গুজবে বিশ্বাস করিলে বলিতে হয়, নরেন্দ্র মোদী নাকি ভীতসন্ত্রস্ত হইয়া বিপ্লব দেবকে দিল্লিতে তলব করিয়াছিলেন। দলের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত হইবার ভয়ে নহে। মোদীর নাকি ভয়, কালক্রমে বিপ্লব না প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটি দখল করিয়া বসেন— দুর্জনের মতে, সেই আসনের অধিকারী হওয়ার জন্য অবান্তর কথা বলিয়া যাওয়া ভিন্ন দৃশ্যত আর কোনও গুণের প্রয়োজন নাই কিনা! তবে, ইহা নিতান্তই গুজব। যেমন, ইহাও নিখাদ ‘ফেক নিউজ’ যে, বিপ্লব দেব প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, মহাভারতের যুগে ইন্টারনেটই যদি না থাকে, তবে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারির ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করা গিয়াছিল কী উপায়ে? আরও একটি গুজব, প্রধানমন্ত্রী আর ত্রিপুরার নবনিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে বিপুল তর্ক হইয়াছে, পকোড়া বেচা আর গোদুগ্ধ বেচার মধ্যে কর্মসংস্থানের কোন পথটি ভারতীয় সংস্কৃতির সহিত অধিকতর সাযুজ্য বহন করে। প্রধানমন্ত্রী নাকি আর জিজ্ঞাসা করিতে ভরসা পান নাই যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে বলিবার পর শ্রীদেব ত্রিপুরার স্কুলে অঙ্ক শিখাইবার জন্য অঙ্কোলজিস্টের খোঁজ করিতেছেন কি না। তবে, এই কথাগুলিতে বিশ্বাস করিবার কারণ নাই। অনুমান করা চলে, ‘অচ্ছে দিন’ আসিবার কথা যতখানি সত্য ছিল, এই কথোপকথনও ততখানিই সত্য। বিপ্লব জানাইয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁহাকে সন্তানের ন্যায় স্নেহ করেন। সিপাহির ঘোড়ার সহিত যোগ্য পিতার পুত্রের তুলনাটি আলাপচারিতায় উঠিয়াছিল কি না, জানা যায় নাই।
প্রশ্ন হইল, বিপ্লব দেবের বাগ্বাহুল্য লইয়া কি শুধু রসিকতাই বিধেয়, না কি প্রসঙ্গটিকে আরও খানিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন? যে কথাগুলি তিনি বলিতেছেন, তাহা কি তাঁহার মুখ বলিতেছে, না কি মন, যে মনে নাগপুরের অক্ষয় আসন? সঙ্ঘ পরিবারের কুলতিলকদের বচনামৃত ছানিলে যে কাঠামোটি দৃশ্যমান হয়, বিপ্লব দেবের কথাগুলি তাহার খাপে খাপে মিলিয়া যায়। প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী ডায়না হেড্ন-এর গাত্রবর্ণ বিষয়ে তাঁহার তির্যক মন্তব্যটি দক্ষিণ ভারতীয়দের কৃষ্ণবর্ণ বিষয়ে তরুণ বিজয়ের কটাক্ষের প্রতিধ্বনি করে। নারীকে যে তাঁহার বাহ্যিক সৌন্দর্য অথবা তাহার অভাবের মাপকাঠি বই আর কিছুতেই মাপা চলে না, এই বিশ্বাসটিও আগমার্কা নাগপুর-ছাপ। বিজ্ঞানকে সনাতন ভারতীয়ত্বের সহিত জুড়িয়া দেওয়ার হাস্যকর প্রচেষ্টাটিও অতি পরিচিত। প্রাচীন ভারতে হেলিকপ্টার হইতে প্লাস্টিক সার্জারি, মোদী জমানায় চর্চা হইয়াছে সব প্রসঙ্গেই। ‘বৈদিক বিজ্ঞান’-এর খোঁজে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড চলিয়াছে। কর্মসংস্থানের প্রশ্নটিকে তাচ্ছিল্যের স্তরে নামাইয়া আনা? সে ক্ষেত্রেও বিপ্লব অগ্রপথিক নহেন। যদি নিজস্বতা দাবি করিতেই হয়, বিপ্লব দেবের হাতে থাকে শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু, সেই কৃতিত্বও কি তাঁহার প্রাপ্য? কোনও প্রসঙ্গে তিলমাত্র ধারণা না থাকিলেও মন্তব্য করিবার অভ্যাস বিজেপির অন্য নেতাদের নাই, এমন বলিলে মোদীজিও জিব কাটিবেন। বিপ্লব গৌতম বুদ্ধকে হাঁটাপথে জাপান পৌঁছাইয়া দিয়াছেন বটে, কিন্তু, হে ভারত ভুলিয়ো না, আলেকজান্ডারকে পটনায় লইয়া গিয়াছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অতএব, বিপ্লব নহেন, কথা বলিতেছে নাগপুরের শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী তাহাতে চটিবেন, ইহা গুজব বই আর কিছু হইতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy