Advertisement
E-Paper

আইন নহে

নয়া বিপদ রুখিতেও সনাতন ভারতীয় পথই তবে সাব্যস্ত হইবে? আরও একটি আইন রচনার পথ? ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও তাহার প্রতিরক্ষায় আবিশ্ব মুসলিমদের স্বেচ্ছাসেবক হইতে আহ্বান জানাইয়া আইসিস-এর জেহাদি নায়করা বিভিন্ন দেশ হইতে ব্যাপক সাড়া পাইতেছে। বিশেষত ইউরোপের দেশগুলি হইতে হাজার হাজার মুসলিম তরুণ জেহাদে যোগ দিতে স্বদেশের সীমান্ত অতিক্রম করিতেছেন।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪

নয়া বিপদ রুখিতেও সনাতন ভারতীয় পথই তবে সাব্যস্ত হইবে? আরও একটি আইন রচনার পথ? ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও তাহার প্রতিরক্ষায় আবিশ্ব মুসলিমদের স্বেচ্ছাসেবক হইতে আহ্বান জানাইয়া আইসিস-এর জেহাদি নায়করা বিভিন্ন দেশ হইতে ব্যাপক সাড়া পাইতেছে। বিশেষত ইউরোপের দেশগুলি হইতে হাজার হাজার মুসলিম তরুণ জেহাদে যোগ দিতে স্বদেশের সীমান্ত অতিক্রম করিতেছেন। যুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনেকে নিহত হইয়াছে, আবার বেশ কিছু তরুণ জেহাদিদের পৈশাচিক কাণ্ডকারখানায় হতাশ ও নির্মোহ হইয়া দেশেও ফিরিতেছেন। জেহাদি মতাদর্শে দীক্ষা তাঁহাদের নিজ নিজ দেশে জেহাদ সম্প্রসারণে উৎসাহিত করিতেছে। ইহা একটি অভিনব আন্তর্জাতিক সমস্যা, যাহা মুসলিম-অধ্যুষিত প্রাচ্য দেশগুলিতেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিতেছে। ভারতে ইতিমধ্যেই ওই খিলাফতের জন্য যোদ্ধা-সংগ্রহের কাজ শুরু হইয়াছে। তুরস্ক হইতে সিরিয়ায় প্রবেশের সময় সে দেশের পুলিশের হাতে ধরা পড়া নয় জন ভারতীয় তরুণ দেশে প্রেরিত হওয়ার পর এ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নড়িয়া বসিয়াছে। প্রস্তাব উঠিয়াছে, ভবিষ্যতে এই সমস্যার মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নূতন আইন রচনার।

যে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হইলেই নূতন একটি আইন বানাইয়া তাহার মোকাবিলা করার অভ্যাস ভারতীয় রাজনীতিক ও আমলাদের মজ্জাগত। প্রচলিত আইনেই যেখানে মোকাবিলা সম্ভব, সেখানেও অনেক নূতন-নূতন আইন প্রণয়ন করা হয়। সন্ত্রাস দমনের জন্য প্রণীত টাডা আইন এমনই এক দৃষ্টান্ত, যাহার ব্যাপক অপব্যবহার রোধ করিতে পরে তাহার সংশোধনী একটি আইনও বানাইতে হয়। যে-সব মুসলিম যুবক ইসলামি খিলাফতের জন্য লড়িতে সিরিয়া বা ইরাকে যাইতে উদ্গ্রীব, তাহাদের নিরস্ত করার জন্য আইন কি আবশ্যক? তুরস্ক-প্রত্যাগত নয় জন তরুণের বিষয়টি কিন্তু দেখাইয়া দেয়, আইন অপেক্ষাও সুপরামর্শ, ধৈর্য সহকারে তাহাদের বুঝাইয়া নিবৃত্ত করার প্রক্রিয়াটি অধিকতর ফলপ্রসূ। দীর্ঘ ত্রিশ ঘণ্টা ধরিয়া গোয়েন্দাদের সহিত আলোচনার পর এই কল্পনাপ্রবণ তরুণরা জেহাদে যোগ দিয়া মৃত্যুবরণের নিষ্ফলতা সম্পর্কে সচেতন হইয়াছে। এই সব ক্ষেত্রে মনোবিদদের সাহায্য লওয়াও আবশ্যক। ঠিক কোন পরিস্থিতি, কী ধরনের ব্যক্তিগত হতাশা বা মরিয়াপনা, কতখানি তীব্র ধর্মানুরাগ বা ধর্মীয় আবেগ-উদ্দীপনা মুসলিম যুবকদের জেহাদ করিতে ইরাক-সিরিয়ায় অভিমুখে প্রেরিত করিতেছে, তাহা বুঝা দরকার।

সর্বরোগহর টোটকা দাওয়াইয়ের মতো নূতন আইন বানাইবার দরকার নাই। বরং ইন্টারনেট সহ সোশাল নেটওয়ার্কগুলিতে জেহাদি সংগ্রহ বা প্রশিক্ষণের কোনও অভিযান চলিতেছে কি না, সে বিষয়ে গোয়েন্দারা সতর্ক হউন। সেই সঙ্গে জেহাদে যোগ দিতে ইচ্ছুক, এমন সম্ভাব্য মুসলিম তরুণদের উপর নজরদারি চালানো অবশ্যই জরুরি। ধর্মকে ব্যবহার করিতে যে সন্ত্রাসের কারবারিরা তৎপর, তাহাদের রুখিবার কাজে ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্ব অস্বীকার করা চলে না। সিরিয়া বা ইরাক-ফেরত জেহাদিদের গতিবিধি তো অবশ্যই নজরে রাখা চাই। কিন্তু নজরদারির নামে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা বা হয়রান করার অপচেষ্টা হইলে তাহা কেবল অনৈতিক নহে, বিপজ্জনকও। স্থূল আইন বা জবরদস্তি মুসলিম মানসকে অকারণ ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ করিয়া তুলিতে পারে। তখন ভারতই জেহাদের লক্ষ্যবস্তু হইয়া পড়িতে পারে।

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy