ওষুধ ধরেছে, অন্তত প্রাথমিক ভাবে তো বটেই!
পর্যাপ্ত ‘হোমওয়ার্কের’ অভাবে এর আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে বিস্তর ধমক-ধামক খেয়েছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা যে দু’ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক করেছেন, সেখানে দিস্তে দিস্তে নথিপত্র নিয়ে হাজির ছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। প্রশ্নের জবাবে খাতাপত্রও দেখতে হয়নি বিশেষ। জবাব মিলেছে প্রায় মুখে মুখেই!
যেমন, জেলায় কত ওয়ারেন্ট আছে এবং কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে— কমিশনের এই প্রশ্নের উত্তরে সঙ্গে সঙ্গে জবাব এসেছে, ‘‘ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়ারেন্ট ছিল সাড়ে তিন হাজার। এখন তা কমে হয়েছে ১১৫০।’’ জেলায় উত্তেজনাপ্রবণ বুথ কত? কার্যত ক্যুইজের ‘র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড’-এর ঢঙে উত্তর মিলেছে, ‘‘১১৪২!’’ সঙ্গে বাড়তি তথ্য, ‘‘জেলায় দেড় হাজার উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।’’
বৈঠক শেষে জেলার এক মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘তথ্য কেন মুখস্থ নেই, সে জন্যও তো এক পুলিশ সুপার বকুনি খেয়েছিলেন নসীম জৈদীর বৈঠকে। ওই ভুল আর করি!’’ অন্য এক নির্বাচনী আধিকারিকের কথায়, ‘‘দিন-রাত এক করে যেন মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিতে হল!’’
এ দিন ৬৪টি বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছেন বিশেষ নজরদার দলের সদস্যেরা। সব দেখেশুনে সন্তুষ্ট বিশেষ পর্যবেক্ষক অনিলকুমার ঝা, এমনটা দাবি জেলা প্রশাসনের এক কর্তার। বৈঠক শেষে অনিলকুমারের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ অনিলকুমারের নেতৃত্বে চার জনের দলটির সঙ্গে এ দিন বৈঠকে বসেছিলেন জেলাশাসক মনমীত কৌর নন্দা, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী, বিধাননগরের কমিশনার জাভেদ শামিম, ব্যারাকপুরের কমিশনার নীরজ সিংহ-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে পর্যবেক্ষক দলের আগ্রহ ছিল লক্ষ্যণীয়। এ জন্য ত্রি-স্তর ভিত্তিক তথ্যের উপরে ভরসা করছেন তাঁরা। বাহিনী কোন এলাকায় কখন গেল, তা জানতে বাহিনীর নিজস্ব রিপোর্টের পাশাপাশি একই তথ্য চাওয়া হয়েছে সেক্টর অফিসার এবং পুলিশের কাছ থেকেও। সরকারি জায়গা থেকে পোস্টার-ব্যানার সরানোর কাজ কতদূর এগোল, তা-ও পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চান বিশেষ নজরদারি দলের সদস্যেরা। ভোটার তালিকায় ভুয়ো বা মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আগেই নির্দেশ পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ৪০ হাজার নাম বাদ পড়েছে, যার বেশির ভাগই মৃত ভোটার। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ মোবাইল অ্যাপ (সমাধান)-এ কত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ৬০২টি অভিযোগের সব ক’টিই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করা গিয়েছে।
পুরভোটের সময়ে বিধাননগর সাক্ষী থেকেছে শাসক দলের তাণ্ডবের। মন্ত্রী-নেতারা দাঁড়িয়ে থেকে দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠে। এ বার বিধাননগরের কিছু বুথে বাড়তি নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন অনিলকুমার। সেই সঙ্গে জেলার সীমান্তবর্তী কিছু বুথেও থাকবে একই রকম নজরদারি।
চার দিনের সফর শেষে আজ, বুধবারই দিল্লি ফিরে নির্বাচন সদনে রাজ্যের ভোট প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন পাঁচ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচটি নজরদার দল। তার ভিত্তিতে কমিশন আরও একদফা ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ১৪-১৫ মার্চ জৈদীর নেতৃত্বেই কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে এসেছিল। তিনি ফিরে যাওয়ার দু’দিনের মাথায় এক জেলাশাসক, চার পুলিশ সুপার-সহ ৩৮ জন অফিসারকে সরিয়ে দেয় কমিশন। ফের এক দফা প্রশাসনে অদলবদল হতে পারে ভেবেই থরহরিকম্প প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। এ দিন যে হারে প্রস্তুতি নিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষকের মুখোমুখি হয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা, তা সেই ইঙ্গিতই করছে।
দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসক বলেন, ‘‘ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে দাগিদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা সবই খুঁটিয়ে দেখেছেন কমিশনের নজরদার দল। তাঁরা আমাদের কাছে সন্তোষপ্রকাশই করেছেন। কিন্তু তার পরেও দ্বিধা কাটছে না।’’ জঙ্গলমহলের এক জেলাশাসকের কথায়, ‘‘কমিশনের টিম কী দেখল সেটা বড় কথা নয়, কী রিপোর্ট দেবেন সেটাই আসল।’’
এ দিনই বর্ধমানের ফুটিসাঁকো মোড়ে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিকও ছিলেন। পরে প্রশাসনের কর্তা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ এলেই ফুটিসাঁকোর প্রসঙ্গ আবার উঠবে। তখন যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সে জন্যই প্রস্তুতি নেওয়া হল।’’
ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় মৃত্যু। জলের ট্যাঙ্কারের পিছনে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হল এক শিশু ও বাস চালকের। জখম হয়েছেন ৩০ জন যাত্রী। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বাগনানের চন্দ্রপুর গ্রামের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে। আহতদের বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ২০ জনকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। উলুবেড়িয়া হাসপাতালেই মারা যান বাসের চালক প্রদীপ মণ্ডল (৫০) ও ৬ মাসের শিশু রণিত জানা। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাদামতলা-দিঘা রুটের বাসটি সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বেলঘরিয়া থেকে থেকে ছেড়ে দিঘা যাচ্ছিল। আহত যাত্রীরা জানান, বাসটির বেশ গতিতে চলছিল। দামোদর সেতু পার হয়ে চন্দ্রপুরের কাছে এসে বাসটি জলের ট্যাঙ্কারের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy