Advertisement
E-Paper

পুরাতন রাজনীতি

অবস্থানটি বিপজ্জনক। নাগরিকত্বের চালুনিতে যদি কোনও বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষদের বাছিয়া তাঁহাদের নাগরিক অধিকার কাড়িয়া লওয়া হয়, তবে মেরুকরণের রাজনীতির লাভ হইতে পারে, অসমের লাভ নাই।

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ২৩:১৬

অ কস্মাৎ কাঁটাতারের ব্যবধান রচিত হইয়া যেখানে এক দেশ ভাঙিয়া দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়, সেখানে নাগরিকত্বের ধারণাটি কি অভিবাসনের প্রশ্নটিকে বাদ রাখিয়া নির্ধারিত হইতে পারে? ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পূর্ববঙ্গ হইতে আইনি এবং বে-আইনি পথে আগত এক বিপুল সংখ্যক মানুষের নিকট অসম-ই ভারতের স্বাভাবিক ঠিকানা। এই ‘বহিরাগত’-দের বিরুদ্ধে রাগ অহমিয়া রাজনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি। গত শতকের ষাটের দশকের আন্দোলনই হউক বা আশির দশকে আসু-র রাজনীতি, বহিরাগতদের প্রশ্নটি অহমিয়া রাজনীতির কেন্দ্রে স্থিত ছিল। রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির অনুপ্রবেশ, এবং শেষ অবধি ক্ষমতায় আসা, সেই বাঙালি বনাম অহমিয়ার প্রাদেশিক খণ্ডজাতীয়তাকে একটি সাম্প্রদায়িক মাত্রা দিয়াছে। বিজেপির সমীকরণে বাংলাদেশি (মতান্তরে, বাঙালি) মাত্রেই অনুপ্রবেশকারী নহেন— তাহার জন্য মুসলমান হইতে হইবে। বাংলাদেশি হিন্দু হইলে ‘শরণার্থী’। রাজ্যের ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশিপ’-কে এই মেরুকরণের প্রেক্ষিতে দেখাই বিধেয়। যদিও প্রকল্পটি প্রশাসনিকতার, সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারী, কিন্তু তাহার অন্তর্নিহিত প্রশ্ন রাজনীতির— অসমের বহুব্যবহৃত রাজনীতির। যাঁহারা ১৯৭১ সালের পর অসমে আসিয়াছেন, তাঁহারা নিজস্ব নাগরিকতার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ পেশ না করিতে পারিলে এনআরসি-তে ঠাঁই পাইবেন না— এবং, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, যাবতীয় নাগরিক অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন— এমন একটি অবস্থানকে রাষ্ট্রীয় সিলমোহর দেওয়ার জন্য যে রাজনীতি প্রয়োজন, তাহার শিক়ড় বহু গভীরে।

তথ্যপুঞ্জি নির্মাণ করা, নিয়মিত পরিবর্ধন-পরিমার্জনের কাজে সরকারি কর্মীদের অদক্ষতা ও অনীহা বহু-আলোচিত। অসমে যত জন এনআরসি-তে নাম তুলিতে আবেদন করিয়াছিলেন, প্রথম দফায় তাঁহাদের অর্ধেকের বেশি মানুষের নাম খাতায় উঠিয়াছে। যাঁহারা বাদ পড়িয়াছেন, অনুমান করা চলে, তাঁহাদের অনেকের নিকটই যথাযথ পরিচয়পত্র বা ঠিকানার প্রমাণ নাই। সেই না থাকার কয় আনা দায় সরকারি কর্মীদের, কয় পয়সা সেই মানুষগুলির জিনিস গুছাইয়া না রাখিবার অভ্যাসের, আর কতখানি অনুপ্রবেশকারী হইবার কারণে— সেই হিসাব কষিবে কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘অনুপ্রবেশকারী’দের যদি চিহ্নিত করাও যায়, সেই বিপুল সংখ্যক মানুষকে পাঠানো হইবে কোথায়? সর্বানন্দ সোনোয়ালরা জানাইয়াছেন, কেন্দ্র ব্যবস্থা না করা অবধি এই মানুষগুলিকে ‘মানবিকতার খাতিরে’ অসমেই থাকিতে দেওয়া হইবে, কিন্তু তাঁহাদের কোনও অধিকার থাকিবে না।

অবস্থানটি বিপজ্জনক। নাগরিকত্বের চালুনিতে যদি কোনও বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষদের বাছিয়া তাঁহাদের নাগরিক অধিকার কাড়িয়া লওয়া হয়, তবে মেরুকরণের রাজনীতির লাভ হইতে পারে, অসমের লাভ নাই। গণতন্ত্রেরও ক্ষতি। সাত দশকের ন্যায্য এবং অন্যায্য ক্ষোভে অসমের ভূমিপুত্ররা হয়তো প্রাথমিক ভাবে এই পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানে অসন্তুষ্ট হইবেন না। কিন্তু, দেশ জুড়িয়া মেরুকরণের হাওয়া বহিতেছে। এই সময়ে এনআরসি-র ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতি সতর্ক থাকাই বিধেয়। রাজনীতির তাগিদ যেন রাজধর্ম ভুলাইয়া না দেয়।

Assam NRC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy