Advertisement
১১ মে ২০২৪
National News

আত্মবিশ্বাস থাকা ভাল, কিন্তু আত্মবিশ্লেষণটাও জরুরি

যশবন্তকে সরাসরি আক্রমণ করা হল না ঠিকই। কিন্তু রাজনাথ সিংহ, পীযূষ গয়ালদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সমস্বরে জানাতে থাকলেন, যশবন্তের ব্যাখ্যা ভুল। যে সব অর্থনীতি পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে, ভারতীয় অর্থনীতি সেগুলিরই অন্যতম।

যশবন্ত সিংহ এবং নরেন্দ্র মোদী।ছবি:ফাইল চিত্র।

যশবন্ত সিংহ এবং নরেন্দ্র মোদী।ছবি:ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

আত্মবিশ্বাস একটি গুণ, একটি ইতিবাচক বিষয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগে অমৃতও যদি বিষবৎ হয়ে উঠতে পারে, তা হলে আত্মবিশ্বাসও তার গুণাবলী হারিয়ে ত্রুটিতে রূপান্তরিত হতে পারে। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ক্ষেত্রে তেমনই ঘটছে অনেকটা যেন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, কেন্দ্রের বর্তমান মন্ত্রিসভা ভাবে-ভঙ্গিতে আত্মবিশ্বাসী বেশ। এই রকম প্রত্যয় নিয়ে কাজ করলে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো সহজতর হয় ঠিকই। কিন্তু অতিরিক্ত প্রত্যয় ত্রুটিকে চিহ্নিত হতে দেয় না। ফলে আত্মবিশ্লেষণের অবকাশই তৈরি হয় না, ত্রুটির সংশোধনও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লির মসনদে আসীন হওয়ার পর থেকে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে বা হচ্ছে, সেটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যোজনা কমিশন তুলে দেওয়া, আচমকা নোটবন্দি, জিএসটি ব্যবস্থার তড়িঘড়ি প্রবর্তন— একের পর এক হিমালয় প্রমাণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করছে এই সরকার এবং প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েই প্রবল বিতর্ক চলছে দেশ জুড়ে। যাঁরা বিরোধী এবং যাঁরা নরেন্দ্র মোদীর সমালোচক, তাঁরা এই সব পদক্ষেপের তীব্র নিন্দায় সরব। দেশের অর্থনীতির উপর মারণ আঘাত মোদী-জেটলি জুটির এই সব সিদ্ধান্ত, বলছেন বিরোধীরা। সরকার অবশ্য যাবতীয় সমালোচনা ফুৎকারে ওড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রত্যেকটি পদক্ষেপে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সুনিশ্চিত হচ্ছে বলে সরকার দাবি করছে। কিন্তু ঠিক কী ভাবে অর্থনীতি আগের চেয়েও মজবুত হল, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, পরিসংখ্যানও নেই। নোটবন্দি-উত্তর ভারতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে বলেই বরং হিসেব মিলেছে। সরকার এবং বিজেপির তরফে এই পাথুরে প্রমাণকেও অস্বীকার করার চেষ্টা যখন প্রবল, ঠিক তখনই মুখ খুললেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। অরুণ জেটলি ভারতের অর্থনীতিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন বলে মন্তব্য করলেন তিনি। কিন্তু ঘরের ভিতর থেকে উঠে আসা সেই সমালোচনাকেও বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিতে নারাজ সরকার। যশবন্তকে সরাসরি আক্রমণ করা হল না ঠিকই। কিন্তু রাজনাথ সিংহ, পীযূষ গয়ালদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সমস্বরে জানাতে থাকলেন, যশবন্তের ব্যাখ্যা ভুল। যে সব অর্থনীতি পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে, ভারতীয় অর্থনীতি সেগুলিরই অন্যতম।

আরও পড়ুন:কেন্দ্রকে তোপ যশবন্তের

যতক্ষণ সমালোচনা বিরোধী শিবির থেকে ছিল, ততক্ষণ সে সমালোচনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল। কিন্তু সমালোচনা যখন ঘরের ভিতর থেকে, তখন কেন অবহেলা প্রশ্নগুলোকে? নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে গলদ থাকতেই পারে। প্রবীণতর কোনও নেতা সে গলদ ধরিয়ে দিতেও পারেন। সে ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা এবং গূঢ় বিশ্লেষণ জরুরি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে কোনও কাটাছেঁড়ায় যেতে প্রস্তুতই নয়। তাই যশবন্তের মতামতকে পত্রপাঠ খারিজ করে দেওয়ার উদগ্র চেষ্টা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের মধ্যে।

আত্মবিশ্বাস যতই প্রবল হোক, ক্ষণে ক্ষণে আত্মবিশ্লেষণটাও জরুরি। দুর্বলতম সরকার হোক বা সবলতম শাসক— প্রতিটা দিনের শেষে একবার আয়নার সামনে দাঁড়ানো প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। আত্মতুষ্টি এবং অতি-প্রত্যয়ে আক্রান্ত মোদী সরকারের কাছে সেই আয়নাটা নেই। যশবন্ত সিংহ নিজেই নিজের দলের জন্য সেই আয়না হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। হেলায় সে সুযোগ প্রত্যাখ্যান করলেন মোদীর মন্ত্রীরা। আত্মবিশ্লেষণের কোনও অবকাশই তৈরি হতে দিলেন না।

ঠিক পথেই এগোচ্ছেন তো নরেন্দ্র মোদী? কোথাও যে কোনও ভুল হচ্ছে না, সে বিষয়ে প্রত্যয়ী তো? যদি ভুল থেকে যায় পদক্ষেপে, বিপদের মেঘ কিন্তু গোটা দেশের আকাশেই ঘনাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE