Advertisement
E-Paper

লুকোচুরি

জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃত বা অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা, কিছুই নেই, অথচ বিশেষজ্ঞরা এই সময়টিকেই বলছেন ডেঙ্গির ‘উচ্চ সংক্রমণ’ পর্যায়।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৭
চলছে লার্ভা মারার কাজ।

চলছে লার্ভা মারার কাজ।

তেলঙ্গানা তালিকার উপরের দিকে, বিহার রাজস্থান কর্নাটকও। মধ্য-অক্টোবর পর্যন্ত ভারতের রাজ্যে রাজ্যে ডেঙ্গি-আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পেশ করেছে এই রাজ্যগুলি— মহারাষ্ট্র ও কেরলও— যে তালিকায় উপরের দিকে স্থান মোটেই স্বস্তির নয়। সে কারণেই কি পশ্চিমবঙ্গের পাঠানো তথ্য থেমে গিয়েছে জুন মাসেই? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর-বর্ন ডিজ়িজ়েস কন্ট্রোল’-এর কাছে পাঠানো দেশের বহু রাজ্যের ডেঙ্গি-তথ্য যখন ‘আপডেটেড’, পশ্চিমবঙ্গ সেখানে গত চার মাসের তথ্য পাঠায়নি, স্বাভাবিক ভাবেই ঠাঁই হয়েছে তালিকার নীচের দিকে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃত বা অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা, কিছুই নেই, অথচ বিশেষজ্ঞরা এই সময়টিকেই বলছেন ডেঙ্গির ‘উচ্চ সংক্রমণ’ পর্যায়। এ দিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে জ্বলজ্বল করছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট ডেঙ্গি-আক্রান্ত প্রায় ৫০ হাজার ছুঁই-ছুঁই, গত এক সপ্তাহেই নতুন করে ডেঙ্গি হয়েছে ৫৩৯৬ জনের! মৃত্যু তালিকাও বেড়ে চলেছে, কলকাতার হাসপাতালেও, ক্রমাগত।

রাজ্য স্তরে কি এত কাল অবহেলা ছিল? শোনা যায় রাজ্য স্তরে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, কোন কোন জেলায় সংক্রমণ বেশি, কোথায় সামান্য কমছে আবার কোন কোন জেলায় বেড়ে যাচ্ছে হঠাৎ করে; এমনকি তার নিরিখে স্বাস্থ্যকর্তারা প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। তা হলে কেন্দ্রীয় স্তরে তথ্য না জানানোর কারণ কী? যে রোগের কার্যত কোনও ‘চিকিৎসা’ নেই, ‘প্রতিরোধ’ই রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ও শেষ কথা, তার সংক্রমণ ও মৃত্যুর তথ্য জানার এবং জানানোর কোনও বিকল্প নেই। তথ্যের আলোয় ডেঙ্গি মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষতা বা ব্যর্থতা নিয়ে সারা দেশের মধ্যে রাজ্যের ভাবমূর্তি কেমন দাঁড়াল তা ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না, হুহু করে ছড়িয়ে পড়া রোগকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করাই আসল কথা। আবার ডেঙ্গির তথ্য প্রচারিত হলে জনসমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে, তাতে রোগ মোকাবিলার কাজ কঠিন হবে— প্রশাসনের এই আশঙ্কাও অমূলক, কারণ রোগ-সংক্রান্ত তথ্য দিয়েই বরং জনসচেতনতা ও সতর্কতার কাজটি করা যাবে দ্রুত এবং সহজে। ভেক্টর-বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীয় সংস্থাটি বিভিন্ন রাজ্যের তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যে-রাজ্যে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে থাকে, তাঁদের পরামর্শ ও সাহায্য পেলে রাজ্য সরকারেরই রোগ মোকাবিলায় সুবিধা।

রোগ সংক্রান্ত ঠিক তথ্য না জানানোর বিষয়টি কোভিডের সময়ও দেখা গিয়েছিল— শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্য অনেক রাজ্যেও। কোভিড ছিল এক অ-ভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, ডেঙ্গি তা নয়। প্রতি বছর সে ফিরে ফিরে আসে, এবং সুদীর্ঘ পূর্ব-অভিজ্ঞতাই ডেঙ্গি প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের দিগ্‌দর্শক হওয়া উচিত। কিন্তু ২০২২-এ ডেঙ্গি লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে, কোভিডোত্তর তার চরিত্র বদলের কথাও শোনা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গির তথ্য প্রকাশে প্রশাসনের লুকোচুরি বা গড়িমসি রোগ প্রতিরোধেরই অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাজ্য সরকারকে তা অবিলম্বে বুঝতে হবে। কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি-টানাটানির মাঝে জনস্বাস্থ্য বলি হতে পারে না। বিশেষত ডেঙ্গির মতো রোগের প্রবল প্রতাপের সময়ে।

Dengue Fear dengue death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy