মুলায়ম সিংহ যাদব ও লালুপ্রসাদ যাদব পরস্পর বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হইতে চলিয়াছেন। হিন্দি বলয়ের দুই প্রধান রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের দুই যাদব কুলপতি যখন বৈবাহিক সম্পর্কে বদ্ধ হন, তখন তাহা লইয়া রাজনৈতিক জল্পনা চলিবেই। বিশেষত যখন সাবেক জনতা দলের বিভিন্ন শাখা একত্র হইয়া একটি অভিন্ন জনতা পরিবার পুনর্গঠনের প্রয়াস সূচিত হইতেছে। সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের লালুপ্রসাদ উভয়েই রামমনোহর লোহিয়ার মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। জয়প্রকাশ নারায়ণের জনতা আন্দোলনেও তাঁহারা ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ শরিক। তাহার পর মণ্ডল রাজনীতির সুবর্ণ যুগে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের দুই বিশ্বস্ত সেনাপতি হিসাবেও এই দুই যদুকুলপতিকে দেখা গিয়াছে। তাহার পরেই তাঁহাদের সেই সম্পর্কে চিড় ধরে, যেমন ভাঙন ধরে জনতা পরিবারেও। উত্তরপুরুষদের বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্য দিয়া সে সম্পর্ক আবার জোড়া লাগিবে কি?
তবে সমস্যা আছে। দুই যাদব নেতাই হিন্দি বলয়ে নিজেদের সাবেক কর্তৃত্ব ধরিয়া রাখিতে হিমসিম। মুলায়মের সমাজবাদী পার্টি যদিও বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাসীন, গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখাইয়া দিয়াছে, তাঁহার পায়ের তলার মাটি সরিয়া যাইতেছে এবং রাজ্যে তাঁহার অনগ্রসর জনভিত্তি দ্রুত বিজেপি আত্মসাৎ করিয়া লইতেছে। বিহারে লালুপ্রসাদ বহু কালই তৃতীয় শক্তিতে পরিণত। নীতীশ কুমারের সহিত জনতা পরিবারে শামিল হইয়া তিনি যদি বা কিছুটা স্বস্তি পাইয়া থাকেন, বিজেপির অগ্রগতি তাঁহার যাদব গণভিত্তিকেও গ্রাস করিতেছে। এই প্রেক্ষিতেই ঐক্যবদ্ধ জনতা পরিবারের কেন্দ্রবিন্দুতে মুলায়ম-লালুপ্রসাদ সম্বন্ধ যদি ঐক্যের বনিয়াদ দৃঢ়তর করিতে পারে, তেমনটাই আশা। ইতিহাসে এ ধরনের বৈবাহিক সম্পর্কের বহু নজির রহিয়াছে, যেখানে সম্বন্ধীরা রাজনৈতিক ভাবে উপকৃত হওয়ার ভাবনা হইতেই সম্পর্কে যুক্ত হইয়াছেন। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সহিত সেলুকাস-কন্যার বিবাহের পিছনে চন্দ্রগুপ্তের তরফে যেমন মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমানা নিরুপদ্রব করার চিন্তা ছিল, সেলুকাসের তরফেও তেমনই মগধের দিক হইতে দিগ্বিজয়ী বাহিনীর গান্ধার অভিযান ঠেকাইয়া রাখার তাগিদ ছিল। মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের সহিত রাজপুত রাজকন্যা যোধাবাই-এর বিবাহ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি রাজপুত চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে প্রশমিত করিয়া দেয়।
ইতিহাস বলিতেছে, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকিলেই বিবাহ-রাজনীতির দরকার হয়। লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিংহ, শরদ যাদব, নীতীশ কুমাররাও আজ অস্তিত্বের সঙ্কটে। বিজেপিকে ঠেকাইতে যাদব-কুর্মি প্রভৃতি অনগ্রসর শ্রেণি এবং মুসলিমদের একজোট করার তাগিদ প্রবল। কিন্তু অনগ্রসর নেতারা সকলেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রাদেশিক মনসবদারও, যাঁহারা দিল্লির মসনদের দিকেও লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকেন। তাই ১৯৯০-এর দশকে মুলায়ম সিংহ প্রধানমন্ত্রিত্বের গদির কাছাকাছি হইলে লালুপ্রসাদের ‘ভেটো’তে সে সম্ভাবনা বানচাল হয়। মুলায়ম এখনও সেই ‘বঞ্চনা’র দহন ভুলিতে পারেন নাই। তাই নিজেদের সম্পর্কটাকে আরও নিবিড় করিয়া তোলার এই ‘রাজনৈতিক’ উদ্যোগ। এই উদ্যোগ হইতে আপাতত নীতীশ কুমার বাদ পড়িয়া গিয়াছেন। শরদ যাদবও। রাজকন্যা কিংবা রাজপুত্র যদি কম পড়িয়া যায়, তবে অবশ্য বিষম বিভ্রাট, আবার অন্য পথ দেখিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy