সংশয়প্রবণতা বা সন্দেহের বাতিক কোনও ইতিবাচক বিষয় নয়। কিন্তু খেলাচ্ছলে ষড়যন্ত্রের শিকার আমরা হয়ে যাচ্ছি কি না, এই প্রশ্ন যখন সামনে আসে, তখন সংশপ্রবণ হতে বয় বৈ কি! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা এক ‘চ্যালেঞ্জ’ নাকি আসলে এক গভীর চক্রান্তের মনোরম মুখোশ। এই তত্ত্বের অবতারণা হওয়ার পরে চোখে সংশয়ের চশমাটা পরে নিতেই হচ্ছে। সতর্ক থাকার জন্যই একটু সংশয়প্রবণ হওয়া দরকার এ বার।
হ্যাশট্যাগ টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ— এই শব্দবন্ধ সোশ্যাল মিডিয়ার বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত হয়ে উঠেছে সম্প্রতি। দশ বছর আগে কেমন দেখতে ছিল আপনাকে বা আমাকে, আর এখন কেমন দেখতে হয়েছি আমি বা আপনি, সোশ্যাল মিডিয়ায় জোড়া-ছবি পোস্ট করে তা দেখিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্তের নামই হ্যাশট্যাগ টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ। আমরা অনেকেই সোল্লাসে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। দশ বছর আগের মুখ আর এখনের মুখের ছবি পাশাপাশি পোস্ট করে আমাদের পরিবর্তনের বা অপরিবর্তনের তুল্যমূল্য আখ্যান জগতের সামনে অকপটে প্রকাশ করেছি। অকপট না হওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে বলে আমাদের অধিকাংশেরই মনে হয়েছিল। এই ‘চ্যালেঞ্জ’কে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের একটা নির্মল খেলা হিসেবেই সম্ভবত ধরে নিয়েছিলাম আমরা অধিকাংশই। কিন্তু আচমকা শোনা যাচ্ছে যে, যতটা অকপট আমরা ভাবছিলাম খেলাটাকে, ততটা অকপট না-ও হতে পারে বিষয়টা।
এক মার্কিন লেখক তথা সাইবার বিশেষজ্ঞ সংশয়টা প্রকাশ করেছেন প্রথম, একটা চক্রান্তের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। খেলাচ্ছলে আসলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য ভরে নেওয়া হচ্ছে এক রহস্যময় তথ্যভাণ্ডারে— এমনই একটা আশঙ্কার কথা ওই মার্কিন লেখক সামনে এনেছেন। কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর দশ বছর আগের মুখের চেহারা আর এখনকার মুখের চেহারা তুলনা করে বয়সের সাথে সাথে মুখের গঠন বদলের প্রবণতা সংক্রান্ত তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে ‘চ্যালেঞ্জ’এর আড়ালে, এমনটাই মনে করছেন সর্বাগ্রে ওই মার্কিন লেখক। তাঁর আশঙ্কা নেহাত অমূলক না-ও হতে পারে বলে অন্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
মুখচ্ছবি বদলের ছবি সংগ্রহ করে কারও কী লাভ? আর তাতে কারই বা ক্ষতি এবং কী ভাবে ক্ষতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাশট্যাগ টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ-এর নামে সংগৃহীত বিপুল তথ্যের খনিকে ব্যবহার করে মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মুখাবয়ব পাল্টানোর প্রবণতাকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং মুখ চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তিকে গোপনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কোনও প্রযুক্তির উন্নতির স্বার্থে বা কোনও উদ্ভাবনের স্বার্থে যদি আমাদের মুখোচ্ছবি ব্যবহৃত হয় তা হলে ক্ষতি কী? যদি সরাসরি এ কথা ঘোষণা করা হত যে, কোনও এক বিশেষ প্রযুক্তির বিকাশের স্বার্থে এই ভাবে তথ্যভাণ্ডার সমন্বিত করা হচ্ছে, তা হলে সন্দিহান হওয়ার কিছু থাকত না। কিন্তু ‘চ্যালেঞ্জ’এর নামে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে যে আশঙ্কা সামনে এল, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য আসলে চুরি যাচ্ছে। মহৎ উদ্দেশ্য থাকলে এইরকম চৌর্যবৃত্তির প্রয়োজন পড়ে না।
আরও পড়ুন: #টেনইয়ারচ্যালেঞ্জ: নিছক নির্দোষ খেলা না পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সংশয়
তথ্য যদি সত্যিই কোনও এক রহস্যময় সিন্দুকে জমা হতে থাকে, তা হলে সে তথ্য কী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজে লাগানো হবে তা আমাদের কারও জানা নেই। যাঁদের হাতে ওই তথ্য শেষ পর্যন্ত পৌঁছবে বা তুলে দেওয়া হবে, তাঁরা কী প্রকৃতির লোকজন, তা-ও আমাদের জানা নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যে ফাঁস হয়েছে এবং অসদুদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হয়েছে, এমন অভিযোগ আগেও সামনে এসেছে। ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জ়াকারবার্গকে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহিও করতে হয়েছে। অতএব সবটাই অকপট, নির্মল এক খেলা— এইরকম ভেবে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার অবকাশ নেই। একটু সন্দিহান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy