Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

যত গর্জায়

পূর্বাহ্ণে যাহা আশ্বাস মনে হইয়াছিল, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তাহা শূন্য আস্ফালন। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ বলিয়াছিলেন, কী করিয়া নির্বাচন করাইতে হয়, তিনি জানেন। তৃতীয় দফার নির্বাচনের দিন দেখা গেল, সত্যই জানেন বটে। সমস্যাকেই উড়াইয়া দেওয়ার মতো সহজ সমাধান আর কী হইতে পারে? শাসক দলের ভীতিপ্রদর্শন, মারধর, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট লইয়া বিরোধীরা বহু অভিযোগ করিয়াছেন। তাহার কোনওটিকেই গুরুত্ব দেন নাই সুধীরকুমার। এমনকী বুধবার দ্বিপ্রহরে, ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হইবার বহু আগেই তিনি ভোটকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ বলিয়া প্রশংসা করিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০০:৫০
Share: Save:

পূর্বাহ্ণে যাহা আশ্বাস মনে হইয়াছিল, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তাহা শূন্য আস্ফালন। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ বলিয়াছিলেন, কী করিয়া নির্বাচন করাইতে হয়, তিনি জানেন। তৃতীয় দফার নির্বাচনের দিন দেখা গেল, সত্যই জানেন বটে। সমস্যাকেই উড়াইয়া দেওয়ার মতো সহজ সমাধান আর কী হইতে পারে? শাসক দলের ভীতিপ্রদর্শন, মারধর, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট লইয়া বিরোধীরা বহু অভিযোগ করিয়াছেন। তাহার কোনওটিকেই গুরুত্ব দেন নাই সুধীরকুমার। এমনকী বুধবার দ্বিপ্রহরে, ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হইবার বহু আগেই তিনি ভোটকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ বলিয়া প্রশংসা করিয়াছেন। ইহা অশনিসংকেত। রাজ্যে আরও দুই দফা ভোট বাকি রহিয়াছে। তাহার পূর্বে রাজ্যবাসীর নিকট বার্তা গেল— নির্বাচন কমিশন নিষ্প্রাণ নিয়মরক্ষায় বিশ্বাসী। নিয়মের বাস্তবিক প্রয়োগে আগ্রহী নহে। ইহা হতাশাজনক, কারণ কমিশনের উদ্যোগে নির্ভয়ে, নিরুদ্বেগে ভোটদানের নিদর্শন রহিয়াছে। এ রাজ্যেই ২০০৯ লোকসভা নির্বাচন ও ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে কমিশন সক্রিয়, সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিল। নির্বাচনের পূর্বের দিনগুলিতে অশান্ত এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়মিত টহল এলাকায় কমিশনের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করিয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোবল ফিরাইয়াছিল। ভোটের দিনও বাহিনী কেবল বুথগুলিতে আবদ্ধ থাকে নাই, যেখানেই অশান্তির সম্ভাবনা ছিল সেই সকল স্থানে নিয়োজিত হইয়াছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা ভোটারদের সুরক্ষিত রাখিয়াছিল। এ বছর বাহিনী পর্যাপ্ত পাঠানো হইয়াছিল, তবু কার্যক্ষেত্রে তাহাদের উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। আগাম টহলদারি হয় নাই, এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি রাখিবার চেষ্টাই হয় নাই। বুথের অদূরে অবাধে জটলা করিয়াছে প্রভাবশালী নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা। বুথের মধ্যেও তাহাদের বহু অনাচার সংবাদমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের নজরে আসিয়াছে। কিন্তু কমিশনের পর্যবেক্ষকদের নজরে আসে নাই! সংশয় হয়, মন্দ কিছু না দেখিবার, না শুনিবার প্রশিক্ষণ দিয়াই কি কমিশন তাঁহাদের পাঠাইয়াছে? আধাসেনার সহিত রাজনৈতিক দুষ্কৃতীদের ছোটাছুটি শিশুদের খেলায় পরিণত হইয়াছে। গণতন্ত্রের একটি অতি-গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যকে নির্বাচন কমিশন প্রহসনে পরিণত করিবে, এতটা প্রত্যাশিত ছিল না।

রাজ্যের প্রধান দুইটি বিরোধী দল বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশের অপসারণ দাবি করিয়াছে। নির্বাচনের মধ্যে এই দাবির গুরুত্ব কম নহে। কিন্তু তৃতীয় দফায় যাহা ঘটিয়াছে তাহাকে কেবল নির্বাচন কমিশনের কয়েক জন কর্তাব্যক্তির ব্যর্থতায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় নাই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়োগের যে নকশা বুধবার দেখা গেল, তাহা এই সংকেত দেয় যে, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিকে ‘অতি-স্পর্শকাতর’ বা ‘স্পর্শকাতর’ বুথের তালিকায় আনাই হয় নাই। ফলে এই এলাকাগুলিতে ভোট হইয়াছে রাজ্য পুলিশের পাহারায়। পক্ষান্তরে, যে অঞ্চলগুলি অপেক্ষাকৃত শান্ত বলিয়াই পরিচিত, সেখানে মোতায়েন করা হইয়াছে আধাসেনা। সেখানে তাহাদের তেমন প্রয়োজন হয় নাই বলিয়া তাহাদের ‘নিষ্ক্রিয়’ মনে হইয়াছে। রাজ্য পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতেই জেলা প্রশাসনের কর্তারা স্পর্শকাতরতার মানচিত্র প্রস্তুত করেন, তাই রাজ্যের শাসক দলের ইচ্ছা ও নির্দেশের একটি ছাপ সেই মানচিত্রে রহিয়া গিয়াছে, এমনই আশঙ্কা করিতেছেন বিরোধীরা। এই অভিযোগ অহেতুক নহে। কমিশনকে যদি তাহার সাংবিধানিক ভূমিকা পালন করিতে হয়, তাহা হইলে এই সকল প্রক্রিয়া বুঝিয়া স্বাধীন সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। কাগজে-কলমে নিয়মরক্ষা করিলে হইবে না। ইহা প্রতিষ্ঠান হিসাবে কমিশনের গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। এই পরীক্ষায় কমিশন পাশ না করিলে দেশের গণতন্ত্র ব্যর্থ হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE