Advertisement
E-Paper

বিলম্বের তাৎপর্য

ভারতীয় জনতা পার্টি কবে ইস্তাহার প্রকাশ করিবে, বিলম্ব হইতেছে কেন, এই লইয়া জল্পনা চলিতেছিল। সাম্প্রতিক ঘোষণায় মনে হইতেছে, ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হইবে ৭ এপ্রিল। অথচ ওই দিনই প্রথম পর্যায়ের লোকসভা নির্বাচন শুরু। অর্থাৎ, ভোটের দিন সকালে ম্যানিফেস্টো ভূমিষ্ঠ হইবে। এই অত্যাশ্চর্য বিলম্বের কারণ লইয়া নানা মুনির নানা মত, অনেকেই অনুমান করিতেছেন দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বই ইহার নেপথ্যে, কিন্তু কারণ যাহাই হউক, কার্যটি অভূতপূর্ব।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৫:৪০

ভারতীয় জনতা পার্টি কবে ইস্তাহার প্রকাশ করিবে, বিলম্ব হইতেছে কেন, এই লইয়া জল্পনা চলিতেছিল। সাম্প্রতিক ঘোষণায় মনে হইতেছে, ম্যানিফেস্টো প্রকাশিত হইবে ৭ এপ্রিল। অথচ ওই দিনই প্রথম পর্যায়ের লোকসভা নির্বাচন শুরু। অর্থাৎ, ভোটের দিন সকালে ম্যানিফেস্টো ভূমিষ্ঠ হইবে। এই অত্যাশ্চর্য বিলম্বের কারণ লইয়া নানা মুনির নানা মত, অনেকেই অনুমান করিতেছেন দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বই ইহার নেপথ্যে, কিন্তু কারণ যাহাই হউক, কার্যটি অভূতপূর্ব। পৃথিবীর কোনও নির্বাচনে একটি দল, ভোটের এক মাস পূর্বে নহে, দুই মাস পূর্বে নহে, খোদ ভোটের দিন প্রাতঃকালে ম্যানিফেস্টো হাতে করিয়া জনগণের দ্বারে আবির্ভূত হইতেছে, এমন ঘটনা গিনেস বুক ঘাঁটিলে মিলিবে কি না সন্দেহ। কোনও ক্ষুদ্র দলই এমন করিলে দেশময় হাসাহাসি পড়িয়া যাইবে, আর বিজেপি তো এই নির্বাচনে মুখ্য দল হিসাবে আধিপত্য জারি রাখিবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বারংবার প্রকাশ করিতেছে। চক্ষে-অঙ্গুলি-ভ্রাতা বলিতেই পারেন, ইস্তাহারে কিছুই আসিয়া যায় না, ইস্তাহার পড়িয়া কেহ ভোট দেয় না, ইস্তাহার প্রকাশ এক নিয়মবদ্ধ অবান্তর আচারমাত্র। ইহা যদি সত্য হয়, তবে তাহা ইস্তাহারের দোষ নহে, বর্তমান সারশূন্য রাজনীতিকগণের দোষ, আর সেই দোষের খণ্ডন ইস্তাহারকে অবহেলা করিয়া হইবে না, তাহাকে সমধিক গুরুত্ব দিয়াই হইবে। দলটির কার্যপ্রয়োগে এমন সুচিন্তা, ক্ষমতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হইবে, যাহাতে মানুষ প্রতিশ্রুতিকে হাসিয়া উড়াইয়া না দেয়।

মনে রাখিতে হইবে, ইস্তাহারই কার্যত একটি রাজনৈতিক দলের একমাত্র লিখিত ঘোষণা: তাহারা কী করিতে চাহে এবং কী ভাবে তাহা বাস্তবায়িত করিবে। বক্তৃতায় অনেকে অনেক কিছু বলিয়া থাকেন, তাহার পর প্যাঁচে পড়িলেই বলেন, উত্তেজনায় মুখ ফসকাইয়া বাহির হইয়া গিয়াছিল। অথবা দলের অন্য নেতা বিবৃতি দেন, অমুকের ইহা বলা একেবারেই ঠিক হয় নাই, উহা দলের মত নহে। কিন্তু ইস্তাহারে লিখিত বাক্যের মূল্য অপরিসীম। তাহা দলের অভ্যন্তরে বিশদ আলোচনা করিয়া, বহু বিতর্কের পরে, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মীর মতানুযায়ী দেশের প্রয়োজন ও নিজ কর্তব্য নির্ণয়ের শেষে, তবেই লিপিবদ্ধ হয়। এবং এইখানেই ইস্তাহারের প্রয়োজনীয়তা। অনেকে মিলিয়া ভাবিয়া, লিখিয়া দিবার পরে, তাহাকে মুহূর্তের হঠকারিতা বলিয়া অজুহাতের আশ্রয় লওয়া যায় না। সেই দায় গ্রহণ করিবার ও সেই প্রতিজ্ঞা পালন করিবার বাধ্যতা রহিয়া যায়।

‘লিখিত’ হইবার কারণেই, একটি দলের রাজনীতির ‘নীতি’গুলি এই মুহূর্তে ঠিক কী, দেশ ও কাল সম্পর্কে তাহাদের দর্শনই বা কী, ভোটের প্রাক্কালে তাহা নিশ্চিত ভাবে বুঝিতে জনতার নিকট দলীয় ম্যানিফেস্টোর বিকল্প নাই। এক আদর্শ নির্বাচনে, প্রতিটি দল তাহার ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করিয়া দিবে নির্বাচনের বেশ কিছু দিন পূর্বে, যাহাতে মানুষ সকল ইস্তাহার মনোযোগ দিয়া পাঠ করিতে পারেন। পাঠ ও বিশ্লেষণের পর, সব ইস্তাহারের পারস্পরিক তুলনা সারিয়া, মানুষ সিদ্ধান্ত লইবেন, কোন দলকে তিনি ভোট দিবেন। ইস্তাহারই একমাত্র ক্ষেত্র যেখানে দল তাহার সমুদয় যুক্তি ও ভাবনা গুছাইয়া বলিতে পারে ও তাহার উপস্থাপনা করিতে পারে যথাযথ ও কাঙ্ক্ষিত রূপে। এইটি দলের মতামতের দলিল। কোনও দল এই ইস্তাহারকে অবজ্ঞা করিলে, কেহ মনে করিতেই পারেন, তাহা নিজের দলকেই, নিজের বক্তব্যকেই এবং গণতন্ত্রকেই প্রকৃত গুরুত্ব প্রদান না করিবার শামিল। লিখিত শব্দের মহিমা বুঝাইতে ঋষিরা বলিয়াছিলেন, ‘শতং বদ, মা লিখ’। ভারতীয় জনতা পার্টি প্রাচীন সাধকদের অধিক ভক্তি করিয়া অভ্যস্ত, তাই বোধহয় বাক্যটিকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করিয়াছে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy