাধ্যমের শেয়ার করা ‘কনটেন্ট’ যেন কোনও ভাবেই যাচাই বা বাছাই না হয়, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের মূল সংস্থা মেটা-কে চাপ দিতেছে রাশিয়া।

সমাজমাধ্যমের বড় শক্তি, অন্যায্য যাহা কিছু রাষ্ট্র লুকাইতে বা চাপা দিতে চাহে, তাহা প্রকাশ করিতে পারা। আবার তাহার বড় দুর্বলতা: ভুলকে সর্বদা ভুল, ঠিককে ঠিক বলিয়া চিনিতে না পারা, প্রযুক্তি-চরিত্রের ফাঁক গলিয়া অসত্যকে বাহিরে যাইতে দেওয়া। ইউক্রেনে রাশিয়া যাহা করিতেছে তাহা অন্যায়, তাহার বিরুদ্ধে শুধু বিশ্বে নহে, রাশিয়াতেও বিক্ষোভ ঘনাইতেছে, সমাজমাধ্যমে মুখ খুলিয়াছেন জনপ্রিয় রুশ ব্যক্তিত্বেরা। তাহা দমাইতে পুতিন সরকারও শরণ লইয়াছে সমাজমাধ্যমেরই, এমন তথ্য প্রচার করিতেছে যাহাতে রাশিয়ার ইউক্রেন-আক্রমণ সঙ্গত বলিয়া মনে হয়। রাষ্ট্রশক্তিই ‘ট্রোল আর্মি’ তৈরি করিয়া দিতেছে, যাহাদের কাজ অষ্টপ্রহর নিয়ম করিয়া রুশ-বিরোধী যে কোনও তথ্য ও মন্তব্যকে আক্রমণ ও প্রতিহত করা। অন্য দিকে, দেশ বাঁচাইতে সাধারণ মানুষকে আন্তর্জাল ও সমাজমাধ্যমে ডাক দিয়াছে ইউক্রেন। সেনার তরফে টুইট করা হইয়াছে, নাগরিকেরা সেনাবাহিনীতে নাম লিখাইতে পারেন; ইউক্রেনের স্পেশাল ফোর্সের শেয়ার করা ভিডিয়োয় দৃশ্যমান, অস্ত্র প্রশিক্ষণ লইতেছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ইউক্রেনবাসীও ব্যক্তিগত ও সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় যুদ্ধস্থল হইতে সরাসরি সমাজমাধ্যমে দেখাইতেছেন রাশিয়ার কুকীর্তি।

সংবাদপত্র, রেডিয়ো ও টেলিভিশন একদা যুদ্ধের খবর জানাইবার প্রধান মাধ্যম ছিল— কিউবায় স্পেন-আমেরিকা যুদ্ধ হইতে শুরু করিয়া ভিয়েতনাম বা ইরাক যুদ্ধ তাহার সাক্ষ্য দিবে। উহাদের গুরুত্ব এখনও অপরিসীম, কিন্তু এই শতাব্দীতে তাহাদের সমগুরুত্ব অর্জন করিয়াছে সমাজমাধ্যমও। শুধু বিদ্যুৎবেগে ঘটমান বর্তমানে যুদ্ধ-পরিস্থিতির সংবাদ প্রচারেই নহে, তাহার মাধ্যমে জনমানসে অত্যল্প সময়ে অভূতপূর্ব প্রভাব সৃষ্টির ক্ষমতাতেই সমাজমাধ্যমের বিপুল শক্তি। ভুলিলে চলিবে না, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ যে এই কয় দিনেই শুধু ওই দুই দেশেরই নহে, সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনীতি কূটনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও যে বহুল পরিবর্তন আনিয়াছে, তাহার অনেকাংশের অনুঘটক, নিয়ামক বা বাহক সমাজমাধ্যম। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ, বিবদমান দুই দেশের সহিত তাহাদের সম্পর্কের রসায়ন, তথ্য তথা সত্যের প্রচার বা নিয়ন্ত্রণে তাহাদের নৈতিকতা ও লাভ-লোকসানের প্রশ্নটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সবই একবিংশ শতকের যুদ্ধে অন্য মাত্রা যোগ করিতেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ukraine Russia War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE