Advertisement
E-Paper

খিড়কি নহে

রাজ্যসভা ভারতীয় সংসদের উচ্চতর কক্ষ হিসাবেও পরিচিত। সংবিধানের শুরু হইতেই দুই পরিচিতির মধ্যে একটি টানাপড়েন ছিল। এক দিকে ব্রিটিশ ‘হাউস অব লর্ডস’-এর উত্তরাধিকার, অন্য দিকে মার্কিন সেনেটের ছায়া।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০০:১৪

সম্পাদকীয় ১...

রাজ্যসভা ভারতীয় সংসদের উচ্চতর কক্ষ হিসাবেও পরিচিত। সংবিধানের শুরু হইতেই দুই পরিচিতির মধ্যে একটি টানাপড়েন ছিল। এক দিকে ব্রিটিশ ‘হাউস অব লর্ডস’-এর উত্তরাধিকার, অন্য দিকে মার্কিন সেনেটের ছায়া। এক দিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে উচ্চ স্তরের বিতর্কের দায়িত্ব, যে বিতর্ক লোকসভার ধূলিমলিন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ভূমিতে সম্ভবপর নয়; অন্য দিকে আইনসভায় বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্য হিসাবে প্রতিনিধিত্বের বিশেষ সুযোগ করিয়া দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রীয় দায়, লোকসভা সদস্যদের ‘ব্যক্তিগত’ প্রতিনিধিত্ব যাহা মিটাইতে পারে না। এই দুই ভূমিকার মধ্যে সামঞ্জস্য যে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল, তাহা বলা চলে না, মার্কিন সেনেট তাহা অন্তত আংশিক ভাবে প্রমাণ করে। বিশেষত, ভারতের শাসনপদ্ধতিতে এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্য বিস্তারের নিরন্তর তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ও আদর্শ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে লঙ্ঘিত হইয়া আসিতেছে, অন্য দিকে দেশের রাজনীতিতে রাজ্য তথা আঞ্চলিক স্বার্থ ও প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়িতেছে। এই দুই প্রবণতার সংঘাত সচরাচর বিভিন্ন দলের মধ্যে এবং একই দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপড়েনের আকারে প্রকট হয় এবং বিবিধ স্বার্থসিদ্ধির ভিত্তিতে আগাইয়া চলে। কী ভাবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র একটি যথার্থ আলোচনা-ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে উত্তীর্ণ হইতে পারে, সেই মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর সন্ধান শুরুই হয় না। রাজ্যসভা এই সন্ধানের একটি প্রধান এবং কার্যকর পরিসর হইতে পারিত। হয় নাই।
যাহা হইয়াছে, তাহাকে বলা চলে সুবিধাবাদের মহাতীর্থ। বিভিন্ন দল নিজেদের বিবিধ প্রয়োজন মিটাইতে রাজ্যসভাকে ব্যবহার করিয়া থাকে। প্রাচীনতম কংগ্রেস এই বিষয়ে পথিকৃৎও বটে। লোকসভা নির্বাচনে সাফল্য অর্জনে কিংবা প্রতিযোগিতায় অপারগ নেতাদের সাংসদ করিবার কৌশল হিসাবে এই দল দীর্ঘকাল ধরিয়াই রাজ্যসভাকে ব্যবহার করিয়া আসিতেছে। সে জন্য প্রায় যে কোনও প্রার্থীকে যে কোনও রাজ্যের ‘অধিবাসী’ হিসাবে দেখাইতেও দ্বিধা বা কুণ্ঠা দেখা যায় নাই। মনমোহন সিংহ হইতে সঞ্জয় সিংহ— দলীয় স্বার্থে অসমকে ব্যবহার করিবার সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলিতেছে। কিন্তু কংগ্রেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করিতে অন্যরাও দ্বিধাহীন। যথা, সি পি আই এম। রাজ্যসভার আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হইয়াছিলেন। অতএব রাজ্যসভা। উচ্চতর কক্ষকে খিড়কি হিসাবে ব্যবহার করিবার এই পথটি সংসদের পক্ষে সম্মানজনক নয়, প্রার্থীর পক্ষেও সম্ভবত ইহাকে গৌরবের বলা চলে না।
রাজ্যসভাকে যদি একটি যথার্থ উচ্চতর কক্ষে পরিণত করিতে হয়, তবে রাজনৈতিক দলগুলিকে এই পথ ছাড়িতে হইবে। অক্ষমের পুনর্বাসন বা প্রভাবশালীকে পারিতোষিক বিতরণের কৌশল হিসাবে না দেখিয়া রাজ্যসভাকে উৎকর্ষের পরিসর রূপেই প্রতিষ্ঠা করা দরকার। অন্তত প্রথম পর্বে অপব্যবহার হইতে সদ্ব্যবহারে বিবর্তনের স্বার্থে— দলীয় রাজনীতির বাহির হইতেই সেই উৎকর্ষের সন্ধান করা শ্রেয়। প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল রাজ্যসভার প্রার্থীর যে তালিকা ঘোষণা করিয়াছে, তাহাতে এই উদ্যোগের কিছু প্রাথমিক সংকেত রহিয়াছে। সুলক্ষণ। প্রার্থী নির্বাচনে হয়তো উন্নতির অবকাশ আছে, কিন্তু তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। এ কথাও সত্য যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রাজনীতিতে দলের জনপ্রিয়তা আপাতত অতি প্রবল বলিয়াই হয়তো রাজ্যসভার আসনকে সান্ত্বনা পুরস্কার রূপে ব্যবহার করিবার প্রয়োজন হয় নাই। আশা, ভবিষ্যতে তেমন প্রয়োজন হইলেও দল নীতির প্রশ্নে আপস করিবে না। আশা, পশ্চিমবঙ্গের এই দৃষ্টান্ত ক্রমে সর্বভারতীয় স্তরেও অনুসৃত হইবে। রাজ্যসভা যথার্থ উচ্চতর কক্ষে পরিণত হইবে। আপাতত, আশামাত্র।

constitution editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy