এই বার বুঝি বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছিঁড়িল। রাজধানীতে কানাঘুষা, প্রধানমন্ত্রী মহিলা বিল পাশ করাইতে চাহেন। ননী বিতরণকালে তাঁহার ভাগটি না বাদ পড়িয়া যায়, তাই কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী তড়িঘ়়ড়ি চিঠি লিখিয়া মনে করাইয়াছেন, প্রস্তাবটি আদিতে তাঁহাদের। ভারতে রাজনীতির আকাশে গ্রহনক্ষত্রের বর্তমান অবস্থান মহিলা বিলের অনুকূল। এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করিয়াছিলেন রাজ্যস্তরের কিছু নেতা। লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিংহ যাদব, শরদ যাদবদের প্রবল আপত্তিতে লোকসভায় মহিলা বিল আটকাইয়া গিয়াছিল। দুই দশক ধরিয়া মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের প্রশ্নটি সুতোয় ঝুলিতেছে। এখন সেই নেতাদের প্রভাব কমিয়াছে, লোকসভায় বিজেপির নিরঙ্কুশ আধিপত্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সাংসদ থাকিবার কাল হইতে মহিলা বিলের সমর্থক, তাঁহার চৌত্রিশ জন সাংসদও পক্ষে ভোট দিবেন। কংগ্রেস, এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল এবং বামফ্রন্ট বরাবরই মহিলা বিল সমর্থন করিয়াছে। মহিলা বিলের পক্ষে ইহাই মাহেন্দ্রক্ষণ। ইতিহাস রচনা করিতে পারে সংসদের শীত অধিবেশন।
তাহাতে কি ভারতীয় মহিলাদের জীবনে বসন্ত আসিবে? সে প্রশ্ন কঠিন। মহিলা বিলের প্রধান মূল্যটি প্রতীকী। আজও মাত্র বারো শতাংশ সাংসদ মহিলা। সমাজ মহিলাদের যে ক্ষমতা দিতে অনাগ্রহী, তাহা যে রাষ্ট্র দিতে চাহে, এই সংকেত যথেষ্ট মূল্যবান। অপর একটি প্রতীকের তাৎপর্যও কম নহে। গৃহকর্ম ছাড়িয়া বাহিরে মহিলাদের যাইবার কথা নহে— এই ধারণা ভারতীয় সমাজের এক বৃহৎ অংশে এখনও শিকড় গাড়িয়া বসিয়া আছে। পঞ্চায়েতে সংরক্ষণ তাহাকে বিশেষ টলাইতে পারে নাই। কিন্তু কর্মোপলক্ষে মেয়েদের নিয়মিত দিল্লি যাইবার ধারণাটি রাষ্ট্র সমর্থন করিতেছে, ইহার তাৎপর্য কম নহে। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের পার্থক্য নাই, মহিলা সংরক্ষণ এই ইঙ্গিতটি বহন করিবে। যে দেশে কর্মরতদের মাত্র সাতাশ শতাংশ মহিলা, সে দেশে ইহার মূল্য আছে বইকী।
কিন্তু আসন সংরক্ষণের নৈতিক যুক্তি কী? বাস্তবে প্রাপ্তিই বা কী হইতে পারে? যাঁহারা অতি-দরিদ্র, বহু প্রজন্ম ধরিয়া আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার, সংরক্ষণ তাঁহাদের কাজে লাগিতেও পারে। কিন্তু কোটিপতি, প্রভাবশালী নেতার স্ত্রী-কন্যার জন্য সংরক্ষণের যৌক্তিকতা? মর্যাদা ও অধিকারের জন্য আন্দোলনরত মহিলাদের কী বার্তা দিবেন তাঁহারা? যদি সব দল বাস্তবিকই মহিলাদের ক্ষমতায়নে আগ্রহী, তবে নিজেরা অর্ধেক আসনে মহিলাদের প্রার্থী করেন না কেন? আইনি সংরক্ষণের প্রয়োজন কী? আসলে রাজনীতির দানে মহিলাদের পণ রাখিবার দীর্ঘ ঐতিহ্য ভারতের। তাহারই পুনরাবৃত্তি চলিতেছে। সনিয়া গাঁধী, দৃশ্যত, শিবসেনার সমর্থন পাইতে প্রতিভা পাটিলকে রাষ্ট্রপতি করিলে জয়ললিতা বলিয়াছিলেন, ইহা দেশের সহিত পরিহাস। এখন জল্পনা চলিতেছে, নোটবন্দির ব্যর্থতা ঢাকিতে নরেন্দ্র মোদী নারীশক্তির বোধনে ব্যস্ত হইয়াছেন। গণতন্ত্রের ইহা এক রঙ্গ। কাহার বাজির দান হইতে কাহার ভাগ্য ফিরিয়া যায়, কে বলিতে পারে? একশো বিরাশি জন মহিলা সংসদে আসিলে ষাট কোটি মহিলার জীবনে কী পরিবর্তন আসিবে, আপাতত তাহাই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy