Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ভবানীপুর সরগরম, সনিয়ার কথায় দিদির বিরুদ্ধে বৌদি

নারদ-ভিডিওর সংসদীয় তদন্তে মোদী-মমতা আঁতাঁতের জল্পনায় যখন ম ম করছে রাজনীতির অলিন্দ, ঠিক সেই সময়েই বাম-কংগ্রেস জোটের ব্যাপারে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সনিয়া গাঁধী। বৃহস্পতিবার দুপুরে দীপা দাশমুন্সিকে ডেকে পাঠিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী নির্দেশ দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে হবে তাঁকে।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

নারদ-ভিডিওর সংসদীয় তদন্তে মোদী-মমতা আঁতাঁতের জল্পনায় যখন ম ম করছে রাজনীতির অলিন্দ, ঠিক সেই সময়েই বাম-কংগ্রেস জোটের ব্যাপারে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সনিয়া গাঁধী। বৃহস্পতিবার দুপুরে দীপা দাশমুন্সিকে ডেকে পাঠিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী নির্দেশ দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে হবে তাঁকে। সনিয়ার কথায় দীপা এক বাক্যে সায় দিয়েছেন বলেই কংগ্রেস সূত্রের খবর। আর এই খবরে উজ্জীবিত বাম শিবির বলছে, লড়াইটা এ বার জমে গেল!

ভবানীপুরে দীপাকে প্রার্থী করার ব্যাপারে গত ক’দিন ধরেই জোরালো দাবি উঠেছিল প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। গোড়ায় প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, আব্দুল মান্নানের মতো নেতারা বিষয়টি দীপাকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করেছিলেন। পরে তাঁকে প্রস্তাব দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবার দশ জনপথে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অধীর খোলাখুলি বলেন, মমতার বিরুদ্ধে দীপা প্রার্থী হলে ‘রাজকীয় লড়াই’ হবে। ভবানীপুরে মমতাকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলে দিলে তার প্রভাব পড়বে গোটা রাজ্যে। তাতে জোটের পক্ষে বাতাবরণও শক্তিশালী হবে। সনিয়া তখনই অধীরকে বলেছিলেন, তিনি দীপার সঙ্গে কথা বলবেন।

সনিয়ার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে দীপা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভানেত্রী আমাকে ডেকেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে যা বলার, হাইকম্যান্ড বলবে। তা ছাড়া, আর কয়েক ঘণ্টার তো মামলা। তার পরই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়ে যাবে।’’ কিন্তু কংগ্রেসের ঐতিহ্য মেনে বৈঠকের আলোচ্য গোপন থাকেনি। সূত্রের খবর, দীপা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সনিয়াকে বলেছেন, বিরোধী জোট হওয়ায় মমতা এমনিতেই উদ্বেগে। আর এখন নারদ-হুলে ছটফট করছে তৃণমূল!

দীপাকে ভবানীপুরে প্রার্থী করার ব্যাপারে সনিয়ার হস্তক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। কারণ, বাম-কংগ্রেস জোটের ব্যাপারে রাহুল গাঁধী সক্রিয় হলেও কংগ্রেস সভানেত্রী মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এমন দাবিও করা হচ্ছিল যে, জোট নিয়ে সনিয়া আদৌ উৎসাহী নন। তিনি মমতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই আগ্রহী। তার পিছনে ব্যক্তিগত কারণ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন, বাংলায় যে জোট হচ্ছে সেটা সনিয়া জানেনই না। কংগ্রেস শিবির এর পাল্টা বলছিল, সভানেত্রীকে অন্ধকারে রেখে দল যে কোনও জোটে যেতে পারে না, এটা বোঝা উচিত। তবে অস্বস্তি একটা ছিল। দিদির বিরুদ্ধে বৌদিকে প্রার্থী করে সেটা মুছে দিলেন সনিয়া।

বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সখ্যের প্রতিফলন গত কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল রাজ্যসভায়। নারদ ভিডিওর তদন্ত লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে পাঠানোর পরে সেই সখ্য নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, বিষয়টিকে কমিটির হিমঘরে ঢুকিয়ে কার্যত তৃণমূলের সুবিধা করে দেওয়া হল। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তো স্পষ্টই বলেছেন, বিজেপি-তৃণমূল ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের অনেকের মতে, মমতা বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়াতেই খোলস ছাড়লেন সনিয়া।

সনিয়ার ভূমিকায় সিপিএম-ও খুশি। কারণ, ফ্রন্টের শরিক নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে প্রশ্ন তুলছিলেন, জোট নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী উচ্চবাচ্য করছেন না কেন? তাই দীপার নাম ঘোষণার আগেই দৃশ্যত খুশি মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘লড়াই এ বার হবে সেয়ানে সেয়ানে। দীপাদেবী প্রতিবাদী বলে পরিচিত। প্রিয়বাবু অসুস্থ হলেও দক্ষিণ কলকাতায় এখনও তাঁর অনেক শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন এক জন নেত্রী প্রার্থী হলে লড়াইয়ের ওজন ও মাত্রাও বেড়ে যাবে।’’

কিন্তু মমতার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ের ঝুঁকি কেন নিতে গেলেন দীপা? কংগ্রেসের এক জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘রাজনীতিতে কিছু মুহূর্ত থাকে যখন ফলাফল বিচার না-করে ঝুঁকি নেওয়াটাই উচ্চতা এনে দেয়। যেমন স্মৃতি ইরানি ঝুঁকি নিয়ে অমেঠীতে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সেই সাহস নেওয়ার ক্ষমতাই তাঁকে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। দীপা তেমনই সাহস দেখালেন।’’

রাজনীতির ময়দানে মমতা-দীপা লড়াইয়ের বৃত্তান্ত দীর্ঘ। পরে তার কেন্দ্রে চলে আসে রায়গঞ্জে এইমস গড়ার প্রসঙ্গ। কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিংহের কাছ থেকে এই প্রকল্পে সম্মতি আদায় করেছিলেন প্রিয়বাবু। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মমতা ওই প্রকল্পটি দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টায় নেমে পড়েন। তাতেই দু’জনের সংঘাত তীব্রতর হয়। রায়গঞ্জ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতনুবন্ধু লাহিড়ি এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দীপা দাশমুন্সির এই লড়াইয়ে মানসিক ভাবে পাশে থাকব আমরা। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী যদি পরাস্ত হন, সেটাই হবে রায়গঞ্জের মানুষের নৈতিক জয়।’’

তবে বিরোধী শিবিরের এই উৎসাহের ছবিতে একটি ট্র্যাজিক চরিত্রও রয়ে গেলেন। তিনি প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। ভবানীপুর থেকে গোড়ায় দলের কোনও নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ না-করায় তাঁর নাম ঘোষণা করেছিলেন অধীর। বুধবার ভবানীপুর এলাকায় প্রচারেও নেমেছিলেন ওমপ্রকাশ। দশ জনপথের বৈঠক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের সামনে আমার নাম ঘোষণা হয়েছিল। শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিটির বৈঠক। কী সিদ্ধান্ত হয় দেখি। তখন প্রতিক্রিয়া দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE