Advertisement
E-Paper

বিপক্ষের হাতে মার খেয়েও যুঝছেন অরূপ

শেষ বিকেলের মরা আলোয় মিছিলটা গাঁয়ে ঢুকতেই স্কুল লাগোয়া টিনের চালের বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এলেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘হা বাপ, তুমিই অরূপ?

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৯
প্রচারে অরূপ বাগ। নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে অরূপ বাগ। নিজস্ব চিত্র।

শেষ বিকেলের মরা আলোয় মিছিলটা গাঁয়ে ঢুকতেই স্কুল লাগোয়া টিনের চালের বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এলেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘হা বাপ, তুমিই অরূপ? সে দিন টিভিতে দেখলাম, তৃণমূলের লোকেরা নাকি মেরে তোমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। কী করেছিল বাপ? তোমার উপর ওদের এত রাগ কেন?’’ হাজিপুরের সেই বৃদ্ধা অবশ্য উল্টো দিকের মানুষটার উত্তরের অপেক্ষা করলেন না। তাঁর ঘেমো মাথায় কিছু ক্ষণের জন্য হাত রাখলেন। কঠিন গলায় বৃদ্ধা বলে উঠলেন, ‘‘মানুষ হয়ে মানুষকে কেউ এমন ভাবে মারে! বাপ, কে কী করবে জানি না। আমার ভোটটা তোমাকেই দেব।’’

কিছু বলার আগেই বৃদ্ধার কাছ থেকে এ ভাবে প্রতিশ্রতি মিলতেই কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন অরূপ বাগ। পায়ে হাত দিয়ে বৃদ্ধকে প্রণাম করে কোনও রকমে নিজেকে সামলালেন ময়ূরেশ্বরের এ বারের সিপিএম প্রার্থী। আবেগ আপ্লুত গলায় খালি বললেন, ‘‘মা, ভোট দিন বা না দিন, আপনার কাছে যে ভালবাসা পেলাম তা আমার বাকি জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে!’’ তার পর একে একে বিশিয়া, ঘোষগ্রাম, বড়তুড়িগ্রাম, সনকপুর— যেখানেই গিয়েছেন প্রায় একই কথা শুনেছেন মানুষের মুখে। কোথাও তাঁকে মাথার চুল সরিয়ে দেখাতে হয়েছে সেলাইয়ের দাগ। কোথাও দিতে হয়েছে সে দিনের ঘটনার বর্ণনা। দিনের শেষে সহানুভূতি আর সহমর্মিতায় ভরে উঠেছে ঝুলি। আর সেই ঝুলির সঞ্চয়ই ভোট বৈতরণী পেরোতে অরূপ বাগের পাড়ানির কড়ি হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। যদিও শুধু ‘সহানুভূতি’ দিয়ে বামেরা নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে পারবে না বলেই দাবি করছেন তৃণমূল নেতারা।

ঘটনা হল, পরিবর্তনের পরে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ‘মার খাওয়া সিপিএম’ বলতে যা বোঝায়— এই জেলায় অরূপবাবু তাঁদেরই অন্যতম মুখ। সে কলেজ ভোটে তৃণমূলের হাতে মার খাওয়া হোক, কিংবা সাম্প্রতিক ষাটপলশার জাঠায় আক্রান্ত হওয়া। আর অরূপবাবুর এই ‘পরিচয়’ই এ বার প্রার্থী হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ বলে মানছেন জেলা সিপিএমের নেতারাই। অথচ তাঁর আগে ময়ূরেশ্বরে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তাঁর নাম তেমন ভাবে বিবেচনায় আসেনি। কিন্তু, জাঠায় আক্রান্ত হওয়ার পরেই তাতে অদৃশ্য সিলমোহর পড়ে যায়।

দলীয় সূত্রের খবর, ময়ূরেশ্বরে ভেলিয়ান গ্রামে নিম্নবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে অরূপবাবুর। যৎসামান্য জমির আয়েই সংসার চলে। ১৯৮০ সালে সিপিএমের সদস্যপদ লাভ করেন অরূপবাবু। ১৯৮৯ সালে স্থানীয় কানাচি লোকাল সম্পাদক হন। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন ময়ূরেশ্বরের জোনাল সম্পাদক। পাশাপাশি ১৯৮৮ সালে কানাচি পঞ্চায়েতের প্রধান, ১৯৯৩ সাল থেকে দু’বারের জন্য ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং পরবর্তী কালে দু’বারের জন্য জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রায় তিন দশকেরও বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। গোটা এলাকাকে হাতের তালুর মতো চেনেন। দলের তরুণ প্রজন্মের মুখ সেই অরূপবাবুর উপরেই এ বার ভরসা রেখেছে দল।

যদিও লোকসভা ভোটের নিরিখে ময়ূরেশ্বরে মানেরা ঢের পিছিয়ে আছে। জোট-সঙ্গী কংগ্রেসের ভোটও ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য নয়। তার উপরে বরাবরের ঘাঁটি বলে পরিচিত ময়ূরেশ্বরে এ বার বিজেপি প্রার্থী করেছে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে কী বলে জেতার কথা ভাবছেন? সিপিএম প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘আমি জেতার কথা ভাবছি না, লড়ার কথা ভাবছি। এ লড়াই তৃণমূলের নৈরাজ্য আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই।’’ সেই লড়াইয়ে কে কবে এগিয়ে-পিছিয়ে রয়েছে, তা আজ গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেই তাঁর দাবি। আর তারকা প্রার্থী নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানকার মানুষ এমন কাউকে চান, যিনি সারা বছর মানুষের দুঃখে-কষ্টে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেন।’’

ভোটের লড়াইয়ে ময়ূরেশ্বর কি তাঁর পাশে দাঁড়াবে? উত্তর মিলবে সেই ১৯ মে।

assembly election 2016 Left
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy