Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Karna Bera

‘বিগড়ানো বাইকই ধরিয়ে দিল...’ হাজতে আফসোস কর্ণের

পোস্ট অফিস মোড়ে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে...

কাঁথি আদালত চত্বর থেকে তিন শাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে চেপে পালানোর চেষ্টা করছিলেন দাগী আসামি কর্ণ বেরা।

কাঁথি আদালত চত্বর থেকে তিন শাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে চেপে পালানোর চেষ্টা করছিলেন দাগী আসামি কর্ণ বেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩৯
Share: Save:

ছিনতাই করা বাইকটা মোক্ষম সময়ে না বিগড়ালে এ যাত্রাও পুলিশের হাত ছাড়িয়ে পগার পার হয়ে যেত কাঁথির কুখ্যাত আসামি কর্ণ বেরা।

বৃহস্পতিবার পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা-গুলি ছুড়তে ছুড়তে আদালত চত্বরের ঠিক বাইরে বেরিয়ে আসে কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ, সুরজিৎ গুড়িয়া এবং শেখ মুন্না। পালানোর সময় কোর্ট চত্বরেই ধরা পড়ে গিয়েছে তাদের আর এক সঙ্গী রতিকান্ত মণ্ডল।

আদালত চত্বরের বাইরে তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে কর্ণর দুই চেলা যারা এসেছিল কর্ণকে ছাড়াতে। তাদের এক জনের হাতে পিস্তল, অন্য জনের দুই হাতে বোমা। আদালতের সরু গলি পেরিয়ে ওরা সকলেই জমা হয় পোস্ট অফিস মোড়ে। সেখানেই উল্টো দিক থেকে বাইকে করে আসছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁকে পিস্তল দেখিয়ে বাইক থেকে নামিয়ে দেয় কর্ণের দুই চেলা। কর্ণ এর মধ্যেই এক শাগরেদের কাছ থেকে বোমার ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়।

কী ভাবে পালাচ্ছিলেন কর্ণ বেরা? দেখুন ভিডিয়ো

আরও পড়ুন

ঘণ্টাখানেকের রুদ্ধশ্বাস নাটক, কাঁথি আদালত চত্বর থেকে পালাল আসামি, গুলি করে ফের পাকড়াও

পোস্ট অফিস মোড়ে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঠিক বারোটা পাঁচ মিনিটে লোকজন সন্ত্রস্ত হয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। অর্থাৎ আদালতের গলিতে বোমা-গুলি শুরু হয়ে গিয়েছে। তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে কাঁথি শহরের ব্যস্ত পোস্ট অফিস মোড় শুনসান। ভয়ে লোকজন আশপাশের রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন। তার পরেই দেখা যায়, সাদা জামা পরে বাঁ হাতে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে ধীরেসুস্থে মোড়ের দিকে এগিয়ে আসছে কর্ণ বেরা। ডান হাতে বোমা। কর্ণকে দেখেই ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছেন পথচলতি মানুষ। কর্ণ হাতে বোমা নিয়ে শাসাচ্ছে লোকজনকে যাতে কেউ না এগোয়।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যেই নীল ট্রাউজার্স পরা কর্ণের এক চেলা একটা বাইক ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে আসছে। অন্য দুই সঙ্গীও এগিয়ে এসেছে। এক জনের দুই হাতে বোমা, অন্য জনের হাতে পিস্তল।

বাইকটা যে খুব জুতের নয় তা প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রথমে বার বার কিক মেরেও স্টার্ট হচ্ছিল না। তার পর কোনও মতে স্টার্ট হলে চার জন মিলে উঠে পড়ে ছিনতাই করা মোটর বাইকে। কিন্তু লাল রঙের পুরনো বাইকটা চার জনের ভার বইতে পারছিল না। কোনও মতে প্রায় গোঙাতে গোঙাতে বাইকটা এগোচ্ছিল। বাইকে সবার পেছনে বসেছিল কর্ণ। পিছনে তত ক্ষণে পুলিশ আর জনতা তাড়া করছে। সেই ভিড়েই ছিলেন মহিষাদল থানার অফিসার ইন চার্জ পার্থ বিশ্বাস এবং কাঁথি থানার অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর প্রবীর সাহা।

আরও পড়ুন

ডিএ মামলার ফাইলই হারিয়ে ফেলেছে রাজ্য সরকার!

মহিষাদল থানার ওসি পার্থ বিশ্বাস (বাঁ দিকে) ও কাঁথি থানার এএসআই প্রবীর সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই রথতলা মোড় পর্যন্ত পৌঁছয় বাইক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রথতলা মোড়ের কাছে পৌঁছনোর পরেই বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে ভয়ে লোকজন এগোতে পারছিলেন না। কারণ তার আগে পর্যন্ত এলোপাথাড়ি বোমা গুলি চালাচ্ছিল দুষ্ক়তীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের এক জন বলেন, “কুড়ি-পঁচিশ সেকেন্ডের মতো বাইক থেকে নেমে অপেক্ষা করে কর্ণ। কিন্তু বাইক স্টার্ট না নেওয়ায় বাকি সঙ্গীদের ছেড়ে রাস্তা ধরে খালি পায়ে দৌড়তে শুরু করে সে। তখনও তার বাকি তিন সঙ্গী বাইক স্টার্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার নিজের একটি মামলার কাজে কাঁথি আদালতে এসেছিলেন পার্থ বিশ্বাস। আসামী পালাতে দেখে, নিজের এলাকা না হওয়া সত্বেও কর্ণের পেছনে সার্ভিস রিভলভার নিয়ে তা়ড়া করেন তিনি। রাস্তায় তাঁর সঙ্গে যোগ দেন প্রবীর।

আরও পড়ুন

অর্ডার দিলে মিলছে ‘ঘোড়া’ থেকে ‘কলা’

কর্ণকে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন পুলিশ অফিসার। —নিজস্ব চিত্র।

রথতলা মোড়ে কর্ণ নেমে পড়তেই কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। বাকিদের পেছনে তাড়া না করে কর্ণকেই পাখির চোখ করে নেন তাঁরা। কর্ণ যেই বুঝতে পারে তার পেছনে দুই পুলিশ অফিসার, তখনই সে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তার পর পাঁচিল ডিঙিয়ে গা ঢাকা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, “কর্ণের কাছে পিস্তল ছিল। সে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পুলিশ অফিসারদের ভয় দেখানোরও চেষ্টা করে।” কিন্তু তাতে ঘাবড়াননি ওই দু’জন। রিভলভার নিয়ে নিজেই পাঁচিলে উঠে পড়েন পার্থ। কর্ণকে বার বার আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্ণ আত্মসমর্পণ না করে অস্ত্র উঁচিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে পায়ে গুলি করে পাকড়াও করেন ওই দুই অফিসার। যদিও তত ক্ষণে ওই খারাপ বাইকই আবার কোনও মতে স্টার্ট দিয়ে পগারপার বাকি তিন জন। তবে পুলিশ কর্তারা খুশি। তাঁরা জানেন কর্ণকে যখন হাতে পাওয়া গিয়েছে তখন বাকিরা বেশি দূর যেতে পারবে না। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “কর্ণের কান ধরে টানলেই বাকিদের হদিশ মিলবে।”

ছিনতাই হওয়া বাইকটা কার, তার হদিশও অবশ্য পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে লক আপে কর্ণর একটাই আক্ষেপ, বাইকটা যদি না বিগড়াত...

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Karna Bera Contai Prisoner Escape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE