Advertisement
E-Paper

নীরব

সুপ্রিম কোর্ট আদেশ করিয়াছে, দশ দিনের মধ্যে রাফালের দাম সংক্রান্ত নথি আদালতে জমা করিতে হইবে। আদেশটি তাৎপর্যপূর্ণ। এত বড় একটি চুক্তি, বিশেষত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যাহার গুরুত্ব বিপুল, তাহাতেও এই সর্বগ্রাসী অস্বচ্ছতা সঙ্কেত দেয়, সুশাসন হইতে এই জমানা কতখানি বিচ্যুত।

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

ম নমোহন সিংহকে তিনি ব্যঙ্গ করিয়া বলিতেন ‘মৌনমোহন’। আশা, ভদ্রতার খাতিরে কেহ তাঁহাকে নীরব মোদী নামে ডাকিতেছেন না। কিন্তু, তাঁহার নীরবতা সত্যই কর্ণবিদারী। রাফাল কাণ্ড হইতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ‘বিদ্রোহ’ বা সিবিআইয়ের কেলেঙ্কারি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ হইতে কোনও প্রসঙ্গেই একটি শব্দও শোনা যায় নাই। তিনি অবশ্য অখণ্ড মৌন পালন করিতেছেন না। তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তি উন্মোচন করিয়াই যেমন তিনি বলিলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হইয়া উঠিবার পথে আগাইয়া চলিতেছে। কী ভাবে ‘আগাইয়া চলিতেছে’, তাহা ব্যাখ্যা করিবার প্রয়োজন তিনি বোধ করেন নাই। অনুমান করা চলে, ‘এক বোতল ঠান্ডা পানীয়ের কম মূল্যে এক গিগাবাইট ডেটা’ পাইয়াই ভারত সেই পথে উল্কাগতিতে ধাবমান, আর কিছুর প্রয়োজন নাই। দুর্জনে বলিতেছে, শিনজ়ো আবের নিকট ওই তুলনাটি করিয়া প্রধানমন্ত্রী সুকৌশলে মুকেশ অম্বানীর টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার বিজ্ঞাপনও সারিয়া রাখিলেন। কিন্তু, সেই প্রসঙ্গ আপাতত থাকুক। প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ করেন নাই, তখন রাফাল কাণ্ড লইয়া তিনি কী ভাবিতেছেন, অথবা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তাদের ক্ষোভ সম্বন্ধে তাঁহার মত কী, দেশবাসী সেই কথা জানিতে চাহে। তিনি মুখ না খুলিলেও তাঁহার নীরবতা অবশ্য বাঙ্ময়। সে বলিতেছে, সাড়ে চার বৎসরের (অপ)শাসনে সব কিছু এমনই ঘাঁটিয়া গিয়াছে যে অজুহাত খাড়া করাও এখন দুষ্কর।

পাঁচ বৎসর পূর্বে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে, নরেন্দ্র মোদী দিনে-রাত্রে প্রতিশ্রুতি ফেরি করিতেন। অমিত শাহের ভাষায় বলিলে, সেগুলি মূলত ‘জুমলা’ ছিল। কিন্তু, সব জুমলাও সমান ক্ষতিকর নহে। যেমন, অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা না আসিলে মানুষ খানিক মস্করা করিতে পারে, তাহার বেশি ক্ষতি নাই। কিন্তু, ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ সুশাসন’-এর প্রতিশ্রুতিটি হেঁটমুণ্ড ঊর্ধ্বপদ হইয়া পড়িলে যে ক্ষতি হয়, তাহা ভারত প্রত্যক্ষ করিতেছে। সিবিআই হইতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, প্রতিটি কুনাট্যের পিছনেই রহিয়াছে সরকারের সর্বব্যাপী হইয়া উঠিবার, নিয়ন্ত্রণ করিবার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। দুর্জনের মতে যাঁহার প্রধানতম যোগ্যতাই ছিল নরেন্দ্র মোদীর ‘নিজের লোক’ হওয়া, সেই উর্জিত পটেলও যখন পদত্যাগ করিতে উদ্যত হন, তখন বোঝা সম্ভব, সরকার কোন মাত্রায় প্রতিষ্ঠানগুলির হাত-পা বাঁধিয়া দিয়াছে। এই বজ্রমুষ্টির সহিত ‘ন্যূনতম সরকার’-এর দূরত্ব ততখানিই, বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে আজীবন যতখানি দূরে রাখিয়াছিলেন।

‘সর্বোচ্চ সুশাসন’-এর প্রতিশ্রুতিটি আরও দূরে ছিটকাইয়া পড়িয়াছে। সুপ্রিম কোর্ট আদেশ করিয়াছে, দশ দিনের মধ্যে রাফালের দাম সংক্রান্ত নথি আদালতে জমা করিতে হইবে। আদেশটি তাৎপর্যপূর্ণ। এত বড় একটি চুক্তি, বিশেষত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যাহার গুরুত্ব বিপুল, তাহাতেও এই সর্বগ্রাসী অস্বচ্ছতা সঙ্কেত দেয়, সুশাসন হইতে এই জমানা কতখানি বিচ্যুত। এক দিকে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করিবার অদম্য ইচ্ছা, আর অন্য দিকে, দুর্জনের মতে, সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া কাহাকে বাড়তি সুবিধা করিয়া দেওয়া আর কাহারও জীবন নরক করিয়া তোলা, ইহাই এই জমানার অভিজ্ঞান হইয়া উঠিয়াছে। সিবিআই-কাণ্ডের সূত্রে যে কথাগুলি ক্রমে প্রকাশ হইতেছে, তাহাতেও ‘নিজের লোক’-এর বিচার অতি প্রকট। কিন্তু, দুর্নীতি এমন সর্বব্যাপী হইবে তাহা যদি আঁচ না-ও করা যায়, নিয়ন্ত্রণের বাসনা যে তীব্রই হইবে, তাহা কি জানা ছিল না? নাগপুরের পড়ুয়ার পক্ষে কি সত্যই ‘ন্যূনতম সরকার’-এর ব্যবস্থা করা সম্ভব? নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত উত্তর দিবেন না।

Narendra Modi Transparency
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy