Advertisement
E-Paper

জীবনকে নতুন করে দেখার আর এক নাম স্পর্ধা

প্রেম দমনেই নাকি প্রতিষ্ঠানের শালীনতা! সেই শালীনতার অসুখ এখন সংক্রামিত। কিছু বাঁচানো না যাক প্রেমের পথে কাঁটা দিতে পারাটা কিন্তু বেশ কৃতিত্বের! লিখছেন জিনাত রেহেনা ইসলামমনিকা জানাচ্ছেন, জীবন বরাবর সাদা কালো। তিনি দেখেছেন দুঃখ–সুখের জটিল বাঁক। তবে লক্ষ্য কখনও হাতের বাইরে যেতে দেননি। কোনও প্রতিরোধ তাঁকে কখনও কিনারা থেকে ফেরায়নি। হয় ঝাঁপিয়ে অতল দেখা, নয়তো একেবারে রাস্তা  বদলে ফেলা।

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫২

প্রেমের কি কোন সীমান্তরেখা আছে? যৌনতার কি আছে কোনও নির্দিষ্ট ওরিয়েন্টেশন? মনিকা ও মলির স্পষ্ট জবাব, ‘‘নেই। আমাদের ফ্ল্যাটে তো প্রায় প্রতিদিন ফেস্টিভ মুড। দেদার খাওয়া- দাওয়া। ক্ষণে ক্ষণে আমন্ত্রণ। বন্ধুরা দূরদূরান্ত থেকে আড্ডা দিতে আসে। যেন সব পেয়েছির আসর। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিই আমরা। প্রতিদিন আমাদের নতুন দিন। সময়ের সঙ্গে নিজেদের বাজিয়ে নিই নতুন ছন্দে। অতিথিদের মন মিশে যায় আমাদের ঘরের দেওয়ালে। হয়ত তারা খুঁজে পায় অদৃশ্য রং-তুলি। বারবার রঙিন করতে চায় নিজেদের সাহসী স্বপ্নগুলো। মুক্ত আকাশের নীল মেঘের ওপারে কী আছে তা ছুঁতে চায় মন। সকলের বিস্ময় ভরা চোখ— ‘আমরা কি পেরেছি চূড়ায় পৌঁছাতে?’ অর্থাৎ, সর্বসুখের সফর কি অব্যাহত। নাকি ছেদ পড়ছে কোথাও।’’

মনিকা জানাচ্ছেন, জীবন বরাবর সাদা কালো। তিনি দেখেছেন দুঃখ–সুখের জটিল বাঁক। তবে লক্ষ্য কখনও হাতের বাইরে যেতে দেননি। কোনও প্রতিরোধ তাঁকে কখনও কিনারা থেকে ফেরায়নি। হয় ঝাঁপিয়ে অতল দেখা, নয়তো একেবারে রাস্তা বদলে ফেলা। মিলি জানাচ্ছেন, এক ব্যক্তির জীবন পদ্ধতির নির্বাচন আর এক ব্যক্তিকে কেন আঘাত করে তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি মানুষ তাঁদের বহুমাত্রিক জীবন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন। এটা যদি থেমে যায় একটা বিন্দুতে এসে, যদি আটকে যায় আরোপিত কোনও সিস্টেমের ভারে তবে জীবনকে অন্য ভাবে দেখার ইচ্ছেয় অকালে ভাটা পড়বে। ‘জন্ম’, ‘লোকে কী বলবে’ এবং ‘মৃত্যু’— এই সহজ ফর্মুলায় বেঁচে থাকা তো দাসত্বেরও অধম। সম্পর্ক মানে সমভাবে কর্তৃত্ব করা। সেখানে অবদমন এবং আক্রোশের কোনও জায়গা নেই।

মিলি, মনিকার কথায়, ‘‘আমরা আমাদের সন্তানের জন্য উদগ্রীব থাকি। কন্যাদের জন্য যাদুনগরী খুঁজে বেড়াই। অবাক হই, দেশে চোর, খুনি, ধর্ষক প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় ও ক্ষেত্র বিশেষে সম্মানিতও হয়। তামাম দুনিয়া জুড়ে মাফিয়া-ডনদের দাপটের সামনে মানুষ নীরব। অথচ প্রেমিক-প্রেমিকাদের কিন্তু শূলে চড়াতে কেউ ভোলে না। প্রেমেও বিভাজন। ভাল প্রেম, খারাপ প্রেম, শরীরী প্রেম, নোংরা প্রেম! আসলে এ এক সমাজপতিদের বিকার। প্রেম দমন করলেই নাকি প্রতিষ্ঠানের শালীনতা থাকবে। সেই শালীনতার অসুখ এখন সংক্রামিত। কোথাও কিছু বাঁচানো না যাক প্রেমের পথে কাঁটা দিতে পারাটা বেশ কৃতিত্বের!

মিলি বলছেন, ‘‘কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, পৃথিবীর দরজা বড় ছোট। কিন্তু আমাদের চাওয়া ও সম্পর্ক এক নতুন পথ নির্মাণে সাহস জুগিয়েছে। দুই নারীর ভালবাসা সমাজে প্রায় ব্রাত্য। স্রোতের বিপরীতে হেঁটে গেলে পায়ের চিহ্নটুকু মিটিয়ে দেওয়াতেই পরম স্বাদ। বিনা প্রশ্নে অসততা সর্বত্র সমাদৃত। সম্পর্কের সততা যখন দুই মেয়ের কাহিনি, সেখানে মানুষ থমকে যায়। আজীবন যারা পণপ্রথা, ইভটিজিং, মিথ্যা দাম্পত্য নিয়ে এক বার আয়নার সামনে গোপনে ছিঃ বলার অভ্যাস করেনি, তারাও কেমন যেন সমাজের মুখিয়া হয়ে ওঠে। সালিশি করে শাস্তির জন্য।

মিলিদের দর্শন, আফসোস নেই কোথাও। জীবনের শেষে মৃত্যু নয়, ভালবাসা আছে। এই বিশ্বাসে আস্থা রেখে কখনও কেউ পরাজিত হতে পারে না। জীবনের প্রতিটা নিঃশ্বাসে প্রেমকে অনুভব করার নাম জীবন। পছন্দের মানুষের সঙ্গে পথ চলার নাম স্বপ্ন। জীবনকে নতুন করে দেখার নাম স্পর্ধা। আর স্পর্ধা ছাড়া নতুন কিছু গড়া অসম্ভব। সব নির্মাণ নিজের ইতিহাস রেখে যায় নিঃশব্দে। তার ঠিক-ভুল চুলচেরা বিচারে উত্তীর্ণ হওয়ার দায় নেই। প্রত্যাখ্যান বা মর্যাদার ভার থাকে সময়ের উপরে। অনুশাসন সংস্কারের শৃঙ্খলে শক্তি জোগায়। স্বাধীনতা যুক্তির নিঃশ্বাসে হাওয়াবদল করে। দ্বন্দ্বের অবসান তখনই। স্বপ্নের মুক্তিই জীবন।

জীবনের পরাক্রম শৃঙ্খলে মাথা ঠেকিয়ে নিজের পথ বদল! সেই চেনা রাস্তায় হেঁটে ফেরা! নিজের স্বপ্নের শব মাথায় নিয়ে একটা সময় তার ভার ভুলে যেতেই কি জীবন শেখায়? নাকি পরিণতিই শেষ কথা। জীবনের শেষে মৃত্যু। তেমন কি অচেনা স্বপ্নের মান্যতা না পেয়ে চেনা স্বপ্ন দেখার অভ্যাস রপ্ত করার নামই সুস্থ জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি? উত্তর খুঁজতে মরিয়া যাঁরা, তাঁদের জন্যই নিজেদের ফেলে আসা পথে মিলিরা উত্তর বিছিয়ে রেখেছেন— হাঁটতে পার তো এগিয়ে দেখাও! নিয়ম ও ব্যতিক্রমের ছন্দে সমাজ বয়ে চলেছে। কোহলবার্গের মতে, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিয়ম অনুসারে ঠিক এবং ভুল কী তা সকলের জানা। যদিও প্রায়ই সেগুলির ওভারল্যাপ হয়ে থাকে। তখনও এমন নিয়ম রয়েছে, যখন নিয়ম ভাঙার কাজটা সঠিক হয়। এরিকসনের মতে, আমরা সঙ্কটের মুখোমুখি হলে পাশাপাশি সমাধানের উপায়গুলি চিন্তা করি। কিন্তু নতুন কিছু নির্মাণ করতে পারি না। তাই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার ব্যর্থতা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই দরকার ভাবনার উন্মুক্ত পরিসর। চাহিদা-আকাঙ্ক্ষার ধরাবাঁধা লক্ষণরেখার বাইরে এক আকাশের খোঁজ। নিয়ম ও সঙ্কটের সামনে তৃতীয় বিকল্পের সন্ধান আর যাই হোক, সম্পর্ক নির্মাণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া কঠিন।

জর্জ চ্যাপম্যানের মতে প্রেম প্রকৃতির দ্বিতীয় সূর্য। সেই সূর্য ওঠানোর জন্য যারা হাসতে হাসতে পার করে দিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতার গা শিরশির করা ভয়, ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার কাটার হাড় হিম আতঙ্ক, এভারেস্ট ছুঁয়ে আসার প্রতিজ্ঞা তাঁদের ক’জনকে আমরা চিনতে পারি! বাস্তবে তাঁদের জন্য কোনও ট্রফি নেই। বরং আছে উগরে দেওয়া একরাশ বিরক্তি। সমাজকে মান্যতা না দিয়ে ‘স্বেচ্ছাচার’ ও গোল্লায় যাওয়ার জন্য আছে গণধিক্কার।

প্রেম তো স্বপ্নের দাসত্ব করে। স্বপ্ন বাস্তবের। কেউ স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝের দাগটা মিটিয়ে দেয়। তারা ইতিহাস স্রষ্টা। সমাজের অনুশাসন তাঁদের নিঃশ্বাসের প্রহর জেরবার করে দেয়। বেঁচে থাকার অক্সিজেন কেড়ে নেয়। তবু বাঁচে দুটি প্রাণ পরস্পরকে জড়িয়ে। প্রেম বিশ্বের তাবড় আগ্নেয়াস্ত্রের থেকে শক্তিশালী। হিংসা, ব্যাধি ও শত্রুতা মিটিয়ে দেওয়ার মহৌষধ। সেরা মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক শব্দ। পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়। যদিও সমাজের ন্যায়দণ্ড একদম টুঁটি চেপে মারতে মরিয়া প্রেমিকদের। তবু গোলাপের লাল রং ছিনিয়ে নেওয়ার কারও সাধ্য নেই! রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভ্যালেন্টাইনরা ভাসছে প্রেমের সুনামিতে। পৃথিবী নামক গ্রহে দু’হাতে রঙিন আবির লেপে দিচ্ছেন মিলি-মনিকারা।

শিক্ষক, রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল

Love Story Lesbian love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy