এক বৎসরে ভারতের দু’কোটি গরিব পরিবারের হেঁশেলে গ্যাস আসিয়াছে। এই উজ্জ্বলা যোজনা উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপিকে কত ভোট আনিয়া দিয়াছে, সে প্রশ্ন উড়াইয়া দেওয়ার নহে। কিন্তু লক্ষণীয়, একটি সরকারি প্রকল্প নির্ধারিত সময় অনুসারে লক্ষ্যের দিকে চলিতেছে, এবং দরিদ্র মানুষ তাহার সুফল পাইতেছে। যে সকল পরিবার চিরকাল কাঠকুটা, গোবর-কয়লার উপর নির্ভর করিয়াছে, দূষণহীন জ্বালানি লাভ করিয়া তাহাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হইতেছে, সময়ও বাঁচিতেছে। ইহা কম কথা নহে। ২০১১ সালের গৃহস্থালি সমীক্ষাতেও দেখা গিয়াছিল, ভারতে প্রায় দু’কোটি পরিবার ঘুঁটের উপর নির্ভরশীল, বারো কোটি হেঁশেলে কাঠকুটা উনান জ্বালাইবার প্রধান উপকরণ। এলপিজি বা রান্নার গ্যাস ব্যবহৃত হইত মাত্র সাড়ে তিন কোটি পরিবারে। সেখানে এক বৎসরেরও কম সময়ে দু’কোটি দরিদ্র পরিবারে রান্নার গ্যাস পৌঁছাইয়াছে। সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য তিন বৎসরে পাঁচ কোটি দরিদ্র পরিবারে এলপিজি পৌঁছাইয়া দেওয়া। লক্ষ্য পূরণ হইলে জ্বালানি ব্যবহারের পরিচিত চিত্র বদলাইবে।
এই রাজ্যের দিকে তাকাইলে এই পরিবর্তনের গতির একটি আন্দাজ মেলে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৪৮ লক্ষ গৃহস্থালিতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ ছিল। সেখানে উজ্জ্বলা প্রকল্পের অধীনে গত এক বৎসরে পঁচিশ লক্ষ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হইয়াছে দারিদ্রসীমার নীচের গৃহস্থালিতে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মোট এলপিজি গ্রাহক এক কোটি আঠারো লক্ষ। অর্থাৎ রাজ্যের মোট দু’কোটি গৃহস্থালির অর্ধেকেরও বেশি এখন এলপিজি পাইয়াছে। আগামী দুই বৎসরে আরও পঞ্চাশ লক্ষ গৃহস্থালিতে এলপিজি পৌঁছাইবার কথা। সব মিলাইয়া একশো শতাংশ হেঁশেলে গ্যাস আসিবে, হয়তো আশা করা চলে। কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এই প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করিতে রাজ্য সরকারও উদ্যোগী হইয়াছে। যেমন গ্যাস সংযোগ পাইবার জন্য দরিদ্র পরিবারকে যে টাকা দিতে হয়, হরিয়ানায় তাহা রাজ্য সরকার দিতেছে। ফলে এক বৎসরের মধ্যে উজ্জ্বলা প্রকল্পের অধীনে আসিয়াছে সকল জেলা। এই মাসের গোড়ায় হরিয়ানা সরকার সে রাজ্যকে ‘কেরোসিন-মুক্ত’ ঘোষণা করিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এখনও অবধি রাজ্য সরকারের তেমন আগ্রহ দেখা যায় নাই। বরং কোন ডিজিট্যাল রেশন কার্ড ব্যবহার করিলে শুধু কেরোসিন মিলিবে, কোনটায় শস্য ও কেরোসিন উভয়ই মিলিবে, কর্তারা তাহা ঠিক করিতেই ব্যস্ত।
রান্নার গ্যাস সরবরাহকে মহিলা ক্ষমতায়নের একটি উপায় বলিয়া মোদী যে দাবি করিয়াছেন, তাহা যথার্থ। একবিংশের কন্যা-বধূরা কেন গোবর কুড়াইয়া, ঘুঁটে দিয়া, কয়লা ভাঙিয়া, গুল প্রস্তুত করিয়া সময় নষ্ট করিবে? কেনই বা কেরোসিনের মতো একটি অস্বাস্থ্যকর, দূষণকারী, দুর্গন্ধময় তৈল ব্যবহার করিতে বাধ্য হইবে? বিশ্বের কোন উন্নত দেশে এমন হয়? স্বচ্ছ, স্বাস্থ্যকর জ্বালানি পাইবার অধিকার দরিদ্র মেয়েদেরও রহিয়াছে। সেই লক্ষ্যে ইহার পূর্বে বায়োগ্যাস কিংবা ধূমহীন উনানের ব্যবহার চালু করিবার চেষ্টা হইয়াছিল। কিন্তু সে সব প্রকল্পে বাজনা যত বাজিয়াছে, কাজ তত হয় নাই। এলপিজির বিকল্প নাই, তাহা এত দিনে স্পষ্ট। ভারতের সকল ঘরে তাহার ব্যবহার হউক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy