এক ভয়ঙ্কর প্ররোচনা ভেসে এল। নিষ্ফলা যদিও। তবু উচ্চারণটা ভয়াবহই। বিচ্ছিন্নতার রাজনীতি, সঙ্কীর্ণতার রাজনীতি, রক্তপাতের রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল। ভারতীয় জাতিসত্তা আর ভারতীয় মুসলিমদের ইসলামি সত্তার মধ্যে সঙ্ঘাত উজাগর করার চেষ্টা হল।
জঙ্গি জাকির মুসার কণ্ঠস্বরে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ঝরে পড়েছে, কটাক্ষের বর্ষণ হয়েছে। ভারতীয়ত্বের প্রতি এত আনুগত্য কীসের? ইসলামের নামে ভারতীয়ত্বের ধারণাকে চুরমার করার পথ ভারতীয় মুসলিমরা বেছে নিচ্ছেন না কেন? অসীম ঘৃণার গর্ভগৃহ থেকে তুলে আনা এমন কিছু প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। অপ্রত্যাশিত অবশ্য নয় এ সব। সন্ত্রাসের ভাষা এই রকম জঘন্যই হয়। আজ জাকির মুসার কণ্ঠে স্বর খুঁজে নিয়েছে কথাগুলো। কাল তারা হাফিজ সইদ বা জাকিউর রহমান লকভি বা মাসুদ আজহার বা আবু বকর আল-বাগদাদির কণ্ঠেও স্বর খুঁজে নিতেই পারে। কিন্তু তাতে ভারতীয়ত্বের ধারণাকে যে ধাক্কা দেওয়া যাবে না, ভারতের জাতীয় সংহতিতে যে চিড় ধরানো যাবে না, সে কথাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় মুসলিমরা পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করেছেন জাকির মুসার ঘৃণার বাণী।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ এই ভারত। তুষার-ধবল তিব্বতের প্রান্ত থেকে সুনীল-সুবিশাল ভারত মহাসাগরের কূল, ঊষর থর মরু থেকে দুর্গম আরাকান অরণ্যের কিনারা— ভারতভূমির এই বিস্তীর্ণ বিস্তারে কোটি কোটি মুসলিম নাগরিক স্বাধীন-স্বাভিমানী দিনযাপন করেন হিন্দু-খ্রিস্টান-শিখ-বৌদ্ধ-জৈন-পারসিক সহনাগরিকদের সঙ্গে। জাকির মুসাকে জবাবটা সেই ভারতীয় মুসলিমরাই দিয়েছেন। রাজনীতিক থেকে ধর্মীয় নেতা, সাহিত্যিক থেকে মসজিদের ইমাম— ভারতীয় মুসলিমদের সব স্তর থেকে দ্ব্যর্থহীন নিন্দার স্বর শোনা গিয়েছে।
সন্ত্রাসবাদীরা ইসলামের স্বার্থ রক্ষাকে অশান্তি-হিংসা-বিদ্বেষের সমার্থক হিসেবে দেখাতে চায়। বিশ্ব মানবতাকে ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়ে তারা বলে, কোরানের নির্দেশ পালিত হচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দলে ভারী হওয়ার এই চেষ্টার বিপরীত তথা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও হয়। ইসলাম বিরোধী অপপ্রচারকেও তীব্র করে তোলার চেষ্টা হয় নানা শিবির থেকে। কিন্তু এই কট্টরবাদ এবং পাল্টা অপপ্রচার যেমন বাস্তব, তেমনই বাস্তব যে ভারতীয়ত্বে নিহিত অসীম শক্তিধর সংহতি, তা ভারতের মুসলিম সমাজ আরও এক বার প্রমাণ করে দিয়েছে। জাকির মুসার মতো মানুষদের কাছ থেকে ইসলামের ব্যাখ্যা নেওয়ার প্রয়োজন নেই— সমস্বরে বলেছেন ভারতীয় মুসলিমরা।
ভারত এবং ভারতীয়ত্বের ধারণাটা অবশ্যই আরও এক বার রহস্যাবৃত হয়ে ধরা দিয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের কাছে। ভারতকে যাঁরা উপলব্ধি করেননি, সে রহস্য ভেদ করা তাঁদের পক্ষে যথেষ্ট শক্তও বটে। এক বিশাল জনগোষ্ঠী এবং তার অসীম বৈচিত্র কী ভাবে এক সূত্রে গাঁথা হয়ে থাকে, কোন রহস্যের অন্তঃস্থল থেকে ভারতীয়ত্বের মূল সুরটা উত্সারিত হয়, জঙ্গিদের পক্ষে তা উপলব্ধি করা অসম্ভব। একই ভাবে অসম্ভব সাম্প্রদায়িক প্ররোচনায় ভর করে এ ভারতের সন্তানদের মধ্যে চূড়ান্ত ভাঙনের বীজ বপন করাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy