Advertisement
E-Paper

সুযোগ

কেন সেই বৎসরের কথা মনে পড়িল না, যে বার ১১৯ জন মারা গিয়াছিলেন? সেই বৎসরটি ঠিক কোন বৎসর, পার্থবাবু স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই।

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০০:০০
পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই প্রশ্নটিই করিয়াছেন, যাহার আশঙ্কা ছিল। তিনি জানিতে চাহিয়াছেন, আদালতের কেন ২০১৩ সালের (পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত হিংসার) কথাই মনে প়ড়িল? কেন সেই বৎসরের কথা মনে পড়িল না, যে বার ১১৯ জন মারা গিয়াছিলেন? সেই বৎসরটি ঠিক কোন বৎসর, পার্থবাবু স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই। তবে, অনুমান করা চলে, বাম জমানার কোনও এক পঞ্চায়েত নির্বাচন। কেহ বলিতেই পারেন, কলিকাতা হাইকোর্টের মন্তব্য— এই নির্বাচনে ২০১৩ সালের নির্বাচনের ন্যায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিলে তাহার দায় রাজ্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের ও নির্বাচন কমিশনকে লইতে হইবে— এই বিপজ্জনক তুলনার পথটি খুলিয়া দিল। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও প্রশ্ন করা বিধেয়, নির্বাচনী সন্ত্রাসের কি তরতম বিবেচনা করা চলে? আজ পার্থবাবু একটি তুলনা করিয়াছেন, কাল অন্য কেহ অন্য কোনও সন্ত্রাসের উদাহরণ টানিয়া আনিতে পারেন। অথবা, আজ সারা দিন সন্ত্রাস অব্যাহত রাখা যায় শুধু এইটুকু হিসাব কষিয়া, যাহাতে মোট হতাহতের সংখ্যা ২০১৩ সালকে টপকাইয়া না যায়। কেহ অন্য একটি প্রশ্নও করিতে পারেন— ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন হইয়াছিল পাঁচ দিনে, আর এই দফায় তাহা এক দিনে হইতেছে। পাঁচ দিনের মোট সন্ত্রাসকে এক দিনে টপকাইয়া যাওয়া যাইবে না— এমন একটি ‘লক্ষ্যমাত্রা’ই সাব্যস্ত হইবে না তো? সে ক্ষেত্রে, নির্বাচনী হিংসাকে বৈধতা দেওয়ার একটি সহজ পথ খুলিয়া গেল না তো?

রাজ্যবাসী আশা করিবে, প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের নির্দেশের মূল সুরটিকেই গ্রহণ করিবেন। কোনও একটি নির্দিষ্ট বৎসরের তুলনায় নহে, আজিকার দিনটি তিনি সম্পূর্ণ সন্ত্রাসহীন রাখিতে চেষ্টা করিবেন। কাজটি বিলক্ষণ কঠিন। কতখানি, ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামরা তাহা বুঝাইয়া দিয়াছেন। এবং, আরও কতখানি কঠিন, তাহা বোঝা যায় এই তথ্যে যে সমগ্র নির্বাচনী সন্ত্রাসে একমাত্র উল্লেখযোগ্য গ্রেফতারির ঘটনা এই আরাবুলেরই। শুধু তিনিই রাস্তার মোড়ে ‘উন্নয়ন’ দাঁড় করাইয়া রাখিয়াছিলেন, বলিলে তৃণমূলের অন্য কেষ্টবিষ্টুরা মর্মাহত হইবেন। অন্যদের ক্ষেত্রে পুলিশ তৎপর হয় নাই। কেন, সেই গবেষণা নিষ্প্রয়োজন। নবান্নের সর্বোচ্চ তল হইতে নির্দেশ আসিয়াছিল কি না, খোঁজ করিবার প্রয়োজন নাই। এই রাজ্যের পুলিশ, যেমন সে কালে, তেমন এ কালেও, সচরাচর শাসক দলের বাহুবলীদের ছুঁইতে সাহস করে না। এবং, আজ নির্বাচনের দিনটিকে হিংসামুক্ত রাখিবার পথে তাহাই বৃহত্তম বাধা। এই বাধা দূর করিবার সাধ্য একা মুখ্যমন্ত্রীরই আছে। রাজনৈতিক রং বিচার না করিয়াই সন্ত্রাস প্রতিহত করিতে হইবে, তিনি এই নির্দেশ দিলে হিংসার ছবিতে তাহার প্রভাব পড়িবে না, পুলিশ নড়িয়া বসিবে না— এমন দাবি তাঁহার চরম বিরোধীও সম্ভবত করিবেন না। তিনি চাহিলে আরাবুলরা গ্রেফতার হইবেন, কেষ্টরা সংযত।

কিন্তু সেই নির্দেশটি দিতে চাহিলে তাঁহাকে রাজধর্মে ফিরিতে হইবে। ভুলিতে হইবে যে তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মহানেত্রী। স্মরণ করিতে হইবে, তিনি গোটা রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসক। রাজ্যের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁহার, রাজনৈতিক মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব তাঁহার, রাজ্যে গণতন্ত্রের পরিসরটি রক্ষা করিবার দায়িত্ব তাঁহার। তাঁহার চক্ষে কাহারও কোনও রং থাকিতে পারে না। কে সিপিআইএম, কে বিজেপি, সেই ভেদবিচার তাঁহার জন্য নহে। যত ক্ষণ অবধি কোনও মানুষ আইন না ভাঙিতেছেন, তিনি তাঁহার রক্ষাকর্তা। ইহাই রাজধর্ম। সেই ধর্ম পালনে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। অঙ্গীকারের মর্যাদা রক্ষার উপায় একটিই: তাহা কাজে পালন করা। আজ তাহার সুবর্ণসুযোগ। মুখ্যমন্ত্রী সেই সুযোগ লইবেন কি?

Panchayat Election 2018 Violence Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy