Advertisement
E-Paper

পরীক্ষায় পাশ

প্রশাসন পাশ করিল, কৃতিত্বসহকারে। আর সমাজ পাশ করিল, টানিয়া টুনিয়া, কোনও ক্রমে। গত শুক্রবারের বন‌্ধ-এর ইহাই হইল মার্কশিট। ইদানীং, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত পশ্চিমবঙ্গ দুই রকমের প্রস্তুতি দেখিতে থাকে। পাশাপাশি, কিন্তু বিপরীতমুখী।

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৮

প্রশাসন পাশ করিল, কৃতিত্বসহকারে। আর সমাজ পাশ করিল, টানিয়া টুনিয়া, কোনও ক্রমে। গত শুক্রবারের বন‌্ধ-এর ইহাই হইল মার্কশিট। ইদানীং, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত পশ্চিমবঙ্গ দুই রকমের প্রস্তুতি দেখিতে থাকে। পাশাপাশি, কিন্তু বিপরীতমুখী। এক দিকে পুরাতন ঐতিহ্য অনুযায়ী সর্বাঙ্গীণ, কিংবা নিদেনপক্ষে ব্যাপক ধর্মঘটের প্রস্তুতি চলে, অন্য দিকে চলে কর্মদিবস চালু রাখিবার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিকল্পনা। সাধারণত শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দলের বিবিধ পরিকল্পনা মোটের উপর ব্যর্থ করিয়া দিয়া আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসীকে প্রথম দলেই ভিড় জমাইতে দেখা যায়। পরিস্থিতি ধীরে পাল্টাইলেও সেই পরিবর্তনের গতি ছিল অতি ধীর, বাঙালির বন‌্ধ-ঐতিহ্য মোটের উপর অক্ষুণ্ণ ছিল। এই বারের বন‌্ধটিকে বলা চলে সেই ধারায় প্রথম বড় মাপের ব্যতিক্রম। রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দল শুক্রবার বিরাট সাফল্যের মুখ দেখিয়াছে। সরকারি অফিস-কাছারি তো বটেই, বেসরকারি অফিসও গোটা দিন কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকিয়াছে। রাস্তাঘাটে সারা দিন পরিবহণের কোনও অভাব অনুভূত হয় নাই। দোকানপাট অনেকাংশে খোলা ছিল, নাগরিক পরিকাঠামোতেও হরতালের মেজাজ প্রস্ফুটিত হয় নাই। দুর্বিপাক-বিড়ম্বিত রাজ্যের পক্ষে ইহা একটি সুসংবাদ। এবং এই সুসংবাদ রাজ্যকে আনিয়া দিবার কৃতিত্ব রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিতে হইবে। লাগাতার বন‌্ধ-বিরোধী প্রচার ও প্রশাসনিক আশ্বাস ব্যতীত এই পরিবর্তন সম্ভব হইত না। ফলে প্রশাসন কেবল ‘পাশ’ নয়, রীতিমতো উজ্জ্বল সাফল্যের অধিকারী।

সাফল্যের প্রকারভেদ হয়, দেখাইয়া দিলেন সাধারণ বাঙালি মানুষজন। তাঁহারাও বন‌্ধ-বিরোধিতায় সফল, কিন্তু নিতান্ত সীমিত পরিমাণে। পরিবহণের অসুবিধা নাই, সরকারি আশ্বাসের অভাব নাই, তবুও তাঁহাদের কাজে বাহির হইতে এখনও প্রবল অনীহা, সপ্তাহান্তের ছুটিটি আর এক দিন বর্ধিত করিবার বিরাট প্রলোভন! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র উপস্থিতির তুলনামূলক হারটি দেখিলেই সমস্যাটি স্পষ্ট হয়। শিক্ষকরা আসিয়াছেন সরকারি তাড়নায়, কোথাও ভীত হইয়া, কোথাও আশ্বস্ত হইয়া। কিন্তু আসিয়াই বা তাঁহারা করিবেন কী। ছাত্রদের তো সরকারি তাড়না নাই, সুতরাং তাহারা সব নিজ নিজ গৃহে বন‌্ধ উপভোগ করিতেছে। এইখানেই বাঙালি মানসিকতার দুর্দমনীয় অপরিবর্তনশীলতা। কাজ করিবার অসুবিধা নাই বলিয়াই কাজ করিতে হইবে, এমন বাধ্যতা বাঙালি কবেই বা দেখাইয়াছে? এক হাতে যেমন তালি বাজে না, বন‌্ধ বন্ধের কাজও এক দিক দিয়া হয় না। ইহা একটি বৃহত্তর সামাজিক মানসিকতার বিষয়। প্রশাসনিকতা প্রবল ভাবে পাল্টাইলেও মানসিকতা যদি অচলায়তন হইয়া থাকে, পরিবর্তন দূর অস্ত্।

ঐতিহ্যই হউক, অভ্যাসই হউক, তাহা পাল্টাইতে হইলে একটি উল্টা চাড় দরকার। বন‌্ধ বলিয়া আরও বেশি করিয়া কাজে যাইব, এই বিপরীত জেদ ছাড়া বন‌্ধ বন্ধ অসম্ভব। বাঙালি এমন জেদ কোনও কালে দেখায় নাই, সুতরাং সংশয়ীর সংশয় সঙ্গত। শিল্প-আহ্বানের লক্ষ্যটিও, ফলত, অনিশ্চিত। আর সরকার যতই বন‌্ধ ঠেকাক, কর্মসংস্কৃতি বিষয়ে সরকারি পুনর্ভাবনাতেও যে এখনও বহু পথ হাঁটা বাকি, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর পূজাবকাশ বাড়াইবার প্রতিশ্রুতিটি তাহার প্রমাণ। বন‌্ধ ব্যর্থ করা গিয়াছে বলিয়া পূজার ছুটি এক দিন বাড়াইলে কিন্তু কর্মসংস্কৃতির হরেদরে এক ক্ষতিই হয়। সোজা অঙ্ক, স্বাভাবিক বুদ্ধি। বাঙালির স্বভাব-আলস্য ও কর্মবিমুখতার বিরুদ্ধে লড়িতে হইলে ছেলে ভুলাইলে চলিবে না, কাজের মূল্য প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। কাজে ছুটি দিয়া কাজের মূল্য বোঝানো যায় কি?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy