Advertisement
E-Paper

‘রঙ্গমঞ্চ’ ক্রমশ জমজমাট হচ্ছে

কোনও ছায়াছবির টানটান চিত্রনাট্য যেন। আসামিকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু ফাঁক গলে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষে রেখেছে আসামি। তার পর শুরু ধুন্ধুমার।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
কাঁথির কুখ্যাত আসামি কর্ণ বেরা। ফাইল চিত্র

কাঁথির কুখ্যাত আসামি কর্ণ বেরা। ফাইল চিত্র

নবরসের সবক’টিই দেখা গেল কি না, তা নিয়ে ঈষৎ তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে কর্ণ বেরা নামে এক আসামিকে ঘিরে যে চিত্রনাট্য তৈরি হল, তা দেখে আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, অদূর ভবিষ্যতেই এ বাংলার প্রশাসনিক রঙ্গমঞ্চে নবরসের অসামান্য সমাহার দেখতে পাব।

কোনও ছায়াছবির টানটান চিত্রনাট্য যেন। আসামিকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু ফাঁক গলে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষে রেখেছে আসামি। তার পর শুরু ধুন্ধুমার। কখনও বোমা-বন্দুক নিয়ে দাপাদাপি দেখে মনে হয় রৌদ্ররস। কখনও হুমকি-শাসানি শুনে মনে হয় বীভৎসরস। কখনও পলায়নোদ্যত দুষ্কৃতীদলের বাইক-বিভ্রাট দেখে মনে হয় হাস্যরস। আবার কখনও সশস্ত্র দুষ্কৃতীর প্রতি পুলিশের চ্যালেঞ্জ বা অন্তিম সাফল্যের দিকে তাকিয়ে মনে হয় বীররস।

কর্ণ বেরা কাণ্ড নিয়ে কলরব বেশ ভালই হল। কিন্তু আসলে এই গোটা পর্বের গর্ভে রয়েছে একরাশ শূন্যতা। আইন-শৃঙ্খলা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কতটা শূন্যগর্ভ হলে এই রকম একটা দৃশ্যপট তৈরি হতে পারে, তা ভাবলে বিস্মিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। পুলিশের হাত ছাড়িয়ে আসামি পালাচ্ছে, বোমা-বন্দুকের আতঙ্কে সাধারণ জনতা এলাকা ফাঁকা করে পালাচ্ছে, পুলিশ আসামিদের ধাওয়া করছে, তিন দুষ্কৃতী পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে, দুষ্কৃতীদের ‘সর্দার’ অবশ্য ধরা পড়ে যাচ্ছে— কাঁথিতে অনেকটা এরকমই ঘটল। পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালানোর জন্য যে বাইকটি ছিনতাই করা হয়েছিল, সেটি মাঝপথে বিগড়ে না গেলে পুলিশ আদৌ একজনকেও ধরতে পারত কি না, তা নিয়ে বিস্তর সংশয় রয়েছে। অতএব কাঁথি শহরের রাস্তাঘাটকে মঞ্চে পরিণত করে যে নাটক পরিবেশিত হল, আজ মনে হতে পারে, সে নাট্যরঙ্গের ‘নায়ক’ হলেন কর্ণ বেরা। কিন্তু অনাগত ভবিষ্যতে ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, এই আখ্যানের নায়ক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র কর্ণ বেরা নন। আসল ‘নায়ক’ বা কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন যবনিকার আড়ালে থাকা অন্য কেউ।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

একের পর এক বিপর্যয় আর হাস্যকর কাণ্ড ঘটে চলেছে। কোথাও সেতু ভেঙে পড়ছে, কোথাও বাজার বা হাসপাতাল পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, কোথাও বিস্ফোরণ ঘটছে, কোথাও পুলিশ টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে, কোথাও বলিউডি ছবির চিত্রনাট্যকে লজ্জা পাইয়ে দিয়ে পুলিশের হাত ছাড়িয়ে আসামি দৌড়চ্ছে। এক দিকে প্রশাসনিক অব্যবস্থার লক্ষণ, অন্যদিকে প্রশাসনকে ঠুঁটো করে দেওয়ার কুফলের আভাস।

আরও পড়ুন: ‘বিগড়ানো বাইকই ধরিয়ে দিল...’ হাজতে আফসোস কর্ণের

আমাদের প্রশাসনিক কর্তারা বা নিয়ন্ত্রকরা এ বারও কি বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করবেন না? এক দিকে হাস্যকর অপদার্থতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে প্রশাসন। অন্য দিকে ক্ষমতাশালীর দাসানুদাস হওয়ার বাধ্যবাধকতায় যৎসামান্য দাঁত-নখগুলোও হারাতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এতটা দেখেও যদি সামলে চলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা না যায়, তা হলে অচিরেই আরও সরস হয়ে উঠবে ‘রঙ্গমঞ্চ’।

Newsletter Crime Contai Karna Bera Prisoner Escape Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্ণ বেরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy