স্বাধীনতার সত্তর বছর কাটিয়ে এসে গণতন্ত্রের পাঠগুলোকে আবার নতুন করে নিতে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এক দল জিতবে, এক দল হারবে, এক দল ক্ষমতায় আসবে, এক দল বিদায় নেবে— এ অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর মন্ত্রিসভা গঠন করা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করাই প্রাথমিকতা হওয়া উচিত। কিন্তু গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হাঁটতে এতগুলো দশক কাটিয়ে আসার পরেও শিখতে হচ্ছে, ক্ষমতার হাতবদল হলে বর্বরতা অনুমোদন পায়, মূর্তি ভেঙে দেওয়া বৈধতা পায়, পরাজিত পক্ষের ঘর-বাড়ি-অফিসে তাণ্ডব-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ অগ্রাধিকার পায়।
ত্রিপুরায় খুব বড় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। আড়াই দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটেছে। অবসান ঘটেছে এমন এক শক্তির হাত ধরে, গত বিধানসভা নির্বাচনেও যে শক্তির প্রায় কোনও অস্তিত্বই ছিল না ত্রিপুরায়। নিঃসন্দেহে বিরাট রাজনৈতিক সাফল্য বিজেপির। ‘চলো পাল্টাই’ স্লোগানে সাড়া দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসী, পরিবর্তন এসেছে ত্রিপুরায়। সেই পরিবর্তনের ছবি হিসেবে ধরা দিতে পারত গেরুয়া মিছিল বা গেরুয়া আবিরের উৎসব বা বিজয়োল্লাস বা মিষ্টিমুখের ছবি। সে সব ছবি দেখা গেল না, তা নয়। তেমন ছবিও ধরা দিল। কিন্তু পরিবর্তনের ত্রিপুরার সবচেয়ে বড় ছবি হয়ে ধরা দিল বুলডোজার হাঁকিয়ে লেনিনের মূর্তি ভেঙে ফেলার দৃশ্য।
অত্যন্ত প্রতীকী এই ঘটনা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা কোন পথে পথে বাঁক নিতে পারে, তার আভাস দেয় এই ছবি।