প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা ঠিক নয় বলে দাবি তৃণমূলের। শনিবার খড়্গপুরের জনসভায় মোদী তৃণমূলের ১০ বছরের শাসন এবং ইস্তাহারের ১০ অঙ্গীকার নিয়ে কটাক্ষ করেন। এর জবাবে মোদীকে ‘ট্যুরিস্ট গ্যাং’-এর প্রধান আখ্যা দিয়ে পাল্টা ১০টি বিষয় সামনে আনলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। ১০টি ‘ফ্যাক্ট চেক’ করার আহ্বান জানান সত্যান্বেষী ডেরেক। সেই সঙ্গে তিনি নেট মাধ্যমে দাবি করেন, ‘ইনি নোটবন্দির বিপর্যয় ঠিক করার জন্য ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন। দেখুন ১০টি সত্য। যা অভ্যাসগত মিথ্যাবাদীর মুখোশ খুলে দেবে’। প্রসঙ্গত, শনিবার মোদী বলেছেন, ‘‘বাংলায় উন্নয়নের পথে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দিদি। আপনারা বিশ্বাস করেছিলেন দিদিকে। কিন্তু উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনাদের স্বপ্ন চুরচুর করে দিয়েছেন। ১০ বছরে বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আজ ১০ অঙ্গীকারের কথা বলছেন দিদি। বাংলার মানুষ আপনাকে ১০ বছর সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি লুঠতরাজের সরকার চালিয়ে গিয়েছেন। ১০ বছরে শুধু দুর্নীতি দিয়েছেন। কুশাসন দিয়েছেন।’’
এরই জবাবে ডেরেক ১০টি প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ শানিয়েছেন। বাংলার উন্নয়নকে তৃণমূল আটকে দিয়েছে, এমন আক্রমণের জবাবের তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে ডেরেক দাবি করেছেন, উন্নয়ন খাতে ২০১১ সালে বরাদ্দ ছিল ৮৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২০ সালে সেই বরাদ্দ পৌঁছে গিয়েছে ২.৫৫ লক্ষ কোটি টাকায়। ১০ বছরের তৃণমূল শুধুই দুর্নীতি করেছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগের জবাবে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা জানিয়েন, ‘এনসিআরবি ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় দুর্নীতির পরিমাণ ০.২ শতাংশ এবং ওই একই সময়ে গুজরাতে সেই পরিমাণ ৬ শতাংশ’। মোদীর তৃতীয় অভিযোগ ছিল, তৃণমূল আদিবাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। উত্তরপ্রদেশের পরিসংখ্যান টেনে ডেরেকের জবাব, ‘যোগীরাজ্যে তফসিলিদের উপরে সংগঠিত অপরাধের পরিমাণ ২৫.৫ শতাংশ। আর বাংলায় সেটা ০.৩ শতাংশ। আদিবাসীদের সুরক্ষায় ‘জয় জোহার’ ও ‘তফসিলি বন্ধু’ প্রকল্পে ১ হাজার টাকা করে পান’। চতুর্থ অভিযোগে মোদী বলেছেন, ‘‘তৃণমূল বাংলার যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে।’’ উত্তরে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্রের দাবি, দেশে বছরে ১ কোটি যুবককে কাজের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ মোদী সরকার। ৪৫ বছরে বেকারত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অতিমারির সময় ৪০ শতাংশ বেকার বেড়েছে দেশে। অন্য দিকে, ২০১০-১১ সালে ৯০ হাজার তথ্য প্রযুক্তি পেশাদার কর্মী ছিলেন। এখন যার পরিমাণ ২.১০ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। পঞ্চম অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছে।’’ জবাবে ডেরেক জানিয়েছেন, জাতীয় নীতি নিয়ে তাঁদের বিরোধিতার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। জাতীয় শিক্ষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে।