Advertisement
E-Paper

প্রহারেণ

শিবুর তিন জন্মের তিন স্ত্রী এবং নৃত্যকালীর তিন জন্মের তিন স্বামী— এই ডবল ত্র্যহস্পর্শযোগে ভূশণ্ডির মাঠে যে যুগপৎ জলস্তম্ভ, দাবানল ও ভূমিকম্প শুরু হইয়াছিল, তাহার উৎস সন্ধান করিলে একটি সমাপতনে পৌঁছানো সম্ভব।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০০:৪৯

শিবুর তিন জন্মের তিন স্ত্রী এবং নৃত্যকালীর তিন জন্মের তিন স্বামী— এই ডবল ত্র্যহস্পর্শযোগে ভূশণ্ডির মাঠে যে যুগপৎ জলস্তম্ভ, দাবানল ও ভূমিকম্প শুরু হইয়াছিল, তাহার উৎস সন্ধান করিলে একটি সমাপতনে পৌঁছানো সম্ভব। শিবু, কারিয়া পিরেত এবং নাদু মল্লিক— প্রত্যেকেই পত্নীর হাতে যারপরনাই নাকাল হইয়া তবে প্রেতলোকে পৌঁছাইয়াছিল। নাদু মল্লিক যদি চ্যালাকাঠ দ্বারা প্রহৃত হইয়া থাকে, শিবুর পিঠেও ঝাঁটা স্পর্শ করিয়াছিল। রাজশেখর বসু যদি রাজি না-ও হন, পরশুরাম বিলক্ষণ সাক্ষ্য দিবেন যে স্ত্রীর হাতে উত্তমমধ্যম খাওয়া বহু পুরুষেরই অদৃষ্ট। কাজেই, নববধূদের হাতে মুগুর তুলিয়া দিয়া মধ্যপ্রদেশের পঞ্চায়েতি রাজ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপাল ভার্গব ইতিহাস রচনার দাবি করিতে পারিবেন না। তবে, যে কারণে শিবু বা নাদু মল্লিকরা মার খাইত, মন্ত্রিবরের অস্ত্রদানের প্রেক্ষিত তাহার তুলনায় গুরুতর। মদ্যপ স্বামী স্ত্রীর গায়ে হাত তুলিলে তাঁহাদের পাল্টা মার দেওয়ার প্রেরণা দিয়াছেন ভার্গব। আশ্বাস দিয়াছেন, পুলিশ কিছু বলিবে না। গার্হস্থ্য হিংসার জবাবে পাল্টা হিংসাকে যদি রাষ্ট্রই স্বীকৃতি দিয়া বসে, তবে সমাজটিকে আর ‘সভ্য’ বলা চলে কি না, সেই প্রশ্ন থাকিবে। কিন্তু, মদ্যপান যে কত বড় সামাজিক সমস্যা, তাহা অনুমান করা চলে— কোনও রাজ্যে মদ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় তো কোথাও মন্ত্রী লাঠৌষধির নিদান দেন। বস্তুত, গৃহবধূদের ভোট টানিতে মদ্যপান বন্ধ করিবার প্রতিশ্রুতি ইদানীং নেতাদের হাতে একটি অস্ত্রে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু, সত্যই কি সমস্যাটির তীব্রতা হ্রাসের কোনও পন্থা রাষ্ট্রের হাতে আছে?

কেরলের উদাহরণ বলিবে, শিক্ষার প্রসারের সহিত সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মদ্যপানের প্রবণতা কমিবে, এই আশাবাদটি অলীক। মাথাপিছু আয়ের অঙ্কের সহিত মদ্যপানের প্রবণতাকে মিলাইতে বসিলেও ঝাড়খণ্ডের সহিত অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলঙ্গানার বিবাদ বাধিবে। ভৌগোলিক অবস্থান, রাজনৈতিক প্রবণতা— কোনও হিসাবেই মদ্যপানের বাহুল্যকে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। তাহা হইলে, মদ্যপান নিবারণের উপায় মিলিবে কোন পথে? পড়িয়া থাকে দুইটি অস্ত্র। প্রথমটি নীতীশ কুমারের, দ্বিতীয়টি গোপাল ভার্গবের। দুইটি অস্ত্রের একটিও উদারপন্থী দর্শনের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হইবে না, কারণ দ্বিতীয়টির মধ্যে আছে প্রত্যক্ষ (পাল্টা) হিংস্রতা, আর প্রথমটি চয়নের অধিকারের পরিপন্থী। নিতান্ত যদি বাছিতেই হয়, তবে প্রথমটিকে বাছিয়া লওয়াই বিধেয়। কারণ, মদ্যপানের অতিক্রিয়া মদ্যপের পরিবার এবং বৃহত্তর অর্থে সমাজের উপর এমনই প্রবল যে সেই চয়নের অধিকার খর্ব করিবার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের থাকিতে পারে। বলা যাইতে পারে, মদ্যপানের সিদ্ধান্তটি অপরিণামদর্শী— নিজের সর্বাপেক্ষা মঙ্গলের কথা চিন্তা করিবার মতো মানসিক স্বচ্ছতা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির থাকে না। লাঠৌষধিকে এহেন যুক্তির ভিতে প্রতিষ্ঠা করাও মুশকিল। এবং, তাহার একটি ব্যবহারিক সমস্যা— স্ত্রী যদি মরিয়া হইয়া মদ্যপ স্বামীকে প্রহার করেও, তাহার প্রত্যাঘাত কঠিনতর হইবার সম্ভাবনা বিপুল। স্বামীর তরফে, সমাজের তরফেও। তাহাতে স্ত্রীর সমস্যা বাড়িবে বই কমিবে না। সব ফয়সলা যেহেতু ভূশণ্ডির মাঠে হয় না, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা কু়ড়াইবার খেলাতেও সাবধান হওয়াই ভাল।

alcohol Patriarchal rule
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy