Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Editorial news

সুশীতল বাতাস যেন জুড়িয়ে দিল প্রাণ

ভুল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনো মাধ্যমিক পরীক্ষর্থীকে দ্রুত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পুলিশ শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত গ্রিন করিডর তৈরি করল, ওয়াটগঞ্জ থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত বাইক ছোটাল, সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন, পরীক্ষা নিয়ামকরা সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ করলেন— এমন ছবি এ শহরে আগে দেখা যায়নি।

সাইরিন ও তার বাবাকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হচ্ছে পুলিশ। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

সাইরিন ও তার বাবাকে ঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হচ্ছে পুলিশ। সোমবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০০:১৮
Share: Save:

তিক্ততা, নেতি, বিষাদ, বিরক্তি, অন্ধকারের ঘেরাটোপেও দপ করে কখনও-সখনও জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল শিখা। স্নিগ্ধ আলোর উদ্ভাসে ধরা দেয় জীবন কোনও কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে। তেমনই একটা ছবি ধরা পড়ল মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে। একরাশ সুশীতল বাতাস যেন জুড়িয়ে দিল মন-প্রাণ।

এক জনও যেন নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ না করেন অন্যদের থেকে— আদর্শ সমাজ বা রাষ্ট্রের ধারণা তেমনই হওয়া কাঙ্খিত। কিন্তু হয়ে ওঠে না সর্বদা তেমনটা। সকলের তরে সকলে আমরা হয়ে উঠতে পারি না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কিন্তু কলকাতা পুলিশ পারল, মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র পারল, পরীক্ষা নিয়ামকরা পারলেন। বিপন্ন বোধ করতে থাকা এক সাধারণ পরীক্ষার্থীকে ঘিরে পুলিশ, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরীক্ষা নিয়ামকদের যে তত্পরতা দেখা গেল কলকাতায়, সেই তত্পরতাকে আদর্শ রাষ্ট্রের বা আদর্শ সমাজের দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরা যেতে পারে অনায়াসে।

সাইরিন নাজ ভুল ঠিকানায় পৌঁছেছিল। পরীক্ষা শুরুর সামান্য আগে সে কথা জানা গেল। শহরের যে প্রান্তে তখন দাঁড়িয়ে ছিল সাইরিন, তার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তের একটি স্কুল আসলে তার পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে নির্ধারিত। পরীক্ষা দিতে পারা আর কোনও ভাবেই সম্ভব নয়— এমনটা যখন মনে হচ্ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর, যখন অঝোর ক্রন্দনে ভাসছিল মেয়ে, তখনই ঘটে গেল অভূতপূর্ব ঘটনাটা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভুল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনো মাধ্যমিক পরীক্ষর্থীকে দ্রুত নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পুলিশ শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত গ্রিন করিডর তৈরি করল, ওয়াটগঞ্জ থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত বাইক ছোটাল, সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন, পরীক্ষা নিয়ামকরা সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ করলেন— এমন ছবি এ শহরে আগে দেখা যায়নি। এ রাজ্যেও দেখা যায়নি। পুলিশ, প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই সংবেদনশীলতা, এই তত্পরতা এবং এই সমন্বয়কে শুধু ইতিবাচক বলে ক্ষান্ত হওয়া যায় না। উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে হয়।

আরও পড়ুন: ভুল কেন্দ্রে ছাত্রী, বাইকে বসিয়ে ছুটল পুলিশ

আরও পড়ুন: বকেয়া বিল মিটিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঘরে আলো আনল পুলিশ

আবার বলি, এক জনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন না ভাবেন। এক জনকেও যেন আমরা অগুরুত্বপূর্ণ না ভাবি। সহ-নাগরিকের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবকাশও যেন অবহেলিত না হয়। এই বোধ যদি জাগিয়ে তুলতে পারি নিজেদের মধ্যে, কোনও বিভাজন রেখা আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না।

যে ছবি তৈরি হল সাইরিন নাজকে ঘিরে, আপাতত তার কোনও জুড়ি নেই। যে ছবি তৈরি হল সাইরিন নাজকে ঘিরে, তা আপাতত আমাদের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE