Advertisement
E-Paper

ধূসর শহরে মিলি, মনিকার লাল-নীল সংসার

দুই নারী। সঙ্গে তিন কন্যা। অভিশাপ ও হাহাকার উপেক্ষা করে এক ছাদের নীচে দুই নারীই ঘোষণা করেছেন— ‘ভালবাসাই জীবনের শেষ কথা।’ লিখছেন জিনাত রেহেনা ইসলামদুই নারী। সঙ্গে তিন কন্যা। অভিশাপ ও হাহাকার উপেক্ষা করে এক ছাদের নীচে দুই নারীই ঘোষণা করেছেন— ‘ভালবাসাই জীবনের শেষ কথা।’

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০১

নিয়ম ভাঙে কোনও এক তৃতীয় স্বর। কান পাতলেই অস্বস্তি। অনুচ্চ কণ্ঠের ফিসফিসানিও এড়িয়ে চলা বিধান। যেখানে কেউ পা ফেলতে সাহস করে না, সেখানে পা পড়লে সেটা আর চয়েস থাকে না। চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। মিলি- মনিকার (নাম পরিবির্তিত) যাত্রা সেই চয়েস থেকে চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত।

যে রাঁধে সে শুধু চুলই বাঁধে না। মনের মানুষ কাকে নির্বাচন করবে, আর কার সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত শেয়ার করবে, তার মালিকও সে। নবনীতা দেবসেনের ‘বামাবোধিনী’ এবং ‘অভিজ্ঞান’ উপন্যাসে দুই চরিত্র একদা বেশ চর্চিত হয়েছিল। সন্তানের মা— তিনি হঠাৎ খুঁজে পেলেন কমবয়সী এক সঙ্গিনীকে। বিবাহিত পুরুষ সংসার ছেড়ে চলে গেলেন বিদেশে তাঁর পুরুষসঙ্গীর কাছে। গোটাটাই চয়েস। আগে চয়েস মেলেনি। স্রেফ তাই বোঝেনি। এমনটা হতেই পারে।

মনিকা-মিলির শুধু মনের ঘর সেজে ওঠেনি। তাঁরা ইট, কাঠ, পাথরের ঘরেও ভালবাসার মন্ত্র গুঁজে দিয়েছেন। দেওয়াল জুড়ে গ্লাস-পেইন্টিংয়ে জাহাজভর্তি ভালবাসা। ভাসতে ভাসতে নোঙর করেছে প্রেম দুই কামরার ফ্ল্যাটে। রঙিন সোফার গা ঘেঁষে ভেসে আসছে— ‘তুঝে ইয়াদ কর লিয়া হ্যায় আয়াত কি তারাহ’। ফোটোগ্রাফি আর কম্পিউটর ডিজাইনিংয়ে মোড়ানো এ এক রূপকথার নগর। মেঝেয় সিন্থেটিক আলপনা থেকে দরজার মাথায় প্রথাগত মখমলি সজ্জা। তিন কন্যের জন্য এশিয়ান কারুশিল্প ইলিউমিনেট ড্রিম ক্যাচার ঝুলন্ত ওয়াল। দিদ্যাল ড্রিম ক্যাচার্স লাল এবং কালো পালকের। বেডরুমে সান্দ্রো বত্তিচেল্লির বার্থ অব ভেনাসের ছবি। কিডস রুমে পাবলো পিকাসোর মস্ত পোস্টারে লেখা—Everything you can imagine is real। এক নতুন ভুবনের জন্ম দিয়েছেন দুই নারী। সঙ্গে তিন কন্যা। বহু লোকের অভিশাপ ও হাহাকার উপেক্ষা করে এক ছাদের তলায় মাথা তুলে দুই নারী ঘোষণা করেছেন— ভালবাসাই জীবনের শেষ কথা। প্রেমই মহৎ।

প্রায় দশ বছরের দাম্পত্য। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মা এক সন্তান নিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করলেন। বাইরে পড়ে রইল স্বামী ও পরিবার। কারণ, বাংলার বাইরের বাসিন্দা মনিকার মন ও শরীর জুড়ে বাসা বেঁধেছে অন্য নারী। মুর্শিদাবাদের মিলির দাম্পত্যজীবন ১৮ বছরের। প্রেমের টানে দুই মেয়ে নিয়ে ঘর ছাড়লেন ফটোগ্রাফার মা। তিন মেয়েকে নতুন পৃথিবী দেখাতে মিলি–মনিকার প্রাণপাত। এ বার চাকরি ছেড়ে নিজেদের ড্রিম প্রোজেক্ট শুরু। হোম ডেকো’র অ্যান্ড ইন্টেরিওর ডিজাইনিং। দু’হাতে তাঁরা স্বপ্ন বিক্রি করবেন। আর সেই কারণেই দু’জনের অবিরাম দৌড় মুম্বই থেকে মুরাদাবাদে।

এ এক অনবদ্য ‘she’ কাহিনি। জীবন কী চায়? একটুকরো ঘর, একটা সম্মানজনক জীবিকা, পরবর্তী প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত নাগরিক করে তোলা। স্বপ্নকে দমন করে মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেয় সাধারণেরা। এই সাধারণ হতেই পরিবার যুগ যুগ ধরে শিক্ষা দেয়। কেউ এক বার সাহস করে বলে না, ‘যা তুই তোর নিজের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচ।’

দীর্ঘ দশ বছরের টানাপড়েন পেরিয়ে আজ মিলি–মনিকা সব বাঁধন থেকে মুক্ত। কোথাও তাঁদের জবাবদিহি করার কোনও জায়গা নেই। কৈফিয়ত তো নয়ই। প্রেম প্রেমই। অবিবর্ণ এক বোধ। সেখানে কোনও ব্যাকরণ নেই। নইলে কি আর অন্ধ মেয়ের চোখে আলো ফুটিয়ে ফাঁসিকাঠে ঝোলার আগে পাদ্রি ভালেন্টাইন চিঠি লিখতে ভোলেন না! কী-ই বা দায় পড়েছিল সন্ত ভালেন্টাইনের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের যুবদের বিবাহ বন্ধের ঘোষণার বিরোধিতা করে মৃত্যুবরণ করার!

দুর্গাপুজোয় নিজের আবাসনে সদ্য সিঁদুর খেলে ফিরলেন মনিকা। ছবি পোস্টালেন ফেসবুকে। মিলি তখন তিন মেয়ে নিয়ে ঘর সামলাচ্ছেন। আবার মিলি যখন ব্যবসার কাজে বাইরে তখন তিন মেয়েকে মনিকা পড়াচ্ছেন। দু’জনের মধ্যে ঘর গোছানো, ব্যবসা, মেয়েদের পড়া নিয়ে অসম্ভব বোঝাপড়া। গলা মিলিয়ে তাঁরা সমস্বরে বলছেন, ‘ভালবাসা মানুষকে জয় করতে শেখায়।’

শিক্ষক, রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল

Valentine day Love Story Lesbian Love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy