Advertisement
০২ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

চাহিদা বাড়িবে কি

আসল প্রশ্ন— বেসরকারি লগ্নিতে মন্দা কি শুধু বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের অভাবেই?

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কড়া ঔষধ, তাহাতে সন্দেহ নাই। প্রশ্ন হইল, রোগটি কি যথাযথ শনাক্ত হইয়াছে? অর্থমন্ত্রী বা অন্য কেহ স্পষ্ট ভাবে বলেন নাই, কিন্তু গত দুই মাসে সরকারের বিবিধ সিদ্ধান্তে অনুমান করা সম্ভব, অর্থনীতির গতিভঙ্গের মূল কারণ হিসাবে তাঁহারা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের অভাবকেই চিহ্নিত করিয়াছেন। কর্পোরেট করের হার যতখানি কমিয়াছে, তাহাতে বিনিয়োগে লাভের পরিমাণ বাড়িবে। কাজেই, লগ্নিকারীরাও টাকা ঢালিতে উৎসাহ পাইবেন বলিয়া সরকারের আশা। গোড়ায় একটি প্রশ্ন আছে— যে সংস্থাগুলি এখনই বিভিন্ন ছাড়ের সুযোগ লয়, যে হেতু বর্তমান কর ছাড় পাইতে গেলে তাহাদের পূর্বের সুবিধা ছাড়িতে হইবে, এই ছাড়ে খুব লাভ হইবে কি? প্রশ্নটির উত্তর প্রয়োজন। তবে, নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় দফার গোড়া হইতেই বাজার অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট— সর্বত্রই উন্নয়নের বাহন হিসাবে বেসরকারি বিনিয়োগকে দেখা হইয়াছে। কর্পোরেট করের হার কমানো সেই নীতির সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক হইতে লওয়া টাকা সরকারের হাতে আছে। ফলে, প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড় দেওয়ার পরও রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ খুব না-ও বাড়িতে পারে। বেসরকারি লগ্নি বাড়িলে জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হারও বাড়িবে। এ-ক্ষণে সরকারের বড় পরীক্ষা হইল, কর ছাড় দেওয়ার ফলে রাজকোষের যতখানি ক্ষতি হইল, বর্ধিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পরিমাণ সেই ঘাটতি পূরণ করিতে পারিবে কি? বিশেষত, তেলের বাজার অস্থির হইয়াছে; আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হরেক টানাপড়েনের ফলে রফতানি ক্ষেত্রের উপরও বিশেষ ভরসা করিবার উপায় নাই। অর্থনীতির গতিবৃদ্ধি করিতে হইলে দেশের বাজারই ভরসা।

আসল প্রশ্ন— বেসরকারি লগ্নিতে মন্দা কি শুধু বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের অভাবেই? চাহিদার প্রশ্নটি এখনও অমীমাংসিতই রহিয়া গেল। কর ছাড়ের ফলে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন যদি বাড়েও, সেই পণ্য বিক্রয় হইবে, বাজারে তেমন চাহিদা আছে কি? পনেরো লক্ষ টাকার গাড়ি হইতে পাঁচ টাকার বিস্কুট, বাজারের প্রতিটি পণ্যই বলিতেছে, চাহিদা নাই। মানুষের হাতে খরচ করিবার মতো যথেষ্ট টাকা নাই। কেন নাই, তাহার কারণগুলিও স্পষ্ট। কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার তলানিতে, অসংগঠিত ক্ষেত্র এখনও নোট বাতিলের ধাক্কা সামলাইয়া উঠিতে পারে নাই। জিএসটি-র ফলে সংগঠিত ক্ষেত্রেও গুরুতর ধাক্কা লাগিয়াছিল। কর্মসংস্থান নাই, ফলে মানুষের হাতে রোজগারও নাই। এই অবস্থায় শিল্পক্ষেত্রে কর ছাড়ের উৎসাহ দিলেই অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধার হইবে কি? কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভবত এই প্রশ্নটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, পরিস্থিতিটি স্বীকার করিয়া লইলে দায় এড়াইবার আর উপায় থাকে না। কিন্তু, বালিতে মুখ গুঁজিলেও বাস্তব অপরিবর্তিত থাকে। জেদের বশে একটি ভুলের উপর আরও একটি ভুল করিবার অবকাশ তাঁহাদের জন্য ভারতীয় অর্থনীতি রাখে নাই। আর্থিক মন্দার বিপদ প্রত্যক্ষ হইতেছে। এ-ক্ষণে তাঁহারা একটি ভিন্নতর প্রশ্ন ভাবিয়া দেখিতে পারেন— নাই নাই করিয়াও ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেহাত মন্দ নহে। তবুও বাজারে চাহিদা নাই কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আছে আর্থিক বৈষম্যের পরিসংখ্যানে। ভারতে আয়ের বৈষম্য বাড়িতেছে, অর্থাৎ আর্থিক বৃদ্ধির ফলের সুষম বণ্টন হইতেছে না। বিপুলতর অংশের মানুষের হাতে টাকা নাই। এই অবস্থায় শিল্পক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা দিলেও বাজার উঠিয়া দাঁড়াইবে কি? এবং, আরও গুরুতর প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে বর্তমান নীতি অসাম্যের বিপদ কি আরও বাড়াইয়া তুলিবে না? ঔষধ প্রয়োগ করিবার সময় এই কথাগুলি ভাবিয়া দেখা বিধেয় ছিল। অর্থমন্ত্রী ভাবিয়াছেন, তাহার কোনও প্রমাণ এখনও নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Corporate Tax Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE