প্রান্তবাসীর দাবি কি অবশেষে আসিতেছে রাজনীতির কেন্দ্রে? ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইবে কি না, তাহার একটি নির্ণায়ক হইয়া উঠিয়াছিল সমকামী বিবাহ সমর্থনের প্রশ্নটি। আসন হারাইয়া ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি বা ডিইউপি-র সহিত গাঁটছড়া বাঁধিতে চাহেন টেরেসা। তাহাতে স্কটল্যান্ডের কনজারভেটিভ নেত্রী রুথ ডেভিডসন আপত্তি তুলিয়াছিলেন। উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের দল ডিইউপি সমকামী বিবাহকে আইনসিদ্ধ করিবার বিরুদ্ধে অবস্থান লইয়াছে। অতীতে সমকামীদের বিষয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ওই দলের এক মন্ত্রীকে পদত্যাগও করিতে হইয়াছে। এমন একটি দলের সহিত শাসকদল গাঁটছড়া বাঁধিলে ব্রিটেনে সমকামীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ হইবে না, তাহার নিশ্চয়তা কী? রুথ স্বঘোষিত সমকামী, তাঁহার সঙ্গীকে বিবাহের সিদ্ধান্তও ঘোষণা করিয়াছেন আটত্রিশ বছর বয়সী এই নেত্রী। দল অপেক্ষা সমকামীদের অধিকার তাঁহার নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাহাও বলিয়াছেন। অবশেষে রুথ দাবি করিয়াছেন, সমকামীদের অধিকারে কোনও আঘাত আসিবে না, এমন আশ্বাস দিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ডিইউপি-র সদস্য মাত্রই দশ, সুতরাং তাঁহারা সমকামীদের অধিকার বিষয়ক আইনে খুব বড় কোনও পরিবর্তন আনিতে পারিবেন এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু এই জোটবন্ধন উপলক্ষে সমকামী তথা রূপান্তরকামী মানুষদের দাবি যে ভাবে রাজনীতির মঞ্চে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লইল, বিশ্বের রাজনীতিতে তাহার দৃষ্টান্ত খুব বেশি দেখা যায় নাই।
সমকামী বা রূপান্তরকামীদের আত্মপ্রকাশের ইতিহাস মাত্রই কয়েক দশকের। আশির দশকে এডস-বিরোধী কার্যক্রমের সহিত তাঁহাদের স্বীকৃতি পাইবার দাবিও জোরদার হইতে থাকে। তাঁহারা প্রশ্ন করেন, নর-নারীর যৌনসম্পর্কই কেবল ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া দাবি করা হইবে কেন? সহমত দুই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারী সম্পর্ক স্থাপন করিলে তাহার বিরোধিতার অধিকার কি রাষ্ট্রের রহিয়াছে? পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশে সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পাইলেও পূর্ব ইউরোপের নানা দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশে তাহা বেআইনি। প্রায় সকল দেশেই ইহার বিরোধিতায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিতেছেন সমকামীরা। ভারতে রূপান্তরকামীরা নানা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়াছেন, কয়েক জন জিতিয়াছেন।
সম্প্রতি বিশ্বের সকল প্রান্তে রাজনীতি যত দক্ষিণপন্থী, এবং কট্টর ধর্মীয় মতবাদের দিকে ঝুঁকিয়াছে, ততই সমকামীদের মর্যাদার আন্দোলন কঠোর হইয়াছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কিছু ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাইয়াছেন, যাঁহারা সমকাম-বিরোধিতার পরিচিত মুখ। ফলে ব্রিটেনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সমকামীদের সমানাধিকারে আঘাত আসিবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। বাংলাদেশে গত বৎসর কট্টরপন্থীরা খুন করিয়াছে দুই সমকামী লেখককে। ঘটনাটিকে মুক্তচিন্তার উপর আক্রমণের প্রেক্ষিতে, অর্থাৎ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবেই দেখা হইতেছে। সমকামী আন্দোলনের পথ কখনওই সহজ ছিল না, আজও কঠিন। কিন্তু তাহার দাবি ও অভিযোগগুলি রাজনীতির প্রান্ত হইতে মূলস্রোতে আসিতেছে। আশার বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy