Advertisement
E-Paper

আলোর নীচেই নিকষ অাঁধার, সে আঁধারে ইসরত একা

তাৎক্ষণিক তিন তালাকের অবলুপ্তি ভারতের কোটি কোটি মুসলিম নারীর জন্য নতুন যুগের সূচনা করেছে, সংশয় নেই বিন্দুমাত্র। আদালতের এই রায় চড়া আলোর নীচে থাকবে, তা অস্বাভাবিক নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৭
ইসরত জহান।ফাইল চিত্র।

ইসরত জহান।ফাইল চিত্র।

চড়া আলো পড়েছে, আলোর বৃত্তে উদ্ভাসিত সুপ্রিম কোর্টের রায়টা— তাৎক্ষণিক তিন তালাক অবৈধ। কিন্তু এই আলোকবৃত্তের ঠিক নীচেই নিকষ অন্ধকার আর সেই অন্ধকারে ইসরত জহান সম্পূর্ণ একা।

তাৎক্ষণিক তিন তালাকের অবলুপ্তি ভারতের কোটি কোটি মুসলিম নারীর জন্য নতুন যুগের সূচনা করেছে, সংশয় নেই বিন্দুমাত্র। আদালতের এই রায় চড়া আলোর নীচে থাকবে, তাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রায়ের জন্য জয়ধ্বনির পাশাপাশি, তাঁদের ঘিরেও জয়োৎসব হওয়া উচিত, যাঁরা ভারতীয় মুসলিম সমাজে নতুন প্রবাহটা আনার ক্ষেত্রে ভগীরথের ভূমিকা নিলেন। তাৎক্ষণিক তালাকের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ইসরতরা অভিনন্দন পেয়েছেন গোটা দেশ থেকেই। কিন্তু নিজের পারিবারিক পরিসরে, নিজের পারিপার্শ্বিক সামাজিক বৃত্তে ইসরত আজ ভীষণ একা, প্রায় বয়কটের শিকার, খুব অসহায়ও। যে স্বামী তালাক দিয়েছিলেন ফোনে, সেই স্বামীই দুই সন্তানকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছেন— ইসরত জহানকে এমন অভিযোগে নিয়ে আজ পুলিশের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

সবেমাত্র একটা অসম লড়াই শেষ করে উঠেছেন ইসরতরা। খুব কঠিন ছিল লড়াইটা। অজস্র নেতির শিকড়ে আটকে হাঁসফাঁস করতে থাকা এক সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, আমাদের দেশের রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, নিম্নমধ্যমিত্ত পারিবারিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যে লড়াই ইসরত জহান চালিয়েছেন দীর্ঘ সময়, তা অত্যন্ত দুরূহ এক সংগ্রাম ছিল। এ কথা ঠিক যে সংশ্লিষ্ট বর্গের একটা বড় অংশের সমর্থন তিনি পেয়েছেন। না পেলে লড়াইটাকে এত দিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত না। কিন্তু এ কথাও মানতে হবে, পরিজনদের বা ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মানুষদের থেকে মূলত বিদ্বেষ আর বৈরিতাই পেতে হয়েছে ইসরতকে।

যে প্রথার বিরুদ্ধে ইসরতরা লড়ছিলেন, মানবতা সেই প্রথাকে অনুমোদন করে না। কোরানও সেই প্রথাকে অনুমোদন করে না। তা সত্ত্বেও পুরুষতন্ত্রের কুখ্যাত শিকলের সাহারায় সমাজের গলায় চেপে বসে ছিল তিন তালাক। শিকলটাকে ছিন্ন করে মুক্তির সিংহদুয়ার খুললেন যে নারী, তাঁকে ঘিরে সংহতির বলয়টা কি আরও প্রসারিত হওয়া উচিত ছিল না? অজস্র ঝড়-ঝাপটা সামলে নিকষ অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হয়ে রইলেন এত দিন যিনি, তাঁকে কি সহস্র-লক্ষ হাতে ঘিরে রাখা উচিত ছিল না? ইসরত জহানের উপর এই দুর্যোগ আসতে দেওয়া কি আদৌ উচিত হল?

এখনও খুব দেরি হয়ে যায়নি অবশ্য। সক্রিয় হতে হবে সমাজকে, সক্রিয় হতে হবে রাষ্ট্রকেও। পরম যত্নে আগলে রাখতে হবে এই আলোকবর্তিকাকে। ভবিষ্যতের গর্ভে লালিত হওয়ার অপেক্ষায় যে সব ছোট-বড় বিপ্লব, তাদের প্রেরণা জোগানোর স্বার্থেই সমাজকে এবং রাষ্ট্রকে এই ভূমিকা নিতে হবে।

Israt Jahan Kidnap Triple talaq Newsletter Anjan Bandyopadhyay ইসরত জহান অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy