গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
চাকুরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ? অনুন্নত সম্প্রদায়ের উত্তরণের ন্যায্য দাবিটি কি এই ক্ষেত্রে কাণ্ডজ্ঞানের প্রশ্নকে অতিক্রম করিতে পারে? তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত মানুষের অনগ্রসরতা এক ঐতিহাসিক অবিচারের ফল। সেই ভুল সংশোধন করিয়া লওয়া আধুনিক রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক কর্তব্য। কিন্তু, সেই কর্তব্য পালিত হইবে কোন পথে? এইখানেই কাণ্ডজ্ঞানের প্রশ্ন। তাঁহাদের যোগ্য করিয়া তোলার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংরক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা— সবই করিতে হইবে। এই গুরুতর দায়িত্ব পালনের জন্য যত অর্থ প্রয়োজন, রাষ্ট্রকে ব্যয় করিতে হইবে। উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাই ভাল, কিন্তু অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা যাহাতে সেখানে প্রবেশের যোগ্য হইয়া উঠেন, তাহার জন্য রাষ্ট্রকে বহু কদম বাড়তি হাঁটিতে হইবে। ছেলেমেয়েগুলিকে কর্মজীবনের জন্য তৈরি করিয়া লইবার রাষ্ট্রীয় প্রকল্পটি যদি আন্তরিক হয়, তবে তাঁহাদের আর চাকুরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের প্রয়োজন হইবে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে তো নহেই। কারণ, পদোন্নতির প্রশ্নটি কেবল কোনও ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত উন্নতির বিষয় নয়। সরকারি চাকুরি, সংজ্ঞাগত ভাবেই, জনস্বার্থের সহিত জড়িত। সেই চাকুরিতে যিনি যত উচ্চপদে থাকিবেন, তাঁহার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর জনস্বার্থের নির্ভরশীলতাও তত বেশি হইবে। অতএব, সেই পদগুলিতে যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি হওয়া বিধেয়। অনগ্রসর শ্রেণির কর্মীরা সব উচ্চপদে আসীন হউন— তাহার তুল্য কল্যাণ ভারতীয় সমাজের আর খুব বেশি হইতে পারে না, কিন্তু তাহা সংরক্ষণের পথে নহে, যোগ্যতার পথে।
সুপ্রিম কোর্ট জানাইয়াছে, সরকারি চাকুরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ থাকিবে, কিন্তু তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত মানুষদের মধ্যে যাঁহারা আর্থিক ভাবে সচ্ছল, তাঁহাদের সেই সুবিধা দেওয়া যাইবে না। এই জরুরি বিষয়টি বিবেচনার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ। ‘অ্যাফার্মেটিভ অ্যাকশন’ বা অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক বৈষম্যের মাপকাঠি হিসাবে আর্থিক অবস্থার বিবেচনা এখন জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। প্রকৃতপক্ষে, সংরক্ষণকে একটি সুবিধা হিসাবে না দেখিয়া একটি বাহন হিসাবে দেখিলে বিষয়টি বুঝিতে সুবিধা হইতে পারে। সেই বাহনের গন্তব্য অনগ্রসরদের উন্নতি। গন্তব্যে পৌঁছাইয়া কেহ যেমন বাহনে বসিয়া থাকে না, তেমনই কোনও তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত পরিবারও একটি পূর্বনির্ধারিত উন্নয়নসীমায় পৌঁছাইলে তাঁহাদের স্বেচ্ছায় সংরক্ষণের বাহনটিকে ছাড়িয়া দেওয়া বিধেয়। বাহনে আসনসংখ্যা নির্দিষ্ট ও সীমিত। গন্তব্যে পৌঁছাইবার পর তাঁহারা জায়গা খালি করিলে তবেই না পরের যাত্রী উঠিতে পারিবেন। ব্যক্তির বদলে গোষ্ঠীর স্বার্থের মাপকাঠিতে দেখিলে তফসিলি জাতি ও জনজাতির সংরক্ষণের প্রশ্নে ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর ধারণাটিকে লইয়া আসা তাই অতি জরুরি এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই বিবেচিত হইবে।
কিন্তু, সেই আলোচনায় ঢুকিবার অবকাশ এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীরা পাইবেন কি? নির্বাচনের বৎসরে আদালতের এ হেন আদেশ তাঁহাদের রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে ফেলিবে নিশ্চিত। ইতিমধ্যেই রামবিলাস পাসোয়ান বা রামদাস আটাওয়ালের ন্যায় শরিক নেতারা প্রশ্ন তুলিতেছেন। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর কাটছাঁট হইলে সেই ক্ষোভ বিস্তৃততর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তফসিলি জাতি ও জনজাতির মধ্যে সম্পন্ন গোষ্ঠীগুলিকে বাছাইয়ের কোনও মাপকাঠিও আপাতত নাই। দলিত প্রশ্নে জর্জরিত বিজেপি এই বাড়তি বিপদটিকে কোন পথে সামলায়, তাহাই দেখিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy