Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাজার বনাম দেড়শো

ভারতে বিজ্ঞান-স্নাতকদের এক শতাংশও গবেষণার পথে হাঁটেন নাই। ইহা দেশের সংকট। অর্থনীতি এখন জ্ঞান-নির্ভর, প্রযুক্তির উন্নতির সহিত দেশের উন্নয়নের সংযোগ নিবিড়। এই কারণেই উন্নত দেশগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় যথাসাধ্য বিনিয়োগ করে। চিন এ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত।

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের অবস্থান কোথায়? একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ, স্নাতক ডিগ্রির সংখ্যায় ভারত শীর্ষে। প্রতি বৎসর চিন (১৭.৫ লক্ষ) কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (৭.৫ লক্ষ) অপেক্ষা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অধিক স্নাতক ডিগ্রি দেয় ভারত (উনিশ লক্ষ)। কিন্তু ডক্টরেট ডিগ্রির ক্ষেত্রে চিত্রটি ঠিক বিপরীত। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সর্বাধিক ডক্টরেট প্রদান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (চল্লিশ হাজার), তাহার পর চিন (চৌত্রিশ হাজার) এবং শেষে ভারত (তেরো হাজার)। ভারতে বিজ্ঞান-স্নাতকদের এক শতাংশও গবেষণার পথে হাঁটেন নাই। ইহা দেশের সংকট। অর্থনীতি এখন জ্ঞান-নির্ভর, প্রযুক্তির উন্নতির সহিত দেশের উন্নয়নের সংযোগ নিবিড়। এই কারণেই উন্নত দেশগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় যথাসাধ্য বিনিয়োগ করে। চিন এ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বৎসর বিজ্ঞানের গবেষণায় আঠারো শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াইয়াছে চিন, আমেরিকা বৎসরে চার শতাংশ হারে বিনিয়োগ বাড়াইয়াছে। চিন তাহার জাতীয় উৎপাদনের দুই শতাংশ খরচ করে বিজ্ঞানের গবেষণায়, ভারতের বরাদ্দ তাহার জিডিপি-র এক শতাংশও নহে। চিনা অর্থনীতি এতই বৃহৎ, যে বিজ্ঞানের উন্নতিতে চিনের বিনিয়োগ এখন আমেরিকার দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছাইয়াছে। হয়তো অচিরেই তাহাকেও ছাড়াইবে।

এই বৎসর প্রথম আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্রের সংখ্যায় চিন ছাড়াইয়া গিয়াছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। চিন ও যুক্তরাষ্ট্র বৎসরে চার লক্ষ বিজ্ঞানের গবেষণা প্রকাশ করে, ভারত এক লক্ষের কিছু অধিক। গোটা বিশ্বে বিজ্ঞান গবেষণায় যত ব্যয় হয়, চিন খরচ করে তাহার কুড়ি শতাংশ, ভারতের ব্যয় সাড়ে তিন শতাংশ। সুলভ শ্রম কাজে লাগাইয়া উৎপাদন চিনকে আর্থিক বৃদ্ধি দিয়াছে, কিন্তু তাহাতে যে দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি আসিবার কথা নয়। উৎপাদন হইতে পরিষেবা, পরিষেবা হইতে উচ্চ প্রযুক্তির উৎপাদনে উত্তীর্ণ হইবার জন্য চিন কোমর বাঁধিয়াছে। তুলনায় ভারত এখনও পশ্চিম হইতে প্রযুক্তি আমদানি করিয়া, তাহার সাহায্যে বাজারের চাহিদা মিটাইবার পথে হাঁটিতেছে। গত বৎসর প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২২ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বে বিজ্ঞানের শীর্ষে স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাজেটে বিজ্ঞানের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াইয়াছিলেন ছয় শতাংশ। এমন আশাহত হইতে অভ্যস্ত বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গবেষণায় বরাদ্দ, গবেষকদের বৃত্তির জন্য অনুদান যথেষ্ট না হইবার জন্য চিনে প্রতি দশ লক্ষ মানুষে গবেষকের সংখ্যা এক হাজারেরও অধিক, ভারতে দেড়শোও নহে।

এই দুর্বলতার মূল প্রোথিত ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে। নূতন জ্ঞান, অপ্রচলিত চিন্তা, ব্যতিক্রমী গবেষণার সহিত আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কোনও সম্পর্কই যেন নাই। মুখস্থ বিদ্যা, ছাঁচে-ঢালা পঠন-পাঠন, ছকে-বাঁধা পরীক্ষার বৈচিত্রহীন ঘানি ঠেলিতেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এ দেশে হাতে-গোনা কয়েকটি গবেষণা-প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের, অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান মাঝারি মানের, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শুধুমাত্র ডিগ্রির কারখানা। শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য গবেষণাপত্র প্রকাশের শর্ত ভারতে বিকৃত হইয়াছে, নিম্নমানের প্রকাশনায় হাস্যকর ‘গবেষণাপত্র’ আবর্জনা বাড়াইতেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE