E-Paper

পুলিশের সেই গাড়ি চলার অযোগ্য, মানল পুলিশই

কোনও ভিআইপি-র যাতায়াতের মতো দ্রুত গতির কাজে তো বটেই, সংশ্লিষ্ট গাড়িটিকে আর না চালানোই ভাল বলে রিপোর্ট দিয়েছে খোদ কলকাতা পুলিশের ‘পুলিশ সার্ভিস ডিপো’।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:১৪

—প্রতীকী চিত্র।

ফিটনেস বাতিল। রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হয়েছিল। অত্যধিক দূষণ ছড়ানোর জন্য চলাচলের যোগ্য নয় বলে বাতিল করেছিল পরিবহণ দফতর। কলকাতা পুলিশের এই গাড়িই তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক শওকত মোল্লার কনভয়ে ‘পাইলট কার’ হিসাবে পথে নেমে পিষে মেরেছিল এক বাইকচালককে। গত সেপ্টেম্বরের এই ঘটনার তিন মাস পরে অবশেষে গাড়িটি ‘চলার অযোগ্য’ বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছল কলকাতা পুলিশ।

সূত্রের খবর, কোনও ভিআইপি-র যাতায়াতের মতো দ্রুত গতির কাজে তো বটেই, সংশ্লিষ্ট গাড়িটিকে আর না চালানোই ভাল বলে রিপোর্ট দিয়েছে খোদ কলকাতা পুলিশের ‘পুলিশ সার্ভিস ডিপো’। গাড়িটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, এ বার সেটি বাতিল করে দেওয়া যায় কি না, সেটা দেখার জন্যও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

যদিও প্রশ্ন উঠছে, রেজিস্ট্রেশন এবং ফিটনেস বাতিল হওয়া, দূষণের জন্য ছাড়পত্র না থাকা এমন একটি গাড়ি পুলিশে ব্যবহার হচ্ছিল কী করে? কী করেই বা সেটিকে নিয়োগ করা হয়েছিল ভিআইপি যাতায়াতের ‘পাইলট কার’ হিসাবে? পুলিশের কোনও স্তর থেকেই এর উত্তর মেলেনি। তবে পুলিশের এক সূত্রের দাবি, গত ২ সেপ্টেম্বর ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা তৃণমূলের ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লা কলকাতার দিকে আসার সময়ে তাঁর কনভয়ে ওয়্যারলেস বিভাগের এই গাড়িটিকে পাঠানো হয়েছিল। কেন এমন গাড়ি নামানো হয়েছিল, তার তদন্ত চলছে। গাড়িটির অবস্থা নিয়েও গত কয়েক মাসে একাধিক পরীক্ষা হয়েছে।

পুলিশের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে যেখানে, বেলতলার সেই পুলিশ সার্ভিস ডিপো আলাদা করে গাড়িটি পরীক্ষা করেছে। সেখান থেকেই এমন গাড়ি আর না চালানোর জন্য রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। এই রিপোর্টেরভিত্তিতে ঠিক হবে, গাড়িটিকে নিয়ে এ বার কী করা হবে। পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘এমন ক্ষেত্রে গাড়ি পুরোপুরি বাতিল (কনডেম প্রসেস) করতে হলে একটি কমিটি তৈরি করতে হয়। এক জন আইপিএস অফিসার, এক জন মোটর ভেহিক‌্লঅফিসার এবং পুলিশ সার্ভিস ডিপোর টেকনিক্যাল কর্মীকে নিয়ে তিন সদস্যের ওই কমিটি হয়। ওই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়।’’

যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, কলকাতা পুলিশে এমন গাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই গাড়িটি যেমন ২০০৯ সালের অগস্টে নথিভুক্ত হয়েছিল। ১৬ বছরের পুরনো এই গাড়িটি কলকাতা পুলিশের একাধিক বিভাগে কাজ করেছে। ২০২৪ সালের ১০ অগস্ট পর্যন্ত গাড়িটির ফিটনেস শংসাপত্র করানো ছিল। তবে ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বরই গাড়িটিকে অত্যধিক দূষণ ছড়ানোর জন্য বাতিল করেছিল পরিবহণ দফতর।

কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘পুলিশে এমন গাড়ির সংখ্যা অনেক। সব মিলিয়ে যে চার হাজার গাড়ি কলকাতা পুলিশে কাজ করে, তার মধ্যে অধিকাংশই ধুঁকছে। কখন,কোথায় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে কেউ জানেন না। পুরনো গাড়িও কাজ করছে অনেক।’’ তবে বাসন্তী হাইওয়ের ওই ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশে এমন ধুঁকতে থাকা গাড়িরসংখ্যা ঠিক কত, সে ব্যাপারেও তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই সংখ্যা স্পষ্ট হয়নি।

কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা গাড়ির সমস্যা মেনে নিয়েই জানাচ্ছেন, মাসখানেকের মধ্যেই ২০০টি নতুন বৈদ্যুতিন গাড়ি যুক্ত হতে চলেছে। ওই কর্তার মন্তব্য, ‘‘নবান্ন থেকে ছাড়পত্র চলে এসেছে। প্রায় ৪৪ কোটি টাকা খরচ করে গাড়িগুলি কলকাতা পুলিশে যুক্ত হবে দ্রুত। দরপত্র ডাকার পরে কিছু শর্ত না মেলায় একাধিক বার দেরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন সব মিটে গিয়েছে।’’

এমন বৈদ্যুতিন গাড়ির জন্য কলকাতা পুলিশের ১০টি ডিভিশনের প্রতিটিতে একটি করে এবং লালবাজার, হেডকোয়ার্টাস ট্র্যাফিক গার্ড, বডিগার্ড লাইন্স, পুলিশ ট্রেনিং স্কুল, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাটেলিয়ন, ঠাকুরপুকুর থানা-সহ আরও ১১টি জায়গায় চার্জিং স্টেশন তৈরিকরা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police Car Maintenance

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy