Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কেউ ব্যস্ত পোষ্য নিয়ে, কেউ শরীরচর্চায়

কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। হাতে মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা। টেনশন কমাতে কেউ ব্যস্ত বাড়ির সারমেয়কে নিয়ে। কেউ আবার শরীরের কমে যাওয়া ওজন বাড়াতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

সারমেয়দের সঙ্গে ব্যস্ত তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস।

সারমেয়দের সঙ্গে ব্যস্ত তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। হাতে মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা। টেনশন কমাতে কেউ ব্যস্ত বাড়ির সারমেয়কে নিয়ে। কেউ আবার শরীরের কমে যাওয়া ওজন বাড়াতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ও বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস গোপালনগরের বাসিন্দা। এখন তাঁর সারাদিন কাটছে প্রিয় দুই কুকুরের সঙ্গে। ২০০০ সাল থেকে বাড়িতে কুকুর পুষছেন বিশ্বজিৎবাবু। সে বার একটি জার্মান সেফার্ড পুষেছিলেন। নাম ছিল ডেভিড। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রিয় ডেভিডের অবদানের কথা তিনি আজও ভুলতে পারেননি। বছর দশেক আগে ডেভিড মারা যায়। ডেভিড তাঁকে সবসময় রক্ষা করত বলে জানান তৃণমূল প্রার্থী। এখন বাড়িতে আছে একটি সেন বার্নড ও একটি গ্রেড ডেন। তাদের নাম জনি ও ডায়মণ্ড। বিশ্বজিৎবাবু বাড়িতে থাকলে জনি ও ডায়মণ্ডের সঙ্গে খেলা করে বেশির ভাগ সময় কাটান। বাড়ির পাশে মাঠে নিয়ে গিয়ে তাদের নিয়ে দৌড়োনও। কিন্তু প্রায় দেড় মাস ভোটের প্রচারের জন্য তাঁর এই রুটিন বন্ধ ছিল। এখন বিশ্বজিৎবাবু ফিরে গিয়েছেন তাঁর সেই পুরনো রুটিনে। তাঁর কথায়, ‘‘চাপ কমানোর এর থেকে বেশি ভাল উপায় আর কিছু নেই।’’

এমনিতে মুখে বলছেন জয় ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করছেন না তিনি। কিন্তু টেনশন যে তাঁরও রয়েছে, তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘টেনশন জেতা নিয়ে হচ্ছে না। জয়ের ব্যবধান কত হতে পারে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’ আর চিন্তা বনগাঁ শহরের ভোটের ফল কি হতে চলছে তা ভেবে। কারণ চারিদিকে গুঞ্জন ছড়িয়েছে শহরে তাঁর নাকি ফল ভাল হবে না।

ইতিমধ্যে টেনশন কমাতে ঘুরে এসেছেন নদিয়ার মায়াপুরের ইস্কন মন্দির থেকে। সেখানে সন্ধ্যা আরতি ও ভোরের পুজো দেখে শান্তি পেয়েছেন। মাঝে মধ্যে এলাকার যুবকদের সঙ্গে ফুটবলও খেলছে। রাজনীতিতে নামবার আগে ফুটবলার হিসাবেই তাঁর এলাকায় নাম ডাক ভালই ছিল। তবে সকাল থেকে বাড়িতে লোক আসা যাওয়ার খামতি নেই। এখনও লোকের নানা সমস্যা সামলাচ্ছেন। ভোটের পর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। পথে ঘাটে যেখানেই যাচ্ছেন মানুষ ঘিরে ধরে ভোটের ফল কী হতে পারে তা জানতে চান? বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘পাঁচ বছর মানুষের সঙ্গে ছিলাম। আমি নিশ্চিত আমি জিতবই।’’

অন্য দিকে পেশায় স্কুল শিক্ষক সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত বাওয়ালি ভোটের পর থেকেই স্কুলে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ব্যাসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়ান। স্কুলে পঠন পাঠন বন্ধ থাকলেও শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুলে যাচ্ছেন। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘জেতা বা হারা নিয়ে সত্যিই আমার কোনও টেনশন নেই।’’ তিনি জানান, ভোটের প্রচারে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বার বার শুনতে হয়েছে ভোট মিটে গেলে তো প্রার্থীদের আর মুখ দেখা যায় না এলাকায়। তাই ভোট মেটার পরেও সুশান্তবাবু নিয়ম করে এলাকার প্রত্যেকটি গ্রামে যাচ্ছেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। কর্মী সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিললেও ছুটে যাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী। সম্প্রতি গোপালনগরের শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি ওই সব এলাকায় গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বনগাঁর শক্তিগড় এলাকায় তিনি থাকেন। এখন রোজই কর্মী সমর্থকেরা বাড়িতে ভিড় করছেন। প্রার্থীকে ভরসা দিচ্ছেন। কিন্তু সুশান্তবাবুরক কথায়, ‘‘ভোটের ফল যা হয় হবে। আমি এি ব্যাপারে বেশি চিন্তিত নয়।’’

প্রাণায়াম সারছেন সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত বাওয়ালি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সুশান্তবাবু মাংস ডিম খান না। নিজে বাজারে গিয়ে বাজার করেন। ভোটের প্রচারের জন্য বাজার করা বন্ধ ছিল। ওই কটা দিন বাজার করার দায়িত্ব সামলেছেন তাঁর স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা সোমা বাওয়ালি। এখন অবশ্য নিজে বাজারে গিয়ে জ্যান্ত মাছ কিনছেন। এর মধ্যেই স্থানীয় আদিত্যপুর বুড়ি মায়ের মেলাতে গিয়েছিলেন। খুব আনন্দ করেছেন। পাত পেড়ে খিচুরিও খেয়েছেন।

এমনিতে সুশান্তবাবুর ওজন ৬০ কেজি ছিল। কিন্তু ভোটের খাটাখাটনিতে তা চার কেজি কমে গিয়েছিল। এখন অবশ্য বিশ্রাম ও ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করে সাড়ে তিন কেজি ওজন ফিরে এসেছে।

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর একটি সেলুন আছে। সেখানে গিয়ে এর মধ্যেই মৃত্যুঞ্জয়বাবুর চাপাচাপিতে হেয়ার স্পা ম্যাসাজও। তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাস সকালে উঠে প্রাণায়ম করা। ভোটের সময় সকাল ৫টায় উঠেই প্রাণায়াম সারতেন। এখন অবশ্য ছ’টা নাগাদ উঠে ধীরে সুস্থে শরীর চর্চা করেন। সময় পেলে ফেসবুকও করছেন।

কিন্তু দেখতে দেখতে প্রতীক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। ফলের দিকেই চেয়ে এখন প্রার্থীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 candidates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE