Advertisement
E-Paper

নেমেছে এক অদ্ভুত আঁধার

গ্রাম, শহর, রাজ্য, দেশ, মহাদেশ, গোলার্ধ— কোনও ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সীমানার তোয়াক্কা করে না সোশ্যাল মিডিয়ার সন্ত্রাস।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৮
চলচ্চিত্র নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ।—ছবি সংগৃহীত।

চলচ্চিত্র নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ।—ছবি সংগৃহীত।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিভিন্ন মঞ্চে সীমান্তপার সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলেন। আমাদের রাষ্ট্রনেতারা গোটা বিশ্বের সামনে সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদের বিপদ ব্যাখ্যা করেন। সীমান্তপার সন্ত্রাস নিয়ে এই উদ্বেগ অত্যন্ত সঙ্গত। অন্তত তিন দশক ধরে এক নাগাড়ে ভারত রক্তাক্ত হচ্ছে এতে। কিন্তু আরও এক সন্ত্রাস নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন হওয়ার সময় সম্ভবত এসে গিয়েছে। সে সন্ত্রাসের কোনও সীমান্ত হয় না। সে হল সোশ্যাল মিডিয়ার সন্ত্রাস।

গ্রাম, শহর, রাজ্য, দেশ, মহাদেশ, গোলার্ধ— কোনও ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সীমানার তোয়াক্কা করে না সোশ্যাল মিডিয়ার সন্ত্রাস। কোনও ইতিহাস বা বিজ্ঞান বা দর্শন বা যুক্তি বা অন্যতর কোনও পারদর্শিতার পরোয়াও করে না। অপছন্দের মত বা মতের অমিল দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রোল ব্রিগেড, দাঁত-নখ বার করে, হিংস্র আক্রমণ করে, তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করে। সেই ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতার সাম্প্রতিকতম উল্লেখযোগ্য শিকার হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ধর্মের নামে হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে বিশিষ্ট নাগরিকরা, অনুরাগ তাদের অন্যতম। সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। অনুরাগ দমেননি। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে টুইটারে ফের সরব হয়েছিলেন। এর পরের অভিঘাতটা আর সামলাতে পারলেন না অনুরাগ কশ্যপ। টুইটারে ট্রোল ব্রিগেডের হিংস্র আক্রমণের মুখে তো পড়লেনই। অসৌজন্য, অশালীনতা সীমা অতিক্রম করে গেল। তাতেই শেষ হল না। ফোনে হুমকি আসা শুরু হল। একা অনুরাগ নন, তার বাবা-মা, তার সন্তান, তার পরিজন— সকলকেই খুন করার হুমকি দেওয়া শুরু হল। প্রবল লাঞ্ছনা, অপমান, অযৌক্তিক আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়া অনুরাগ কশ্যপ টুইটার থেকে বিদায় নিলেন।

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গণপ্রহারের মত হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় না হয়ত, কিন্তু গণপ্রহারের থেকে কোনও অংশে কম নয় সোশ্যাল মিডিয়ার এই গণলাঞ্ছনা। কোনও এক ব্যক্তিকে সবাই মিলে আক্রমণ করতে করতে, অপমান করতে করতে, অশালীন ভাষায় রক্তাক্ত করতে করতে সম্পূর্ণ কোণঠাসা করে ফেলে এই ট্রোল ব্রিগেড। কোনও যুক্তি মানে না কোনও ব্যাখ্যা শুনতে চায় না, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় না, নিশ্চুপ হয়ে যেতে বাধ্য করে। গণপ্রহারের সঙ্গে এর কোনও পার্থক্য আছে কি?

আরও পড়ুন: লাগাতার হুমকি! ‘নতুন ভারতকে শুভেচ্ছা’ জানিয়ে টুইটার ছাড়লেন অনুরাগ

এই প্রবণতা কিন্তু রোধ করতেই হবে না হলে সামাজিক মাধ্যম শাপিত হয়ে পড়বে। সোশ্যাল মিডিয়া নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে সভ্যতার সামনে। এক নতুন জগৎ জন্ম নিয়েছে যেন। যে কোনও নতুন আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের মত সোশ্যাল মিডিয়াও অবশ্যই আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এখন দূর্মর গতিতে অভিশপ্ত কোনও গন্তব্যের দিকে ছুটছে যেন এই উদ্ভাবন। এই প্রবণতা ঠেকানো না গেলে সোশ্যাল মিডিয়ার ভবিষ্যৎ এক অদ্ভুত আঁধারে ডুবে যাবে।

Newsletter Anurag Kashyap Twitter BJP Narendra Modi Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy