Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: ছোট্ট ও নতুন

এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর এক ধরনের গল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সেই সব কাহিনি— যা আমাদের নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। ডেভ আইসে ‘স্টোরিকর্স’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন ২০০৩ সালে।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সম্পাদকীয় ‘বাস স্টপে তিন মিনিট’ (২২-৪) প্রসঙ্গে কিছু কথা। ষাট দশকের শেষাশেষি গল্পের পরিচিত ফর্ম ভেঙে মিনিবুক ও মিনিগল্প উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়েছিল যথেষ্ট। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর এক ধরনের গল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সেই সব কাহিনি— যা আমাদের নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। ডেভ আইসে ‘স্টোরিকর্স’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন ২০০৩ সালে। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল-এ একটি বুথ তৈরি করেন তিনি, যেখানে যে কোনও মানুষ তাঁর ভিতরে জমা গল্প বা অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতা রেকর্ড করতে পারবেন। সে কাজে তাঁকে সাহায্য করবার জন্য এক জন মজুত। এ রকম অনেকগুলো বুথ এখন মার্কিন দেশে চালু। স্টোরিকর্স-এর উদ্দেশ্য, এই ধরনের মানবিক গুণসম্পন্ন গল্পগুলো ছড়িয়ে দেওয়া। এগুলো বেতারেও সম্প্রচারিত হয়। ডেভ প্রকল্পটির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। এখানে স্বামী-স্ত্রী, মা-ছেলের কথোপকথন বা সাক্ষাৎকারও আছে। নিকট সম্পর্কের মধ্যেও আমরা অনেক কিছু বলে উঠতে পারি না বা সু্যোগ পাই না, সেগুলো এখানে অনেকে বলছেন। সাহিত্যের মাপকাঠিতে এ সব অন্তরঙ্গ গল্পকথার স্থান কোথায়, জানা নেই। কিন্তু এগুলি জনপ্রিয়। আমরা বোধ হয় নতুন গল্পের যুগের দোরগোড়ায়।

শেখর বসু মল্লিক

কলকাতা-৪২

রবি ও বাংলা

পোর্ট ব্লেয়ার বিএড কলেজ বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত টেগোর গভর্নমেন্ট কলেজ অব এডুকেশন (টিজিসিই) কলেজটি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত। ঝাঁ-চকচকে বিল্ডিংটিতে জ্বলজ্বল করছে কবিগুরুর নাম। মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই রেলিং দিয়ে ঘেরা বিশ্বকবির আবক্ষ মূর্তি। আবার সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় প্রিন্সিপালের ঘরে যাওয়ার সময় দেখা যাবে কবির একটি প্রতিকৃতি। কিন্তু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই বাংলা ভাষার কোনও কোর্স। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলেজটিতে পাঁচ বছর আগে প্রশাসনের উপযুক্ত অনুমোদন সত্ত্বেও বিএড (বাংলা) কোর্স চালু হয়নি। দীর্ঘ তিন-চার দশক ধরে এই কলেজে বাংলা মেথড-সাবজেক্টের কোনও অধ্যাপক নেই। এ জন্য স্থানীয় সংবাদপত্র ও কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবী চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ পোর্ট ব্লেয়ারে বসবাসকারী সব ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সিংহভাগ (২৫.৭১%) বাঙালি।

সঞ্জীব রাহা

পাডিয়া মার্কেট, নদিয়া

অসাম্প্রদায়িক

জহর সরকারের ‘শান্তিতে বাঁচতে চাই’ (১-৪) নিবন্ধে বাঙালির যে অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল বাংলার পরম্পরাগত ঐতিহ্য। বাংলার বিভিন্ন শাসক তাঁদের রাজত্বকালে এই উদার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। গুপ্তযুগে বাংলায় বৌদ্ধধর্ম বিশেষ ভাবে প্রসার লাভ করে। আবার অধিকাংশ পালরাজা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও তাঁরা হিন্দু ধর্মেরও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁদের রাজত্বকালে মন্ত্রিত্বের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন হিন্দুরা। কোনও কোনও পালরাজা তাঁদের আচার অনুষ্ঠান পালনের আগে ব্রাহ্মণদের গো-দান করছেন, এমন ঘটনারও উল্লেখ পাওয়া যায়।

মুসলমান শাসক নবাব আলিবর্দিরও একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় বাংলার কাব্যসাহিত্যে। কবি গঙ্গারামের একটি কাব্য থেকে জানা যায়, ১৭৪২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভাস্কর পণ্ডিত কাটোয়াতে মহা ধুমধাম করে দুর্গাপুজো করেছিলেন। গঙ্গারাম লিখেছেন, ‘‘ভাস্কর করিবে পুজা বলী দিবার তরে/ ছাগ মহিষ আইসে কত হাজারে হাজারে।।’’ কিন্তু হঠাৎ এই গ্রামে হানা দিতে বর্গিরা উদ্যত হলে গ্রামবাসীরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের রক্ষা করতে রাতারাতি গঙ্গা পার হয়ে পরের সকালে ছুটে আসেন আলিবর্দি খাঁ। তাঁর সৈন্যসামন্তরা কাটোয়া থেকে কটক পর্যন্ত পিছু ধাওয়া করে বর্গিদের চিল্কা হ্রদ পার করে দিয়ে আসে। সেই দিনটি ছিল মহানবমী (২৭ সেপ্টেম্বর, ১৭৪২)। গঙ্গারাম লিখেছেন, ‘‘যেইমাত্র নবাব সাহেব তারকপুরে আইল/ ফৌজের ধমক দেইখা বরগী পিছাইল।।/ তবে বরগী পিঠ দিয়া শীঘ্র চইলা জাএ/ নবাব সাহেবের ফৌজ পিছে পিছে ধাএ।।’’

বিষ্ণুপুর থানার চকমানিকের ধর্মঠাকুরের মন্দির খুবই বিখ্যাত। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন কড়ুই পণ্ডিত। এই মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন নবাব আলিবর্দি খাঁ।

রাহুল বড়ুয়া

কলকাতা-৭৪

সেই ডাক্তারেরা

আজকাল গণমাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রের বিভিন্ন অব্যবস্থার চিত্র প্রায় নিয়মিতই চোখে পড়ে। শিউরে উঠি। ডাক্তার/নার্সিং হোমের অযৌক্তিক ফি জোগাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত রোগীর বাড়ির লোকজন। এর পর চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু তো আছেই। আবার কোথাও রোগীর পরিজনের হাতে ডাক্তারের হেনস্থা। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তারদের ফি নিয়ে অতীতের কয়েকটি প্রথা আজও বেশ অভিনব বলে মনে হয়।

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে ব্যাবিলনে, হামুরাবির রাজত্বকালে, রোগীর আর্থিক অবস্থা অনুসারে ডাক্তারদের ফি-র তারতম্য হত। চোখের একটা ফোড়া কাটার জন্য এক জন অভিজাত ব্যক্তিকে দিতে হত দশ শেকেল, সেখানে এক জন বণিককে দিতে হত পাঁচ শেকেল, এক জন দাসকে দিতে হত দুই শেকেল।

প্রাচীন মিশরীয়দের ছিল একটা অদ্ভুত পদ্ধতি। কারও অসুখ হলে, অসুখ না সারা পর্যন্ত সে চুল কাটত না। অসুখ সেরে গেলে মাথা কামিয়ে চুল ওজন করে সেই ওজনের হিসেবে ডাক্তারকে ফি দিত। বেশি ওজন হলে বেশি ফি, আর কম হলে কম। ষোড়শ শতকে টিউডর আমলের ইংল্যান্ডে শল্যচিকিৎসকরা রোগী ভাল না হলে ফি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হতেন। কখনও বা অস্ত্রোপচারের পর রোগী ভাল না হওয়া পর্যন্ত শল্যচিকিৎসককে রোগীর কাছেই থাকতে হত।

চিনে প্রাচীন যুগে, এক এক জন ডাক্তারের হাতে এক একটি গ্রামের ভার থাকত। তাঁর দায়িত্ব ছিল গ্রামের প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি লোককে নীরোগ রাখা। আর এর জন্য তিনি প্রত্যেক বাড়ি থেকে নিয়মিত ফি পেতেন। কিন্তু যখনই কোনও বাড়ির কোনও লোক অসুস্থ হয়ে পড়তেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই বাড়ি থেকে তাঁর ফি বন্ধ হয়ে যেত। এই প্রথা গ্রামীণ চিকিৎসাক্ষেত্রে হয়তো এখনও ফলপ্রসূ হতে পারে।

দেব ভট্ট

খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

খাব কী?

ভোটকর্মী হিসেবে বুথে গিয়ে আমরা যে বাস্তব সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হই, সেগুলির মধ্যে একটি হল খাবারের সমস্যা। বুথে গিয়ে ভোটকর্মীদের প্রায় দেড় দিন কাটাতে হয়। প্রশিক্ষণ পর্বে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকে, কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কোনও প্রকার খাবার, পানীয়, ভেট নেওয়া যাবে না, নিলে তা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের সামিল। ভোটকর্মীদের নিজ তত্ত্বাবধানে, সম্পূর্ণ অপরিচিত এলাকায়, ‘অরাজনৈতিক রাঁধুনি’ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। যদিও বা পাওয়া যায়, তাঁরা অধিকাংশ সময় যে টাকার দাবি করেন, তা ভীষণই অযৌক্তিক। অগত্যা তাতেই রাজি হতে হয়। ভোটের শেষে যখন ডিস্ট্রিবিউশন ও রিসিভিং সেন্টারে মাঝরাতে বা ভোরে কর্মীরা ভীষণ সংগ্রাম করে অভুক্ত অবস্থায় ভোটের যন্ত্রপাতি জমা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত, প্রায়ই চোখে পড়ে খাবারের প্যাকেট কন্টেনারে ভর্তি করে নিয়ে আসা হচ্ছে, রিসিভিংয়ের কাজে যুক্ত বা অন্য আধিকারিকদের দেওয়ার জন্যে। নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছে বিনম্র অনুরোধ, সেক্টর অফিসারদের মাধ্যমে কি বুথে বুথে ভোটকর্মীদের জন্য দু’মুঠো খাবার পৌঁছে দেওয়া এতটাই কষ্টকর? এর বিনিময়ে ভোটকর্মীদের নির্ধারিত টাকা থেকে খরচটা কেটে নিলেই হয়।

মহম্মদ মগদুম

কালিন্দি, পূর্ব মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grand Central Terminal Religion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE