ছাত্র আন্দোলন ও তাহার মোকাবিলায় অনুসৃত দমননীতি মায়ানমারকে পুনরায় অশান্ত করিয়া তুলিতেছে। নূতন একটি শিক্ষা বিল লইয়া ছাত্রদের আপত্তি এবং তাহা সংশোধনের দাবি জানাইতেই গত সপ্তাহকাল ধরিয়া মায়ানমারের রাস্তায় অবস্থান ও ধর্না চলিতেছে। প্রথমাবধি সরকার সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভাঙিতে নির্মম দমননীতির আশ্রয় লইয়াছে। অবশেষে ছাত্ররা রাজধানী ইয়াঙ্গন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করিলে পুলিশ তাহাদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে এবং নৃশংস ভাবে প্রহার করে। এই নৃশংসতা কেবল দেশের বিরোধী নেত্রী আঙ সান সু চি-কেই ক্ষুব্ধ করে নাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও কড়া ভাষায় তাহার নিন্দা করিয়াছে। সরকার একটা দায়সারা তদন্ত কমিশন গঠন করিয়াছে, কিন্তু ছাত্র-বিক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার লক্ষণ নাই।
ছাত্রদের ইউনিয়ন করার অধিকার কাড়িয়া লওয়ার যে অনুচ্ছেদ প্রস্তাবিত শিক্ষা বিলে অন্তর্ভুক্ত, তাহা রদ করার দাবি উঠিয়াছে এই আন্দোলনে। বিক্ষোভকারীদের সহিত বৌদ্ধ শ্রমণরাও যোগ দিয়াছেন এবং পুলিশি লাঠি-চার্জ ছাত্রদের পাশাপাশি ওই শ্রমণদের কিংবা আন্দোলনের প্রতিবেদন লিখিতে আসা সাংবাদিকদেরও রেহাই দেয় নাই। ১৯৮৮ সালে এমন ছাত্র-বিক্ষোভের মধ্য দিয়াই গণতন্ত্রের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হইয়াছিল এবং সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়াই সু চি-র মতো নেত্রী উঠিয়া আসিয়াছিলেন। মায়ানমারের বর্তমান সরকার নামে অসামরিক হইলেও কার্যত অবসরপ্রাপ্ত সেনা-অফিসারদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। তাঁহারাই দেশের প্রেসিডেন্ট, উচ্চ পদাধিকারী। হয়তো তাঁহারা এই ছাত্র-বিক্ষোভের মধ্যে সিঁদুরে মেঘের সংকেত দেখিতেছেন। চলতি বছরেই মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচন। অবাধ নির্বাচন হইলে এবং সু চি ও তাঁহার দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে দিলে ফলাফল সেই দিকেই যাইবে। প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন দৃশ্যত তাহা চাহেন না। চাহেন না বলিয়াই কি অঙ্কুরেই আন্দোলন বিনাশ করিতে ব্যগ্র?
ছাত্ররা যে শিক্ষা বিলের বিরোধিতা করিতেছে, তাহা শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বশাসন খর্ব করিয়া সরকারের বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করিতে চায়। অথচ গণতন্ত্রের দাবি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, বিভিন্ন মতামত ও চিন্তাধারাকে প্রতিযোগিতা করিতে দেওয়া। প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন কিছু গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করিয়াছিলেন। তাহাতে উত্সাহিত ইউরোপ-আমেরিকা মায়ানমারে বড়-বড় লগ্নির প্রস্তাব লইয়া হাজিরও হয়। কিন্তু সংস্কারের প্রক্রিয়া মধ্যপথে থমকিয়া গিয়াছে। জনজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদের সশস্ত্র চ্যালেঞ্জ প্রশমিত হয় নাই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্বহীনতা এবং অধিকারহীনতার সমস্যাও ঘোচে নাই, উপরন্তু বৌদ্ধ কট্টরপন্থীদের আক্রমণে ওই মুসলিম জনসাধারণকে শরণার্থী হইতে হইতেছে। সু চি তাঁহার মুক্তির পর মুক্ত দুনিয়াকে সতর্ক করিয়াছিলেন যে, এখনই যাবতীয় অথর্নৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করিয়া মায়ানমারের আধা-সামরিক শাসকদের শংসাপত্র দিবার দরকার নাই, বরং গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে অগ্রসর হইতে আরও চাপ তাহার উপর দেওয়া প্রয়োজন। তাঁহার সতর্কবাণী সত্য হইতেছে। স্বৈরাচারে অভ্যস্ত মায়ানমারের কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের গন্ধ পাইলেই ব্যাটন-লাঠি, বন্দুক-কামান লইয়া নামিয়া পড়িতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy